প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ২০১৬ সালের SSC নিয়োগ কাণ্ডে দুর্নীতির জেরে গত এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজারের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছিল। রাতারাতি শীর্ষ আদালতের এত বড় সিদ্ধান্তের ফলে রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়ে চাকরিহারারা। আর তাই নিয়েই গত কয়েক মাস ধরে একের পর এক বিক্ষোভ আন্দোলন হয়েই চলেছে। এমতাবস্থায় ফের নিয়োগ সংক্রান্ত আরও এক অভিযোগ উঠল প্রশাসনের বিরুদ্ধে , আর তাই নিয়ে প্রায় ২ বছর পর কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।
ঘটনাটি কী?
টিভি ৯ বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ উঠে আসছিল যে ২০২৩ সালে কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগে EWS-এর জন্য সংরক্ষিত আসনে সঠিকভাবে নিয়োগ করা হয়নি। অর্থাৎ SSC-র মতই এই নিয়োগেও বেনিয়ম দেখা গিয়েছে। আর সেই অভিযোগ নিয়েই চলতি বছরের গত আগস্টে চাকরি প্রার্থীরা মামলা দায়ের করেছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রিন্সিপাল বেঞ্চে। কিন্তু মামলাকারী চাকরিপ্রার্থীদের এই মামলা বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় খারিজ করে দেন। এরপর জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের ডিভিশন বেঞ্চে ফের একই মামলা করা হয়। আর এবার সেই মামলায় কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
রাতের অন্ধকারে নিয়োগপত্র ১৫ জনকে!
রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার, কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি শম্পা সরকার এবং বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির মামলা। এদিন মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে EWS ক্যাটাগরির উল্লেখ না থাকলেও ১৫ জনকে ওই শ্রেণি থেকে নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২৩ সালের দুর্গা পূজার আগে নাকি রাতের অন্ধকারে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল মোট ১৫ জনকে। এমনকি সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়াতেও নিয়োগের আগে একটি তালিকা ভাইরাল হয়। আশ্চর্যকর বিষয় হল, নিয়োগের ফল ঘোষণার পর ওই ভাইরাল তালিকার নামগুলি মিলে যায়। আর তাতেই উঠে আসে এই অভিযোগ।
আরও পড়ুন: খুন না দুর্ঘটনা? দুর্গাপুরে জাতীয় সড়কের ধারে উদ্ধার বিজেপি কর্মীর দেহ!
কড়া নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের
মামলাকারীদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কর্মী নিয়োগের দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতেই কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি শম্পা সরকার এবং বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের ডিভিশন বেঞ্চ প্রশাসনকে পাশ করা ৭৪৯ জন পরীক্ষার্থীদের খাতা, রেজাল্ট সহ হলফনামা দিয়ে সব জানানোর নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয় ডিভিশন বেঞ্চের মামলাটি ফের সিঙ্গল বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে মেখলিগঞ্জে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে যে বড়সড় দুর্নীতি হয়েছে তাই নিয়ে সরব হয়েছিলেন অভিযোগকারীদের আইনজীবি শুভঙ্কর দত্ত। তিনি জানিয়েছেন, নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগের বিরুদ্ধে তাঁরা প্রথমে সিঙ্গল বেঞ্চে মামলা করলেও কোনো লাভ পায়নি, শেষে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করা হয়। আর তাতেই ডিভিশন বেঞ্চ এই দুর্নীতি নিয়ে কড়া নির্দেশ দিয়েছে। এবার দেখার পালা এই মামলার জল কতদূর গড়ায়।