৬৪% দখল ছিল দেশের বিমান পরিষেবায়! কীভাবে রাতারাতি এহেন সংকট ইন্ডিগোর?

Indigo Crisis

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: গোটা দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ বিভ্রাটের শিকার হচ্ছে ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবা নিয়ে (Indigo Crisis)। ৬০০ এর বেশি ফ্লাইট বাতিলের পাশাপাশি কয়েকশো ফ্লাইট দেড়িতে চলছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বিমান সংস্থার। এর ফলে বিমানবন্দরগুলোতে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ লাইন এবং যাত্রীদের শিকার হতে হচ্ছে হয়রানির। এমনকি এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও বয়ে গিয়েছে ক্ষোভের বন্যা। রিপোর্ট অনুযায়ী, মুম্বাইতে ১১৮টি, বেঙ্গালুরুতে ১০০টি, হায়দ্রাবাদে ৭৫টি, পাশাপাশি অন্যান্য বড় বড় শহরগুলিতে কয়েকশো ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, ইন্ডিগো পরিষেবার দিক থেকে মাত্র ১৯.৭% এ নেমে এসেছিল। এ বিষয়ে ডিজিসিএ এবং বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের তলব করেছে। পাশাপাশি সিইও পিটার এলবার্স কর্মীদের স্পষ্টভাবেই বলেছেন যে, আমরা যাত্রীদের উপর থেকে আস্থা হারিয়েছি তা কোনওভাবেই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।

দেশের শীর্ষস্থানীয় বিমান পরিষেবায় বড়সড় বিভ্রাট

প্রসঙ্গত, ইন্ডিগো ভারতের সবথেকে বড় বিমান সংস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০০৫ সালে রাহুল ভাটিয়া এবং রাকেশ গাঙ্গওয়াল একসাথে এই সংস্থাটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সময়মতো বিমান, কম খরচ আর নির্ভরযোগ্যতার জন্যই পরিচিত ইন্ডিগোর পরিষেবা। ২০০৬ সালে প্রথম উড়ান শুরু করে কয়েক বছরের মধ্যে ইন্ডিগো ভারতের আকাশে রাজত্ব করতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইসজেট বা কিংফিশারের মতো কোম্পানিগুলিকে টেক্কা দিয়ে পিছনে ফেলে দেশের এই বিমান সংস্থা। এমনকি ২০১৯ সালের ৩০০টি এবং ২০২৩ সালে ৫০০টি বিমানের অর্ডার দিয়ে তারা এক বিরাট মাইলফলক অর্জন করে।

যে সময় কিংফিশার বিলাসবহুল বিমানের পিছনে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন ইন্ডিগো তাদের নির্ভরযোগ্যতাকেই হাতিয়ার করে তোলে। হ্যাঁ, তাদের ব্যবসায়িক মডেল ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। করোনা মহামারীর সময় যখন গোটা দেশে বিমান পরিষেবা ভেঙে পড়ে, ঠিক তখন ইন্ডিগো তাদের পরিষেবায় বিরাট পরিবর্তন আনে। হ্যাঁ, মুহূর্তের মধ্যেই কিছু বিমানকে কার্গো বিমানে রূপান্তরিত করে ফেলে যা শহরগুলির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বজায় রাখে। আর ২০২২-২৩ সালে আবারও তারা আগের জায়গায় ফিরে আসে। এমনকি এই বিমান সংস্থা এক বছরে ১০ কোটি যাত্রী পরিবহন করে ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিমান সংস্থার তকমা অর্জন করে।

আরও পড়ুন: দুর্গাপুজো, কুম্ভমেলার পর ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে নাম লেখাবে দিওয়ালি

অংশীদারিত্বে ফাটল

তবে ইন্ডিগোর প্রতিষ্ঠাতা ভাটিয়া এবং গাঙ্গওয়ালের মধ্যে অংশীদারিত্ব নিয়ে ফাটল দেখা যায়। তাঁদের মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসতেই গাঙ্গওয়াল ২০২৫ সালের মধ্যেই তাঁর অংশীদারিত্ব বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এই ভাঙন সত্ত্বেও ইন্ডিগোর পরিষেবার দিক থেকে আরও এগোতে থাকে। এমনকি দেশীয় বাজারের প্রায় ৬৪% নিয়ন্ত্রণ দখল করে নেয়। তবে বর্তমান সময়ে এই সংকট রাতারাতি তাদের পরিষেবাকে কয়েকধাপ নামিয়ে আনল। নতুন ডিউটির টাইম, এবং পাইলট ও ক্রু সদস্যের সংকটের জেরে এখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বিমান সংস্থা। এখন দেখার কবে তারা আবারও পরিষেবার দিক থেকে আগের জায়গায় ফিরে আসে।

Leave a Comment