পোস্টে বেঁধে ইঞ্জিনিয়ারকে মারধর তৃণমূল নেতাদের! পাঁশকুড়ায় থমকে গেল রেলের প্রজেক্ট

Panskura

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বকেয়া না মেলায় রুদ্ররূপ ধারণ তৃণমূল নেতাদের! পাঁশকুড়ার (Panskura) রেল প্রজেক্টে সাইট ইঞ্জিনিয়ারকে চড়, ঘুসি মারার পাশাপাশি ইলেক্ট্রিক পোস্টে বেঁধে নিগ্রহের চেষ্টা! ঘটনাটিকে ঘিরে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এলাকা জুড়ে। এদিকে মারধরের পর এইমুহুর্তে আপাতত বন্ধ রেলের কাজ। জানা গিয়েছে নিগৃহীত সাইট ইঞ্জিনিয়ার নিমাই বর্মণ ওই দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে FIR দায়ের করেছেন থানায়।

ঘটনাটি কী?

২০২৪ সালের মে মাস থেকে পাঁশকুড়ায় কংসাবতী নদীর উপর ক্ষীরাই রেল ব্রিজ থেকে ক্ষীরাই স্টেশন বরাবর ঢালাই, ড্রেন ও দেওয়াল তৈরির কাজ হয়ে আসছে। আর এই কাজের জন্য প্রায় ১৮ কোটি টাকার বরাত পেয়েছিল গুয়াহাটির একটি বেসরকারি সংস্থা। আর সেই সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার হলেন সবংয়ের জগন্নাথচক গ্রামের নিমাই বর্মণ। তিনি এবছর মে মাসে ক্ষীরাইতে ওই প্রজেক্টে সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন। অন্যদিকে এই রেল প্রকল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সমীর মাইতি। তাঁর কর্মাশিয়াল মিটার থেকে ওই প্রজেক্টে বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া হয়। আর সেখান থেকেই শুরু হয় গণ্ডগোলের সূত্রপাত।

বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা!

হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাস থেকে দোকাণ্ডা বুথের তৃণমূল নেতা সমীর মাইতি বকেয়া ৪০ হাজার টাকা পাচ্ছেন না। সেই কারণে বকেয়া টাকার জন্য সমীরবাবু কয়েকবার গুজরাটের ওই ঠিকাদার সংস্থাকে জানিয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই কাজ এগোচ্ছে না। এমতাবস্থায় গত শুক্রবার, রেল প্রকল্পে শ্রমিকদের সঙ্গে ওভারটাইম কাজ নিয়ে বচসা বাঁধে নিমাইবাবুর সঙ্গে কয়েকজন শ্রমিকের। সেই সময় আচমকা ওই সাইট ইঞ্জিনিয়ারের উপর চড়াও হন সমীর মাইতি ও সুজিত ঘোড়াই। সুজিতবাবুও ওই এলাকার তৃণমূল নেতা। তাঁর অভিযোগ সুজিতবাবুর বাবা উত্তম ঘোড়াই ওই ঠিকাদার সংস্থার অধীনে কাজ করছেন। কিন্তু বেশ কিছু পারিশ্রমিক বকেয়া আছে। সেটা নিমা‌ইবাবুকে জানানো হলেও কিছু করেননি, তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে মারধর করা হয় নিমাইবাবুকে।

FIR দায়ের তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে!

গোটা ঘটনায় নিগৃহীত সাইট ইঞ্জিনিয়ার নিমাই বর্মণ বলেন, গত শুক্রবার দোকাণ্ডা গ্রামের ওই দু’জন তৃণমূল নেতা সমীর মাইতি ও সুজিত ঘোড়াই আচমকা আমাদের উপর হামলা চালায়। চড়, ঘুষি মারার পাশাপাশি বিদ্যুতের খুঁটিতে বাঁধার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি ভয়ংকর আকার নেয় এরপর অন্যান্য টেকনিক্যাল কর্মীদের সাহায্যে আমি কোনওরকমে রেহাই পাই। আমার ওপর এমন হামলার কারণে পাঁশকুড়া থানায় গিয়ে আমি FIR দায়ের করি।” উল্লেখ্য, প্রতিদিন রেলের ওই প্রজেক্টে ১৮-২০জন শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু এদিন এই ঘটনার পর থেকে ঠিকাদার সংস্থা কাজ বন্ধ রেখেছে। শ্রমিকরা ক্যাম্প ছেড়ে বাড়ি চলে গিয়েছে। টেকনিক্যাল কর্মীরাও ক্যাম্প ছেড়েছেন। গোটা ঘটনায় এলাকার পরিবেশ থমথমে।

আরও পড়ুন: আধার কার্ড হবে প্রামাণ্য নথি! SIR মামলায় নির্বাচন কমিশনকে বড় নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

ক্ষুব্ধ বিজেপি

পাঁশকুড়ার এই রেলের প্রজেক্টে সাইট ইঞ্জিনিয়ারের ওপর এমন হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা সমীর মাইতি বলেন, তিনি বিদ্যুৎ দিচ্ছেন, কিন্তু জানুয়ারি থেকে টাকা পাননি। সেই নিয়েই কথা কাটাকাটি হয়। এরপরেই মারধর করেছেন ইঞ্জিনিয়ার নিজে। অথচ, থানায় আমার নামে এফআইআর করেছেন। রবিবার আমার বাড়িতে পুলিশ এসেছিল।” এদিকে শাসকদলের দিকে আঙুল তুলে বিজেপির জেলা নেতা সিন্টু সেনাপতি অভিযোগ করেন, “তোলা না মেলায় শাসক দলের নেতারা ইঞ্জিনিয়ারকে আক্রমণ করেছেন, ফলে কেন্দ্রীয় প্রকল্প থমকে গেছে।”

Leave a Comment