সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: পাকিস্তান আর বিভক্ত, এই শব্দদুটি একসঙ্গে উচ্চারিত হলেই যেন সেই ১৯৭১ সালের দুঃস্বপ্ন ফিরে আসে। হ্যাঁ, যখন দেশটি ভেঙে পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশ। তবে আবারও পাকিস্তান নিয়ে শুরু হয়েছে বিভাজনের (Pakistan Division) আলোচনা। কিন্তু এবার ভিন্নরকম। এবার দেশের প্রদেশভিত্তিক পুনর্গঠন নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের যোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুল আলিম খানের মন্তব্যে বিতর্ক আরও উস্কে উঠেছে। তিনি দাবি করছেন, পাকিস্তানে এবার ছোট ছোট প্রদেশ তৈরি হবে! কারণ, এতে নাকি প্রশাসন আর পরিষেবা আরও জোরদার কার্যকর হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান বিভিক্ত হলে সমাধানের থেকে সমস্যা আরও বাড়বে!
পাকিস্তানে এবার নতুন করে প্রদেশ ভাগ
জানিয়ে রাখি, স্বাধীনতার সময় পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশ ছিল। আর তা হল পূর্ব বাংলা, পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধু, এনডব্লিউএফপি যা বর্তমানে খাইবার পাখতুনখোয়া নামে পরিচিত এবং বেলুচিস্তান। তবে ১৯৭১ সালে পূর্ব বাংলা পৃথক হয়ে বাংলাদেশ তৈরি হয়। আর বাকিগুলির মধ্যে এনডব্লিউএফপি এর নাম বদলে হয় খাইবার পাখতুনখোয়া এবং পাঞ্জাব ও বাকি দুই প্রদেশ আগের মতোই থেকে যায়।
তবে এবার মন্ত্রী আলিম খান বলছেন, সিন্ধু, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়ার মধ্যে প্রতিটি প্রদেশ থেকেই তিনটি করে নতুন প্রদেশ গড়ে তোলা যেতে পারে। তিনি দাবি করছেন, এভাবে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হবে এবং নাগরিকরা আরও উন্নতমানের পরিষেবা পাবে। এমনকি নিজের বক্তব্য সমর্থন করতে গিয়ে তিনি উদাহরণ দিয়েছেন ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশের, যেখানে বহু ছোট ছোট রাজ্য রয়েছে।
আদৌ কি বিভক্ত হবে পাকিস্তান?
তবে তাঁর এই বক্তব্য সামনে আসতেই একের পর এক বিরোধীরা সুর চড়িয়েছেন। সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহ ইতিমধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সিন্ধুকে ভাগ করার কোনওরকম পদক্ষেপ আমরা মেনে নেব না। এমনকি এটাই প্রথমবার নয়, গত কয়েক দশকে বহুবার পাকিস্তানে নতুন প্রদেশ তৈরির আলোচনা চলেছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। যদিও এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ, ফেডারেল কোয়ালিশনের একাধিক অংশ এই সিদ্ধান্তের পক্ষে।
আরও পড়ুন: ৮.৮০ কোটি টাকা দিলেই আমেরিকার নাগরিকত্ব, ‘গোল্ড কার্ড’ চালু করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
তবে বলার বিষয়, এই নতুন প্রদেশ তৈরির ধারণাকে ঘিরে প্রশ্ন তুলছেন পাকিস্তানের সাবেক আমলা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আখতার আলী শাহ। তিনি বলছেন, পাকিস্তানের সমস্যা প্রদেশের জন্য নয়। সমস্যা হল দুর্বল প্রতিষ্ঠান, দুর্বল আইন, আর স্থানীয় সরকারের অকার্যকর মনোভাব। তিনি জানিয়েছেন, অতীতে পাকিস্তানে বহুবারই প্রশাসনিক পরীক্ষা হয়েছে। আইয়ুব খানের দুই প্রদেশ ব্যবস্থা, মৌলিক গণতন্ত্র, শাসন কাঠামো। তবে কোনও কিছুই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। নতুন প্রদেশ তৈরি না করে বর্তমান প্রশাসনকে যদি শক্তিশালী করা যায় এবং আইনশৃঙ্খলা উন্নত করা যায়, তাহলেই পাকিস্তানের উন্নতি সম্ভব।