বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: যেকোনও মুহূর্তে হ্যাক হয়ে যেতে পারে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনটি! লক্ষাধিক ব্যবহারকারীর তথ্য হাতাতে এবার নতুন ফাঁদ পাতছে জালিয়াতরা। তা নিয়েই সতর্ক করল কেন্দ্রীয় সংস্থা ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম। এই কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা চালিত বেশিরভাগ স্মার্টফোনের ইন্টারফেসের দুর্বলতার (Android At Risk) কারণেই হ্যাক হয়ে যেতে পারে বহু ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য। অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ভুল উল্লেখ করে সতর্কতা জারি করেছে কেন্দ্রের এই সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা। প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে কী করবেন, সেটাও জানিয়েছে তারা।
সাইবার নিরাপত্তা সংস্থার সতর্কতা
অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এমন লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্যে সতর্কতা মূলক বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ উপদেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাটি। তাদের তরফে একটি উপদেশনামা জারি করে বলা হয়েছে, গুগল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে বেশ কিছু দুর্বলতা পাওয়া গিয়েছে। সেই দুর্বলতার কারণেই ফাক ফোকর দেখে সাইবার প্রতারকরা হানা দেয় ব্যবহারকারীদের স্মার্টফোন, ট্যাবলেটে। সেই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস থেকেই যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য চুরি করে নেয় তারা।
ওই সংস্থাটির তরফে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অ্যান্ড্রয়েড 13 থেকে শুরু করে অ্যান্ড্রয়েড 14, 15 এমনকি অ্যান্ড্রয়েড 16 অপারেটিং সিস্টেমে হানা দিতে পারে সাইবার প্রতারকরা। এক কথায়, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের আওতায় থাকা বেশিরভাগ স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট যে কোনও মুহূর্তে নিজেদের আওতায় নিয়ে নিতে পারে জালিয়াতরা। কোন কোন সংস্থার ফোন হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেই তথ্যও দিয়েছে কেন্দ্রের ওই সংস্থা।
সিইআরটি ইন এর তথ্য অনুযায়ী, Samsung এর Galaxy মডেল সহ ওয়ান প্লাস, রিয়্যালমি, শাওমি, মোটোরোলা, ভিভো, ওপ্পো, এমনকি গুগল পিক্সেলের মতো দামি এবং কম দামি ফোনে বিপদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। রিপোর্ট অনুযায়ী, কোয়ালকম থেকে শুরু করে মিডিয়াটেক, ব্রডকম, ইউনিসোক, এনভিডিয়া সহ একাধিক হার্ডওয়ার এবং সফটওয়্যার কোম্পানিগুলির তৈরি পণ্যের ভেতরেই লুকিয়ে রয়েছে সমস্যা। যা ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
একাধিক তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে ব্যবহারকারীদের
কেন্দ্রের ওই সংস্থা এও জানিয়েছে, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে দুর্বলতার কারণে বিভিন্ন সংস্থার ফোনে সাইবার হানা হলে চুরি যেতে পারে ফোনের গোপন কোড। তাছাড়াও, দূর থেকেই ব্যবহারকারীর ফোন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে হ্যাকাররা। শুধু কি তাই, ফোন যদি একবার হ্যাক করে নেওয়া যায় সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক ডিটেইলস থেকে শুরু করে গোপন ফটো, কল রেকর্ড, ফোন নম্বর থেকে শুরু করে সমস্ত তথ্যই হাতিয়ে নেবে জালিয়াতরা। বলে রাখি, চলতি মাসেই অ্যান্ড্রয়েডের সিকিউরিটি বুলেটিন বেশ কয়েকটি ত্রুটি চিহ্নিত করে। মনে করা হচ্ছে ওই ত্রুটিগুলিকে কাজে লাগিয়েই সহজেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলিতে ক্ষতিকারক অ্যাপ ইন্সটল করে দিতে পারে হ্যাকাররা। সব মিলিয়ে, অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিয়ে একপ্রকার বিপদের মুখেই দেশের অসংখ্য ব্যবহারকারী।
অবশ্যই পড়ুন: হার্দিক পান্ডিয়ার বিকল্প খুঁজে পেয়ে গেল ভারত! KKR কোচের মুখে তরুণ ক্রিকেটারের নাম
কীভাবে জালিয়াতি থেকে বাঁচবেন?
প্রযুক্তি যত এগোচ্ছে তার সাথেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম। ডিজিটাল যুগে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য মোবাইল, ট্যাবলেট এমনকি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার থেকে সহজেই চুরি করে নিতে পারছে হ্যাকাররা। তাই প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে বারবার করে ফোন এবং ট্যাবলেটের নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলছেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাটির আধিকারিকরা। ওই সংস্থার দাবি, স্মার্টফোনের সাথে সাথে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে স্মার্টফোনটির অপারেটিং সিস্টেম অর্থাৎ অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমটিকে সবসময় আপডেট করে রাখা উচিত।
তাছাড়াও, ফোনে থাকা বিভিন্ন অ্যাপের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে এবং নতুন নতুন ফিচার পেতে অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করার পরামর্শ দিচ্ছে ওই সংস্থা। এছাড়াও থার্ড পার্টি অ্যাপ ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে ব্যবহারকারীদের। মূলত গুগল প্লে প্রটেকটেড অ্যাপ ব্যবহার করার পাশাপাশি ক্রোম বা অন্যান্য তৃতীয় উৎস থেকে অ্যাপ বা কোনও ফাইল ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে। সেই সাথে অজানা বা ভুয়ো লিংকে ক্লিক করা যাবে না। কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে পাওয়া এই সমস্ত সুরক্ষা গাইডলাইন মেনে চললে তবেই বিপদ এড়ানো সম্ভব।