৯২ বছর ধরে দাঁড়ায়নি কোনও ট্রেন! এটিই হল ভারতের সবথেকে ভূতুড়ে রেলস্টেশন

kankalgarh railway station

সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ ভারতে এমন অনেক সুন্দর ও সুখ্যাত, কুখ্যাত রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে যেখানে মানুষ কখনও না কখনও গিয়েছেন নিশ্চয়ই। তবে আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের এমন একটি রেলওয়ে স্টেশন সম্পর্কে তথ্য দেব, যেখানে বিগত ৯০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনও ট্রেন থামেনি। যেখানকার মানুষ বিকেল ৫:৩০টার পর ওই রেলওয়ে স্টেশনের আশেপাশে ভুল করেও যাওয়ার কথা ভাবেন না।

ভারতের ভূতুড়ে রেলস্টেশন কঙ্কালগড়

আজ কথা হচ্ছে কঙ্কালগড় স্টেশন (Kankalgarh Railway Station) নিয়ে যেটি কিনা রাজস্থান রাজ্যে অবস্থিত। বলা হয়, এখানে নাকি ভূতের বাস রয়েছে। এটি একটি নির্জন এবং ভূতুড়ে রেলওয়ে স্টেশন হিসাবে পরিচিত। কঙ্কালগড়ের গল্প রহস্য এবং অ্যাডভেঞ্চারে পূর্ণ, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের মধ্যে আলোচনার বিষয়। এই স্টেশনটি কেবল তার ভৌতিক ঘটনার জন্যই বিখ্যাত নয়, এর ইতিহাসও সমানভাবে আকর্ষণীয় এবং রহস্যময়। রাজস্থান রাজ্যের আরাভালি পর্বতমালার মাঝখানে অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম হল কঙ্কালগড়। এই অঞ্চলটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত।

ব্রিটিশ শাসনকালে, ভারতে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক দ্রুত সম্প্রসারিত হয়, যার ফলে অনেক নতুন রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়। কঙ্কালগড় রেলওয়ে স্টেশন ছিল এর মধ্যে একটি, যার উদ্দেশ্য ছিল আশেপাশের এলাকায় যাতায়াত সুবিধা প্রদান করা। উনিশ শতকের শেষের দিকে নির্মিত, কঙ্কালগড় রেলওয়ে স্টেশনটি তার সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্র্যাফিক হাব ছিল। স্টেশনটি কেবল যাত্রী পরিবহনের জন্যই কার্যকর ছিল না, বরং মালবাহী ট্রেন চলাচল স্থানীয় বাণিজ্য এবং কৃষিকেও উৎসাহিত করেছিল। তবে এখন সেসব অতীত।

উনিশ শতকের শেষের দিকে নির্মিত কঙ্কাল গড় রেলওয়ে স্টেশনটি তার সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্র্যাফিক হাব ছিল। স্টেশনটি কেবল যাত্রী পরিবহনের জন্যই কার্যকর ছিল না, বরং মালবাহী ট্রেন চলাচল স্থানীয় বাণিজ্য এবং কৃষিকেও উৎসাহিত করেছিল।১৯৩১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি স্বাধীনতা সংগ্রামী চন্দ্রশেখর আজাদের শহীদ হওয়ার পর, ১৩ই মার্চ বিদ্রোহী কৃষকদের ভর্তি একটি ট্রেন এলাহাবাদের দিকে যাচ্ছিল। বলা হয় যে, এই ট্রেনটি কঙ্কালগড় স্টেশনে থামানো হয়েছিল, যেখানে ব্রিটিশ সৈন্যরা নির্মমভাবে কৃষকদের হত্যা করেছিল। এই অমানবিক ঘটনায়, কিছু কৃষককে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কিছুকে খালে ফেলে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল এবং অনেককে রেললাইনের উপর শুইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পিষ্ট করা হয়েছিল। এই ভয়াবহ গণহত্যায় ১৩০০ জনেরও বেশি নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছিল।

৯২ বছর ধরে এখানে থামে না কোনও ট্রেন

এই ভয়াবহ ঘটনার পর, স্টেশনের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল মৃতদের হাড় এবং কঙ্কালের উপর, যা এর নামকরণ করেছে ‘কঙ্কালগড়’। এই স্থানের সাথে জড়িত রহস্যময় এবং ভীতিকর ঘটনার অনেক গল্প রয়েছে। মানুষ বিশ্বাস করে যে এই স্টেশনটি ভূতুড়ে, এবং সময়ে সময়ে এখানে অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে। যাত্রী এবং কর্মীরা প্রায়শই রহস্যময় কণ্ঠস্বর শুনতে এবং অদৃশ্য শক্তির প্রভাব অনুভব করার দাবি করেছেন। এই ইতিহাস এবং রহস্যময় ঘটনার কারণে, কঙ্কালগড় স্টেশন এখনও রহস্য এবং ভয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গেছে। রাতে নাকি এখানে নূপুর পায়ে কারোর চলাফেরার শব্দ অবধি শুনতে পেয়েছেন স্থানীয়রা।

লোকেরা দাবি করে যে তারা রাতে রহস্যময় শব্দ শুনেছে, যেমন চিৎকার, জোরে পদধ্বনি এবং ট্রেন আসার শব্দ, যদিও সেই সময় স্টেশনে কোনও ট্রেন ছিল না। কিছু প্রত্যক্ষদর্শী অদৃশ্য মূর্তি দেখেছেন বলেও দাবি করেছেন, যা হঠাৎ দেখা দেয় এবং তারপর রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। এরকম নানা অদ্ভুত ঘটনার কারণে এখানে কর্মরত রেল কর্মীরাও তাদের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান, যার ফলে স্টেশনটি ধীরে ধীরে জনশূন্য হয়ে পড়ে। আজও, রহস্যময় ঘটনা এবং ভয়াবহ গল্পের কারণে এই স্থানটিকে ভারতের সবচেয়ে ভূতুড়ে রেলস্টেশনগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আজকের দিনে কঙ্কালগড় রেলওয়ে স্টেশন সম্পূর্ণ বন্ধ এবং এখানে কোনও ট্রেন থামে না। গত ৯২ বছর ধরে এই স্টেশনে একটিও ট্রেন থামেনি, যার ফলে এটি একটি নির্জন এবং রহস্যময় স্থান হয়ে উঠেছে।

Leave a Comment