যুদ্ধ বিরতি, নোবেল, কাশ্মীর! ৬ কারণে ক্রমশ অবনতি হয়েছে মোদি-ট্রাম্প সম্পর্কের

These are the six reasons why Modi-Trump relations have deteriorated

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমেরিকার মসনদে বসেই সবার প্রথমে ভারতের সাথে সুসম্পর্কে (Modi-Trump Relations) আঘাত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর প্রথম মেয়াদে যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সম্পর্কটা মাখোমাখো ছিল, আজ কার্যত তিক্ততায় রূপান্তরিত হয়েছে।

কিন্তু যে ট্রাম্পের জন্য গুজরাতে ঘটা করে নমস্তে ট্রাম্প সফর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছিল সেখানে দাঁড়িয়ে আজ ভারতের সাথে তাঁর এমন আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক হল কেন? রইল বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

প্রথম কারণ

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে প্রধানমন্ত্রী মোদির সম্পর্কের অবনতির একটি অন্যতম কারণ ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ বন্ধে ট্রাম্পের কৃতিত্ব ফলানো। নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত 17 জুন G7 শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পথে ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রীর সাথে 35 মিনিট ফোনে কথা বলেছিলেন।

এই সময় নাকি ট্রাম্প দাবি করেন তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ আটকাতে বড় অবদান পালন করেছেন। এদিকে নয়া দিল্লির তরফে বারবার বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতিতে কোনও তৃতীয় পক্ষের অবদান নেই। কিন্তু তা সত্বেও বারবার অভিভাবকত্ব ফলিয়েছেন ট্রাম্প।

দ্বিতীয় কারণ

ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে নিজের কৃতিত্ব দেখিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, পাকিস্তান তাঁকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে। এ কথার মধ্যে দিয়ে ভারতকেও একই কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আমেরিকার শাসক। তবে তা না হওয়ায় ভারতের প্রতি বেশ খানিকটা বিরক্ত তিনি।

তৃতীয় কারণ

রিপোর্ট অনুযায়ী, গত 16 থেকে 17 জুন কানাডায় G7 শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জানা যায়, ওই সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল তাঁর। তবে তিনি তা না করেই সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ফোন পেয়েছিলেন মোদি। জানা যায়, ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রীকে আমেরিকা ঘুরে ভারতে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন নরেন্দ্র মোদি। তাতেই বেজায় চটে যান ট্রাম্প।

চতুর্থ কারণ

কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা প্রসঙ্গে মোদি বলেছিলেন, ভারত কখনই কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা গ্রহণ করবে না। বলা বাহুল্য, এর আগে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। যে তথ্য নিশ্চিত করেন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি।

পঞ্চম কারণ

ভারতের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক কিছুটা খারাপ হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে ট্রাম্পের এক বড় বক্তব্য। সম্প্রতি ভারতকে মৃত অর্থনীতির দেশ হিসেবে অভিহিত করেন ট্রাম্প। এছাড়াও ভারতীয় বাণিজ্য নীতিকে খারাপ বলে দাবি করেন আমেরিকার শাসক। এরপর থেকেই ভারতের সাথে সম্পর্ক ক্রমশ ভিন্ন খাতে বয়ে গেছে আমেরিকার।

অবশ্যই পড়ুন: টিম ইন্ডিয়ার বড় দায়িত্বে ফিরতে পারেন ধোনি, মাহিকে প্রস্তাব BCCI-র!

ষষ্ঠ কারণ

কূটনীতিকদের মতে, ভারতের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক যদি খারাপ হয়ে থাকে তার প্রধান কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের 50 শতাংশ শুল্ক আরোপ। আসলে দীর্ঘদিন ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়টিকে কাঠগড়ায় তুলে নরমে গরমে দিল্লিকে বুঝিয়েছিল ওয়াশিংটন ডিসি। তবে আমেরিকার সেই নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছিল কেন্দ্র। তাই শেষ পর্যন্ত ভারতের উপর প্রথম ধাপে 25 শতাংশ এবং পরের ধাপে আরও 25 শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে শেষ ধাক্কাটা দিয়েছেন ট্রাম্প। মনে করা হচ্ছে, এই শুল্কের কারণেই ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয়েছে।

Leave a Comment