সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে এলন মাস্কের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। হ্যাঁ, তিন বছরের অপেক্ষার জট কাটিয়ে ভারতের বাজারে পা রাখতে চলেছে স্টারলিঙ্ক (Starlink)। জানা গিয়েছে, আগামী দু’মাসের মধ্যেই দেশজুড়ে চালু হবে স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা। এমনকি শুরুতেই ব্যবহারকারীদের জন্য থাকছে এক মাসের বিনামূল্যে ইন্টারনেট পরিষেবা।
স্টারলিঙ্ক কী এবং এর বৈশিষ্ট্য কী?
জানিয়ে রাখি, স্টারলিঙ্ক হল বিশ্বের ধনকুবের এলন মাস্কের মালিকাধীন স্পেসএক্সের একটি প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে হাই-স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হবে। এখনো পর্যন্ত স্টারলিঙ্ক 6 হাজারের বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে সরাসরি পরিষেবা পৌঁছে যাচ্ছে।
তাদের লক্ষ্য একটাই—2027 সালের মধ্যে এই সংখ্যা বাড়িয়ে 42 হাজার করা। আর এই ইন্টারনেট পরিষেবা লো-আর্থ অরবিট থেকেই সরবরাহ করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ, খাতায়-কলমে পৃথিবী থেকে মাত্র 160 থেকে 2000 কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে এই স্যাটেলাইটগুলি ঘুরছে এবং এখান থেকেই ইন্টারনেট সরবরাহ হবে।
কোথায় কাজ করবে স্টারলিঙ্ক?
স্টারলিঙ্ক প্রযুক্তির সবথেকে বড় সুবিধা হল—প্রত্যন্ত গ্রাম বা দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলেও এর পরিষেবা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, যেখানে এখনো পর্যন্ত মোবাইলের টাওয়ার পর্যন্ত পৌঁছয়নি, সেখানে স্টারলিঙ্ক থাকলেই দ্রুতগতির ইন্টারনেট মিলবে। তবে হ্যাঁ, শর্ত একটাই—খোলা এবং পরিষ্কার আকাশের নীচে ডিভাইসটিকে লাগাতে হবে।
স্টারলিঙ্ক ব্যবহার করতে খরচ কীরকম পড়বে?
বলে রাখি, স্টারলিঙ্ক ব্যবহার করতে গেলে শুরুতেই একটি স্ট্যান্ডার্ড কিট কিনতে হবে। আর এর বাজার মূল্য ধরা হচ্ছে 395 মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় দাঁড়াচ্ছে প্রায় 33 হাজার টাকা। আর এই কিটে থাকবে ডিশ অ্যান্টেনা, পাওয়ার অ্যাডাপ্টর, ওয়াইফাই রাউটার, মাউন্টিং স্ট্যান্ড এবং কেবল।
এখনও পর্যন্ত যা খবর, একবার কানেকশন নেওয়ার পর প্রতি মাসে 3000 টাকা থেকে 4200 টাকার মধ্যে সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। তবে আপনার সাবস্ক্রিপশন নির্ভর করবে প্ল্যান ও স্পিডের উপর। এমনকি স্পিড হতে পারে মোটামুটি 50 mbps থেকে 250 mbps এর মধ্যে।
আরও পড়ুনঃ এক চার্জেই ১২৩ কিমি! সস্তায় ইলেকট্রিক স্কুটার লঞ্চ করল TVS
লাইসেন্স পেতেই পোহাতে হল তিন বছরের ঝক্কি
জানিয়ে রাখি, 2022 সালে ভারতে এলন মাস্কের সংস্থা স্টারলিঙ্ক পরিষেবা চালু করার জন্য আবেদন করেছিল। তবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার কারণে কেন্দ্র সরকার সে সময় ছাড়পত্র দেয়নি। আর অবশেষে 2025 সালের মার্চ মাসে এসে কেন্দ্র সরকার এয়ারটেলের সাথে চুক্তির মাধ্যমে লাইসেন্স স্টারলিঙ্ককে দেয়। যদিও পরে রিলায়েন্স জিও একই রাস্তায় হাঁটে।
তবে সবথেকে বড় ব্যাপার, বাজারে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে নতুন গ্রাহকদের বিরাট অফার দিচ্ছে স্টারলিঙ্ক। হ্যাঁ, প্রথম মাসের জন্য ইন্টারনেট একেবারে বিনামূল্যে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। এখন দেখার ভারতের বাজারে ঠিক কতটা আধিপত্য বিস্তার করতে পারে এলন মাস্কের এই সংস্থা।