প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: চরম সিদ্ধান্ত নিল ১০ টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন। অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য রোধ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলির বিলগ্নীকরণ বন্ধ ইত্যাদি দাবি সহ মোট ১৭ দফা দাবিতে আগামী ৯ জুলাই সারা দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিল ইউনিয়ন। জন্য গিয়েছে সেই ধর্মঘটে শামিল হতে চলেছেন রেল কর্মচারীরাও। এদিকে কর্মব্যস্ততার মাঝে এইরূপ ধর্মঘটের জেরে মাথায় হাত সাধারণের।
শ্রম কোডের বিরুদ্ধে ধর্মঘটের ডাক
বেশ কয়েকদিন ধরে কেন্দ্রের একাধিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাহাড় জমছিল শ্রমিকদের মধ্যে। এবার সেই ক্ষোভের পরিণতি রূপ নিল বিশালাকার ধর্মঘটে। কিছুদিন আগেই কেন্দ্র বেশ কিছু ক্ষেত্রে পুরনো ২৯টি শ্রম আইন বাতিল করে চারটি ভাগে নতুন শ্রম কোড চালুর কথা আগেই জানিয়েছিল। আর তাতেই রেগে কাই কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলি।
তাঁদের ধারণা হয়েছিল যে নতুন ওই কোডে শিল্প-বিরোধ সংক্রান্ত আইন এবং সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত ক্ষেত্রগুলিতে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এবার সেই নিয়ে প্রতিবাদ স্বরূপ ধর্মঘটের ডাক উঠল।
গর্জে উঠেছে গোটা ইউনিয়ন
জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের এই নয়া নীতিতে পরিবহণ শিল্পে বিভিন্ন অ্যাপ-নির্ভর পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ারও আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ওই পরিষেবা ক্ষেত্রে নাকি দিনে ১২ ঘণ্টা করে সপ্তাহে চার দিন কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এমনকি অ্যাপ-ক্যাব সংক্রান্ত নির্দেশিকাতেও চালকদের বিশ্রামের সময় এবং তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থার সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়নি আর তাতেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে গোটা ইউনিয়ন।
চিঠি পাঠানো হয়েছে পরিবহণমন্ত্রীকে
ইতিমধ্যেই এই ধর্মঘট নিয়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের। এই আবহে বাম শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র ‘ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সহ-সভাপতি নওলকিশোর শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, কেন্দ্রের শ্রম কোডের প্রতিবাদ ছাড়াও পরিবহণ ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরোধিতা করে তাঁরা ওই দিনের ধর্মঘটে শামিল হচ্ছেন। তাই সকলের এই ধর্মঘটে যোগদানের আহ্বান জানানো হল।
আরও পড়ুন: আরজি কর ঘটনার এক বছরে নবান্ন অভিযানের ডাক শুভেন্দুর! থাকবে অভয়ার পরিবার
সমস্যায় যাত্রীরা
আশঙ্কা করা হচ্ছে এই ধর্মঘটের জেরে কলকাতায় হলুদ ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাব এবং বাইক-ট্যাক্সি বন্ধ থাকতে পারে। ফলে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে বহু যাত্রীকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হতে পারে। শুধু তাই নয় ব্যাহত হতে পারে ডেলিভারি ব্যবস্থা। তবে এই ধর্মঘটকে মানতে চাইনি রাজ্য সরকার। পরিবহণ দফতর সূত্রে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, যে কোনও ধর্মঘটের বিরোধী তারা। পরিষেবা সচল রাখতে সরকার সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এই ধর্মঘটে শামিল হচ্ছেন রেল কর্মীরাও। পুরনো পেনশন নীতি চালু ও জব ক্রিয়েশনের দাবিতে রেল কর্মীরা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই ধর্মঘটে শামিল হওয়ার ঘোষণা করেছেন। রেল কর্মীদের এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশজুড়ে যে রেল পরিষেবা ব্যাহত হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।