৩টি সীমান্ত বাণিজ্য সহ মোট ১০ বিষয়ে সহমতি, নতুন দিগন্তে ভারত চিন সম্পর্ক

India-China Boundary Meeting wang yi India visit

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ উন্নত হচ্ছে! এবার সেই লক্ষ্যেই আরও এক বৃহৎ পদক্ষেপ নিল দুই প্রতিবেশী। জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠকে বসেন চিনের বিদেশ মন্ত্রী ওয়াং ই। সেখানেই সীমান্ত সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে দিল্লি এবং বেইজিং।

ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত 18 ও 19 আগস্ট ভারতে থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাশাপাশি ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সাথেও দেখা করেন চিনের বিদেশ মন্ত্রী ওয়াং ই। আর ঠিক সেই সময়েই সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাস, শক্তি বৃদ্ধি ও বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে উভয় পক্ষের আলোচনার পরেই মোট 10টি বিষয়ে একমত হয় ভারত ও চিন। কী সেগুলি?

দশ বিষয়ে একমত হয়েছে ভারত এবং চিন

চিনা বিদেশ মন্ত্রী ওয়াংয়ের ভারত সফরের মাঝেই দশটি বিষয়ে একমত হয়েছে এশিয়ার দুই প্রতিবেশী ভারত এবং চিন। যার মধ্যে প্রথমটি হল, উভয়পক্ষ সীমান্ত এলাকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।

এছাড়াও চিন-ভারত সম্পর্কের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শের মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক সমস্যাগুলি সমাধানের প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেওয়া হবে।

দ্বিতীয়ত, ভারত এবং চিনের বিশেষ প্রতিনিধিদের মধ্যে 24তম আলোচনায়, ঐতিহ্যবাহী সীমান্ত বাণিজ্য বাজার পুনরায় চালু করার বিষয়ে একটি নতুন চুক্তিতে পৌঁছতে একমত হয়েছে দুই দেশ।

তৃতীয়ত, উভয় দেশই সীমান্ত বিষয়ক পরামর্শ ও সমন্বয়ের জন্য কার্যকারী ব্যবস্থার কাঠামোর অধীনে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেখানে পরিস্থিতি অনুযায়ী সেইসব এলাকার সীমানা নির্ধারণের সম্ভাবনা খুঁজে বের করা হবে।

চতুর্থত, উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বর্তমান পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার এবং 2005 সালে দুপক্ষের মধ্যে থাকা সমঝোতা অনুসারে সীমান্ত বিরোধ সমাধানের জন্য একটি ন্যায্য, যুক্তিসঙ্গত ও পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য কাঠামো খুঁজে বের করার বিষয়ে একমত হয়েছে।

পঞ্চমত, চিন এবং ভারত দুই দেশই কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ প্রচারের জন্য WMCC এর অধীনে একটি কর্মীগোষ্ঠী সংগঠন গঠন করে শান্তি বজায় রাখার বিষয় সম্মত হয়েছে।

ষষ্ঠত, উভয় দেশ কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহার করতে সম্মতি জানিয়েছে।

সপ্তমত, পশ্চিম সীমান্তে চলমান স্বাভাবিক স্তরের আলোচনা ছাড়াও পূর্ব এবং মধ্য সীমান্ত এলাকায় একই ধরনের আলোচনা শুরু করা হবে। পশ্চিম অঞ্চলে শীঘ্রই নতুন দফায় আলোচনা শুরু হবে সে বিষয়ে একমত হয়েছে দুই প্রতিবেশী।

অষ্টমত, দুই দেশই তিনটি ঐতিহ্যবাহী সীমান্ত বাণিজ্য বাজার পুনরায় চালু করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

নবমত, ভারত এবং চিন আন্তসীমান্ত নদীতে সহযোগিতার বিষয় মতবিনিময় করেছে। শুধু তাই নয়, নদী গুলির জন্য বিশেষজ্ঞ স্তরের প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট নদীর জরুরি জল সংক্রান্ত তথ্য ভাগাভাগি করার বিষয় সম্মত হয়েছে দুই দেশ।

এবং দশমত, ভারত এবং চিন, দুপক্ষই 2026 সালে চিনে 25তম আলোচনা সভা বা বৈঠক আয়োজনে সম্মত হয়েছে।

অবশ্যই পড়ুন: ৯৭টি তেজস যুদ্ধ বিমান কিনছে ভারত, ৬২ হাজার কোটির অনুমোদন দিল কেন্দ্র

প্রসঙ্গত, বিশ্লেষক মহলের একটা বড় অংশের মত, গালওয়ান সংঘর্ষের পর দীর্ঘ উত্তেজনা পর্ব কাটিয়ে অবশেষে ভারত এবং চিনের সম্পর্কের ফাটল কমতে শুরু করেছে। সেই সাথে, সীমান্ত বিরোধ, তথ্য বিনিময়, তীর্থযাত্র, বাণিজ্য, বিমান যোগাযোগ সহ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ, প্রায় সব ক্ষেত্রেই একে অপরের জন্য নতুন রাস্তা খুলে দিয়েছে দুই দেশ।

Leave a Comment