প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সিদ্ধান্তে শেষমেশ অটল থাকল রাজ্য সরকার! নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হওয়ার আগেই জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠালেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। তবে এখনই আধিকারিকদের সাসপেন্ডের পথে হাঁটছে না রাজ্য সরকার। আপাতত ওই পাঁচ জনের মধ্যে দু’জনকে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। যার ফলে আরও তীব্র হল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত।
নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরানো হল ২ জনকে
আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল অর্থাৎ সোমবার, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে চার আধিকারিকের সাসপেন্ড বিতর্ক নিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। যেখানে তিনি জানিয়েছেন যে, “ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে চার সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” এদিকে নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল যে, চার আধিকারিককে সাসপেন্ড করে তাঁদের বিরুদ্ধে FIR রুজু করতে হবে। তবে রাজ্য সরকার আপাতত দুই আধিকারিককে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিন্তু বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে এখনই কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
কী সাফাই দিল মুখ্যসচিব?
নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়মের জেরে যে পাঁচজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে আপাতত তাঁদের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের ‘সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক’ অর্থাৎ AERO সুদীপ্ত দাস এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ডেটা এন্ট্রি অপারেটর’ সুরজিৎ হালদারকে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এবং এই নিয়ে মুখ্যসচিব চিঠিতে লিখেছেন, সরকারি আধিকারিকদের কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়। তার উপর নির্বাচন সংক্রান্ত কাজের দায়িত্বও থাকে। তাই এই অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই অধস্তনদের উপর কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়। এমন ক্ষেত্রে বিস্তারিত অনুসন্ধান ছাড়াই কোনও সিদ্ধান্ত নিলে, তা তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ হয়ে যেতে পারে। তাই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে, এক এইআরও এবং এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হচ্ছে বলে কমিশনকে জানিয়েছে রাজ্য।
উল্লেখ্য গত ৫ আগস্ট, জাতীয় নির্বাচন কমিশন প্রথম রাজ্যকে সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ পাঠিয়েছিল চিঠির মাধ্যমে। সেই সময় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের এক সভা থেকে কেন্দ্র এবং কমিশনকে একযোগে নিশানা করেছিলেন তিনি। স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘‘আমি কারও কোনও শাস্তি হতে দেব না।’’ এমনকি নাম না করে কমিশনকে বিজেপির বন্ডেড লেবার বলেও আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ‘আমার ছবি ডিলিট করো!’ চুঁচুড়ার বিধায়কের উপরে চোটপাট দলের মহিলা কাউন্সিলরের, প্রকাশ্যে ভিডিও
যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসানিতে দমে যায়নি জাতীয় নির্বাচন কমিশন। পরে ৮ আগস্ট দ্বিতীয় চিঠি পাঠিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নবান্নের কাছে জবাব চেয়েছিল কমিশন। আর এবার সেই নির্দেশ মেনেই রাজ্য সরকার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কমিশনকে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু নবান্নের কমিশনের নির্দেশের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়াটাকে ভালো চোখে দেখছে না বিরোধী দল বিজেপি। যদিও এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি জাতীয় নির্বাচন কমিশন।