ভারতের ৭ স্ট্রাইকে শেষ হল আমেরিকার দাদাগিরি!

India
India

ট্যারিফ, ট্যারিফ আর ট্যারিফ!

যে ট্যারিফ দিয়ে আমেরিকাকে ফের বিশ্বসেরা বানাতে চেয়েছিল ট্রাম্প, এবার সেই ট্যারিফই হয়ে দাঁড়াল তার মাথাব্যাথার কারণ!

ভারত (India) চুপিসারে করে দিল পর পর এমন ৭টি স্ট্রাইক, যার ফলে এবার কয়েক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির মুখে পড়বে আমেরিকা, গুরুত্ব হারাবে মার্কিন ডলার, কমে যাবে আমেরিকার দাদাগিরি, ব্যর্থ হবে ট্রাম্পের নোবেল পাওয়ার স্বপ্ন!

ঠিক কী কী অ্যাকশন নিল ভারত, আজ জেনে নেবো এই প্রতিবেদনে।

সালটা ২০২৫। আগস্ট মাসের শুরু থেকেই অন্যান্য দেশের মতো, ভারতের ওপরেও ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রয়োগ করে আমেরিকা। এছাড়াও, রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখার জন্য  অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়। যার ফলে প্রভাবিত হয় আমেরিকায় পাঠানো প্রায় ৬৬ শতাংশ ভারতীয় উপাদান। ক্ষতির সম্মুখীন হয় প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের জুয়েলারি শিল্প। সংকটের মুখে পরে সুরাটের বিভিন্ন ব্যবসা।

একের পর এক চাপ প্রয়োগ করে ভারতকে বিধ্বস্ত করতে চেয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু হল হিতে বিপরীত। কারণ ভারত এবার এমন ৭টি পদক্ষেপ নিয়েছে যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করবে আমেরিকা।

প্রথম স্ট্রাইক – বিদেশি বাজারের বিকল্প

এতদিন ধরে ট্রাম্পের শুল্কনীতি চুপ করে দেখছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু, শুল্ক আরোপ হতেই তিনি দেখালেন, তিনিও দমে যাওয়ার পাত্র নয়। আর সেই উদ্দেশ্যে প্রথম চালে শুধু আমেরিকা নয়, ভারতের বিরোধিতা করা সমস্ত দেশকেই যেন যোগ্য জবাব দিলেন মোদী। করলেন জাপান সফর, যোগ দিলেন SCO সামিটে, যেখানে চীন ও রাশিয়ার সাথে এক নতুন সূচনার ইঙ্গিত দিলেন তিনি।

জাপান সফরকালে জাপানের সাথে অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিকে আরও মজবুত করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। যার ফলে জাপান আগামী দশ বছরে ভারতীয় বাজারে ১০ ট্রিলিয়ন ইয়েন অর্থাৎ প্রায় ৬৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ফলত আমেরিকার পরিবর্তে বিকল্প অর্থনৈতিক সঙ্গী পেয়ে গেল ভারত।

অন্যদিকে কোয়াড জোটে নিজেদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করে ভারত ও জাপান। এই জোট শুধু একটি সামরিক সহযোগিতা নয়, বরং অর্থনৈতিক কূটনৈতিক ভারসাম্য। আমেরিকার শুল্ক চাপের পর, জাপানের সঙ্গে কোয়াড সম্পর্কে উন্নতি ভারতের জন্য শুধু অর্থনৈতিক নয় নিরাপত্তা খাতেও একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

যার ফলে দুই দেশ একাধিক প্রযুক্তিগত সহায়তা, যেমন বুলেট ট্রেন, AI, চন্দ্রায়ন ৫-এর মতো প্রকল্পে একে অপরের সঙ্গ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিব্ধ হয়।

দ্বিতীয় স্ট্রাইক – মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড

কথায় আছে একে রাম রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর। জাপান আর ভারতের একাধিক উদ্যোগের পর ৩১শে আগস্ট এবার SCO সামিটে যোগ দেয় ভারত। আর সেখানে এক হয়ে আমেরিকার শুল্কনীতির বিরোধিতা করে ভারত, চীন ও রাশিয়া। এই সামিটেই দ্বিতীয় স্ট্রাইক করে ভারত।

আমেরিকার একনায়কতান্ত্রিক শুল্কনীতির বিরুদ্ধাচারণ করে সকলকে একসাথে নিয়ে একটি মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড গড়ে তোলার ডাক দেয়। মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড বলতে বোঝায় এমন এক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, যেখানে কোনও একটি দেশ নয়, একাধিক শক্তিশালী দেশ বা শক্তি একসাথে বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি নিরাপত্তার নিয়ম ঠিক করবে।

ওই সামিটেই অর্থনীতির এক নতুন সূচনার ইঙ্গিত দেয় চীন। চীন ঘোষণা করে—SCO-র অধীনে একটি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গড়া হবে, যা আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত IMF এবং World Bank বা NATO-র বাইরে বিকল্প পথ গড়ে তুলবে। সাথে একটি শক্তিশালী এনার্জি কো-অপারেশন প্ল্যাটফর্ম করা হবে, যার ফলে কোনও দেশ তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ বেশি পেলে অন্যদের সাথে ভাগ করে নেবে। এতে দামও কমবে, আর আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। এবং BeiDou স্যাটেলাইট সিস্টেমকে SCO সদস্যদের জন্য খুলে দেবে—যা Google Map-এর বিকল্প GPS হিসেবে কাজ করবে।

