প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রাস্তার এক সাইডে রাখা গার্ডরেল, তার পাশে দাঁড়িয়ে নিত্যদিনের মতই দ্রুতগতিতে ছুটে চলা গাড়িকে থামাচ্ছেন ট্রাফিক কনস্টেবল সরোজকুমার। কিন্তু এক বেপরোয়া গতি সম্পন্ন চার চাকার গাড়ি দাঁড় করাতে গিয়ে হল এক মর্মান্তিক পরিণতি। সতর্ক করা সত্ত্বেও ট্রাফিক বিধি না মেনে গাড়িটি তীব্র গতিতে কর্তব্যরত সেই ট্রাফিক কনস্টেবলকে সজোরে ধাক্কা মারে! ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির (Hooghly) শ্রীরামপুরে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও এইমুহুর্তে নিয়ে আসা হয়েছে কলকাতায়। দুর্ঘটনার গোটা ছবিটাই ধরা পড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়।
রাক্ষুসে গাড়ির গতিতে গুরুতর আহত পুলিশ!
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রীরামপুরের পিয়ারাপুরের কাছে দিল্লি রোডে প্রতিদিনের মতোই নিয়ম মাফিক নিজের জায়গায় ডিউটি করছিলেন ট্রাফিক কর্মী সরোজকুমার দাস। সেই সময় কলকাতার দিক থেকে একটি গাড়ি বর্ধমানের দিকে প্রচণ্ড গতিতে যাচ্ছিল। বেপরোয়া গতি দেখে হাত দেখিয়ে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করেন ওই ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু অভিযুক্ত গাড়িটি না থেমে সজোরে ধাক্কা মারে সরোজ কুমারকে। তবুও থামেনি গাড়ি, নিজের গতিতে বেরিয়ে যায়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে সরোজকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় তড়িঘড়ি পাঠানো হয় শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সেখান থেকে অবস্থা বেশ গুরুতর দেখে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে তাঁকে।
নাকা তল্লাশি পুলিশের
হুগলি জেলার চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট এলাকার এই ভয়ংকর দুর্ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই সিসিটিভির ওই দুর্ঘটনার ফুটেজ দেখেই গাড়িটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এই বিষয়ে চন্দননগর কমিশনারেটের ডিসিপি অর্ণব বিশ্বাস জানিয়েছেন, গুরুতর আহত অবস্থায় চন্দননগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মী সরোজ কুমার দাসকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যা বোঝা যাচ্ছে ওই চার চাকার গাড়ি ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাফিক পুলিশের কর্মীকে ধাক্কা মেরেছে। গাড়িটিকে খোঁজার চেষ্টা চলছে। শীঘ্রই এর বিরূদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: খুন-ধর্ষণ-অপহরণ মামলায় যুক্ত ৪৭% মন্ত্রী-ই! তৃণমূলের কত শতাংশ? প্রকাশ্যে রিপোর্ট
প্রসঙ্গত, দিল্লি রোড এমনিতেই বেশ ব্যস্ত রাস্তা, সারাদিনই ছোট বড় গাড়ির যাতায়াত রয়েছে রাস্তা জুড়ে। মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক কর্মী থাকলেও, তাঁদের কাজ চাপ বেশ বেশি থাকে। আর এই ব্যস্ততার মাঝে চালকেরা একদমই মানতে চায় না ট্রাফিক নিয়ম, যার দরুন বাড়তে থাকে দুর্ঘটনার সংখ্যা। ২০২৩ সালে দেশের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির পুলিশ বিভাগ মোট ৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৫৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনার খবর রেকর্ড করেছে, এর মধ্যে ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৮৯০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আর এর সঙ্গে ৪ লক্ষ ৬২ হাজার ৮২৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেই বছরে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ১৭৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় সড়কে। দিনের পর দিন এই সংখ্যা বড় আকার ধারণ করছে।