বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: ছাত্র জনতার বিক্ষোভে পুড়ছে নেপাল। আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন কেপি শর্মা ওলি। শোনা যাচ্ছে, বর্তমানে তিনি নেপালি সেনাবাহিনীর শিবপুরি ব্যারাকে রয়েছেন। এদিকে উত্তেজনার আঁচ যাতে এদেশে না আসে সেজন্য ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভারত-নেপাল সীমান্তগুলি। সীমারেখায় কড়া হয়েছে প্রহরী।
এরই মাঝে, উঠে আসছে নেপালের নানান অব্যবস্থার প্রসঙ্গ। একাধিক রিপোর্ট বলছে, 3 কোটির জনসংখ্যার দেশে মাত্র একটি যাত্রীবাহী ট্রেনই (Nepal Passenger Train) চলতো। তাহলেই বুঝুন কতটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। আজকের প্রতিবেদনের মূল আলোচ্য বিষয় পড়শি দেশের একমাত্র যাত্রীবাহী ট্রেনটি। যেটি কিনা 2 ঘন্টারও বেশি সময় নেয় মাত্র 36 কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে।
নেপালের রেলব্যবস্থা
অনেকেই হয়তো জানেন না, পড়শি দেশ নেপালে বর্তমানে মাত্র দুটি রেললাইন চালু রয়েছে। যার মধ্যে একটি দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে, অন্যটি ব্যবহার করা হয় মালবাহী ট্রেনের জন্য। বলা বাহুল্য, ভারত সরকার যেখানে বুলেট ট্রেন পরিষেবা শুরু করার তোরজোর করছে, সেই পর্বে দাঁড়িয়ে নেপালের মতো দেশে মাত্র দুটি রেললাইন, যা সত্যি ভাবা যায় না।
বলে রাখা ভাল, নেপালের একমাত্র যাত্রীবাহী রেললাইন হল জয়নগর থেকে ভাঙ্গাহা। এই রেল লাইন মূলত নেপাল-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে দেশের জয়নগর অর্থাৎ বিহারকে ছুঁয়েছে। এছাড়াও মালগাড়ির জন্য যে রেললাইনটি রয়েছে সেটি মূলত রক্সৌল থেকে সিরসিয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ভারত থেকে নেপালে পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
নেপালের একমাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন এটি
জানলে অবাক হবেন, জয়নগর থেকে কুর্থা পর্যন্ত মাত্র একটি ট্রেন চলাচল করে। এটিই গোটা নেপালের একমাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন। জানা যায়, এই ন্যারোগেজ রেল পথটি নেপালের জনকপুর এবং ভারতের জয়নগরের মধ্যে 59 কিলোমিটার দূরত্বের। জানিয়ে রাখি, ভারত যেখানে বন্দেভারতের গতিতে রেকর্ড ভেঙেছে, সেখানে নেপালের এই একমাত্র DEMU যাত্রীবাহী ট্রেনটির গতি একেবারে নগণ্য।
Zee নিউজের রিপোর্ট অনুযায়ী, নেপালের একমাত্র ট্রেনটি মাত্র 36 কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে 2 ঘন্টারও বেশি সময় নেয়। ট্রেনটির গতি নিয়ে কথা বলতে গেলে, নেপালের এই ট্রেনের স্পিড 40 এর উপরে ওঠে না। এর অর্থ, একজন ব্যক্তি এই ট্রেনটিতে চেপে 36 কিলোমিটার পথ যতটা সময় নিয়ে অতিক্রম করবেন একটি অটো তার থেকে অনেকটা কম সময় সেই নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করবে বলাই যায়।
অবশ্যই পড়ুন: মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে হাত মেলাল ভারত! বিরল খনিজ নিয়ে হতে পারে বড় চুক্তি
নেপালের এই ট্রেনের ভাড়া কত?
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সময় এবং স্পিডের নিরিখে পিছিয়ে থাকলেও নেপালের একমাত্র DEMU ট্রেনটি ভাড়ার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। জানা যায়, জয়নগর এবং কুর্থার মধ্যে চলাচলকরি ট্রেনটিতে একটি এসি কোচ রয়েছে। তাছাড়াও গোটা ট্রেনে সর্বসাকুল্যে 300 জন যাত্রী ধরে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই ট্রেনে চড়তে গেলে কোনও রিজার্ভেশনের প্রয়োজন হয় না। প্ল্যাটফর্ম থেকেই ট্রেনের টিকিট পেয়ে যাবেন যাত্রীরা। এবার আসা যাক ভাড়ার প্রসঙ্গে।
নেপালের একমাত্র ট্রেন হওয়ার সুবাদে, এর স্লিপার কোচের ভাড়া যাত্রী পিছু 56.50 টাকা। তবে যদি এসি কোচির কথা বলা হয় সেক্ষেত্রে ট্রেনটির এসি কামড়ায় যাতায়াত করতে হলে ভাড়া বাবদ 281 টাকা দিতে হয় যাত্রীদের। তবে বর্তমানে নেপাল জুড়ে প্রবল বিক্ষোভ এবং সহিংসার ঘটনায় এই ট্রেনের পরিষেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে।