১ লিটার তেলে চলবে ১৭৫ কিমি, দুর্ধর্ষ ইঞ্জিন বানিয়ে তাক লাগালেন ৬৩ বছরের বৃদ্ধ!

Shailendra Gour
Shailendra Gour

কৃশানু ঘোষ, কলকাতাঃ পেট্রোপণ্যের দাম দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে, ফলে আমরা বর্তমানে অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি বেশি মাইলেজের গাড়ি কিংবা ইলেকট্রিক যানবাহনের প্রতি। বর্তমানে পেট্রোলের দাম কমাতে E20 পেট্রোল ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে ভারত। কিন্তু, এবার ছেড়ে দিন মাইলেজের চিন্তা, কারণ, এবার এক লিটার পেট্রোলে ১৭৫ কিমির বেশি মাইলেজ দেবে ভারতে নির্মিত এই নতুন ইঞ্জিন! চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

কে করলেন এই অসাধ্য সাধন?

সম্প্রতি, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ শহরের বিজ্ঞানে স্নাতক শৈলেন্দ্র কুমার গৌর (Shailendra Gour) এমন একটি ইঞ্জিন তৈরি করেছেন যা যানবাহনের জগতে বিপ্লব আনতে প্রস্তুত। শুধু তাই নয়, এই প্রোটোটাইপটি ২০১৭ সালের একটি 100cc-র TVS বাইকে ব্যবহার করা হয়। বাইকটি এক জায়গায় রেখে মাত্র ৫০ মিলি লিটার পেট্রোলে একটানা ৩৫ মিনিট ধরে চলেছিল এবং এক লিটারে ১৭৬ কিমির মাইলেজ প্রদান করেছিল। এই বাইকে কোম্পানির দেওয়া ইঞ্জিনে এই বাইকটি মাত্র ১২.৪০ মিনিট চলেছে। এবং সব থেকে বড় ব্যাপার, তিনি জানিয়েছেন, একটু বেশি ফান্ড পেলে এই মাইলেজ ২০০ কিমি ছাড়াতে পারে।

নতুন এই ইঞ্জিন সম্পর্কে বিশদে ব্যখ্যা করতে গিয়ে শৈলেন্দ্র গৌর জানান যে, তাঁর ইঞ্জিনের নয়া প্রযুক্তি পুরনো ইঞ্জিনগুলির থেকে অনেকটাই আলাদা। যখন পুরনো কোনো ইঞ্জিনে প্রচুর চাপ পড়ত, তখন তার সর্বোচ্চ থ্রাস্ট হত ২৫ ডিগ্রি। কিন্তু, নতুন এই ইঞ্জিনে সর্বোচ্চ থ্রাস্ট সেট করা হয়েছে ৬০ ডিগ্রিতে, যা ইঞ্জিনের শক্তি আরও বেশি করে ব্যবহার করে। যেখানে পুরনো ইঞ্জিনগুলি মাত্র ৩০% শক্তি ব্যবহার করত, সেখানে তাঁর নয়া ইঞ্জিন ৭০% পর্যন্ত শক্তি ব্যবহার করে। তাঁর এই সিক্স স্ট্রোক ইঞ্জিন, অন্যান্য ইঞ্জিনের তুলনায় তিন গুণ বেশি কার্যকরী বলে দাবী করেছেন তিনি।

নতুন এই ইঞ্জিন ব্যবহারের ফলে শুধু যে মাইলেজ বাড়বে তা নয়, কমবে দূষণও। শৈলেন্দ্র কুমার গৌর এই বিষয়ে জানিয়েছেন যে, তার বাইকের সাইলেন্সারের তাপমাত্রা খুবই কম এবং কার্বন মনোক্সাইড (CO)-এর পরিমাণ প্রায় শূন্য, ফলে এটি দূষণমুক্ত। আরও একটি অবাক করার মতো বিষয় হল, নতুন এই ইঞ্জিনে পেট্রোল, ডিজেল, সিএনজি এবং ইথানলের মতো যেকোনো ধরণের জ্বালানি ব্যবহার করা যেতে পারে।

করেছেন প্রচুর ত্যাগ স্বীকার!

তবে এই ইঞ্জিন কোন মিরাক্কেল নয়। শৈলেন্দ্র কুমার গৌর এই গবেষণার জন্য বিশাল ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে এই আবিষ্কার করার জন্য তাঁর কাছে পর্যাপ্ত ফান্ড ছিল না, পাননি কোন রকমের কোন সাহায্য। তবে, নিজের লক্ষ্য থেকে তিনি কোনদিন সরে আসেননি। ফান্ডের প্রয়োজনে তিনি নিজের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। এবং ভাড়া বাড়ি নিয়ে সেটিকে একটি ওয়ার্কশপে পরিণত করেছেন।

আদতে কানপুর শহরের বাসিন্দা শৈলেন্দ্র ঝুনসিতে বসবাস করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (পিসিএম) ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ২০০৭ সালে গৌর টাটা মোটরসে চাকরি পান, কিন্তু চাকরি করেননি। তবে, তিনি টাটা মোটরসকে নিজের আবিস্কার সম্পর্কিত একটি প্রেজেন্টেশন জমা দেন। যার পর, টাটা মোটরসের ইউকে শাখার প্রধান তার সাথে দেখা করেন এবং তাকে একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করতে বলেন।

এরপর শুধুই নিজের লক্ষ্য সফল করার উদ্দেশ্যে লড়ে গিয়েছেন শৈলেন্দ্র বাবু। তিনি জানান যে, এই কাজের জন্য তিনি মতিলাল নেহেরু ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (MNNIT)-র অধ্যাপক অনুজ জৈনের সাথে দীর্ঘ ৬ মাস ধরে প্রতিদিন ৫-৬ ঘন্টা করে সময় দিয়ে ইঞ্জিনের খুঁটিনাটি শিখেছিলেন। এরপর তিনি আইআইটি-বিএইচইউ-র ল্যাবরেটরিতেও পড়াশোনা করেন।

এছাড়াও, তিনি নিজের একটি পুরানো প্রোটোটাইপের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যা তিনি একটি কোম্পানিকে প্রতি লিটারে ১২০ কিমির মাইলেজে চালিয়ে দেখিয়েছিলেন। কিন্তু কোম্পানির গবেষণা ও উন্নয়ন দল তা প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম যে কখনোই বিফলে যায় না। পরবর্তীতে কোম্পানির মালিকের দূরদর্শিতা ও হস্তক্ষেপের পর শৈলেন্দ্র বুঝতে পারেন যে এই প্রযুক্তি কতটা কার্যকর।

শুধুই কি বাইক চলবে?

শৈলেন্দ্র কুমার গৌড জানিয়েছেন যে তার এই প্রযুক্তি কেবল বাইকেই নয়, জলযানের মতো বৃহত্তম ইঞ্জিন থেকে শুরু করে বাস, ট্রাক এমনকি মোটরসাইকেলের মতো ছোট ইঞ্জিনেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন যে তার নামে দুটি পেটেন্ট রয়েছে। একটি পেটেন্ট ইঞ্জিনের ডিজাইনের জন্য এবং অন্যটি প্রক্রিয়াকরণের জন্য। এবং তিনি আরও কিছু পেটেন্ট দাখিল করার চিন্তা-ভাবনা করেছেন।

তবে, তিনি এতেই খুশি নন। নিজের হতাশা প্রকাশ করে তিনি জানিয়েছেন যে, “তিনি নিজের কর্তব্য করেছেন, নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবং এখন পুরোটাই দেশের উপর নির্ভর করে যে তারা এটি কীভাবে ব্যবহার করবে।

Leave a Comment