তৃতীয় স্ট্রাইক – আর্থিক লাভ

রাশিয়া থেকে তেল কেনার অজুহাত দেখিয়েই ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ ট্যারিফ চাপিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু, তেল কেনা বন্ধ তো দূর, রাশিয়া থেকে তেল কেনার পরিমাণ অনেকগুণ বাড়িয়েছে ভারত। আবার উল্টোদিকে রাশিয়ার তরফ থেকে প্রতি ব্যারেল তেলে ছাড় দেওয়া হচ্ছে ৩ থেকে ৫ ডলার। অর্থাৎ আমেরিকার চোখ রাঙানিকে এক প্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাশিয়ার সাথে ব্যবসা করছে ভারত। অন্যদিকে তেলে ছাড় পাওয়ায় ভারতের আর্থিক লাভই বাড়ল আমেরিকার জন্য।

চতুর্থ স্ট্রাইক – ডাক পরিষেবায় “স্থগিতাদেশ”

২০২৫ সালের ২৫৩১ আগস্ট অ্যাকশন নেয় ইন্ডিয়া পোস্ট। নতুন মার্কিন নিয়মে স্পষ্টতার ঘাটতি দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রগামী সমস্ত চিঠি, ডকুমেন্ট, গিফট–পার্সেলসহ সমস্ত ক্যাটাগরির বুকিংয়ে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়।

যার ফলে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম যেমন ইবে, অ্যামাজন বা এটসি-র মাধ্যমে ভারত থেকে অর্ডার করা গহনা, জামা-কাপড়, খেলনা, হ্যান্ডক্রাফট ইত্যাদির সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে, বেড়ে যায় খরচ। ফলত সমস্যায় পড়ে আমেরিকার অনেক ছোট ব্যবসায়ীরা, যারা ভারতীয় পণ্য বিক্রি করে মোটা টাকা আয় করত।

পঞ্চম স্ট্রাইক – দেশীয় বাজার শক্ত ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা

২০২৫ সালের ২৭–৩১ আগস্টের মধ্যে ভারতের অর্থ মন্ত্রক দেশের বাজারকে শক্ত করার জন্য বেশ কিছু বড় পদক্ষেপ নেয়। ঘোষণা করা হয়, ভারতের যেসব শিল্প, বিদেশে পণ্য বিক্রি করে তাদের বিশেষ সহায়তা দেওয়া হবে। একই সাথে, দেশের নাগরিকদের মধ্যে কেনাকাটা বাড়াতে ট্যাক্সেও কিছু ছাড় দেওয়া হবে।

অন্যদিকে আমেরিকা, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অরগ্যানাইজেশনে বারবার ভারতের কৃষি, চিকিৎসা এবং আইটি খাতের বিভিন্ন নীতি পরিবর্তনের দাবি করেছে। কিন্তু ভারত এই আলোচনায় মার্কিন অবস্থানের বিরোধিতা করে নিজের কৃষি ও স্থানীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষা করেছে।

ষষ্ঠ এবং সবচেয়ে ভয়ঙ্কর স্ট্রাইক – নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (NDB)

ট্রাম্পের ট্যারিফ ঘোষণার পরেই নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিযুক্ত করা হয় ভারতের প্রাক্তন RBI গভর্নর ডঃ রাজীব রঞ্জনকে। এই নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বা NDB হল BRICS দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যাঙ্ক, যা সরাসরি টেক্কা দেয় আমেরিকার IMF এবং World Bank-কে।

অনেকদিন ধরেই মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরতা কমাতে একটি বিকল্প কারেন্সি আনার লক্ষ্যে চেষ্টা চালাচ্ছে BRICS। কিন্তু সেই লক্ষ্যে সফল না হলেও ২০১৪ সালে নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (NDB) চালু করে BRICS, যা গত কয়েক বছর ধরে অত্যন্ত ভালো কাজ করছে। মাত্র ১০০ বিলিয়ন ডলারের মূলধন নিয়ে এই ব্যাঙ্ক শুরু করলেও, এখন এই ব্যাঙ্কের মূলধন IMF-কে না ছাড়ালেও, পরিমাণে অনেকটাই বেশি। আর সব থেকে বড় বিষয় BRICS-এর ব্যাঙ্কে আমেরিকার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। অন্যদিকে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণাধীন IMF বিভিন্ন দেশে আর্থিক সাহায্য করার পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষতিও করতো! যার সবথেকে সাম্প্রতিকতম উদাহরণ অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তানকে IMF-এর সহায়তা।

এই মুহূর্তে NDB-র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে RBI-এর প্রাক্তন গভর্নরকে নিযুক্ত করা, অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাইক বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

BRICS সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন স্ক্রিনে থাকা (I) বাটনটি। সেখানে জানতে পারবেন BRICS কীভাবে আমেরিকাকে বিধ্বস্ত করতে চাইছে!

সপ্তম স্ট্রাইক – মার্কিন পণ্য বর্জনের ডাক

ট্যারিফের বিরোধিতায় সারা দেশে মার্কিন পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন রাষ্ট্রবাদী ভারতীয়রা। ম্যাকডোনাল্ডস, কোকা কোলা থেকে আমাজন, অ্যাপলের মতো আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানির দ্রব্য বয়কটের আওয়াজ উঠেছে। পাশাপাশি আমেরিকার বোয়িং কোম্পানির সাথে ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার চুক্তি করেছিল ভারত। ট্রাম্পের শুল্কবাণের পর তাও বাতিল করা হয়েছে।

তবে, যতই স্ট্রাইক হোক, সম্পূর্ণরূপে আমেরিকার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবে না ভারত। কিন্তু ভারত খুব তাড়াতাড়ি বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত ঝুঁকি যেমন কমাতে পারবে, তেমনই বাড়াতে পারবে বিশ্বের বাজার। ভারতের সাথে আমেরিকার সম্পর্কের যে অবনতি তাতে কি ভারতের ক্ষতি হবে? আপনাদের কি মনে হয়? জানাতে ভুলবেন না কমেন্টবক্সে।

Leave a Comment