ভারত সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক নেপালের অন্তর্বর্তী সরকাররের প্রধানের, কে এই সুশীলা কারকি?

who is sushila karki

কৌশিক দত্ত, কলকাতাঃ নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে চলেছেন দেশের প্রাক্তন বিচারপতি সুশীলা কারকি (Sushila Karki)। Gen-G দের বিক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর ৭১ বছর বয়সী সুশীলা কারকি এখন নেপাল চালাবেন। তবে প্রশ্ন একটাই যে, জেন-জিরা মূলত তরুণ, তাহলে ৭১ বছর প্রবীণকেই কেন বেছে নেওয়া হল দেশের অন্তর্বর্তী প্রধানের জন্য। এর আগে খবর আসছিল যে, বালেন শাহ, যিনি কাঠমান্ডুর মেয়র, তিনি নেপালের আগামী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। তবে বালেন শাহর বদলেই সুশীলা কারকিকে বেছে নিয়েছেন নেপালের জনগণ।

সুশীলা কারকিকেই কেন পছন্দ নেপালের জেন-জির?

আসলে নেপালের বিদ্রোহ শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াকে নিষিদ্ধ করা নিয়েই নয়, নেপালের জেন-জিরা রাস্তায় নেমেছিলেন কেপি শর্মা ওলির আমলে চলা দুর্নীতির বিরুদ্ধেও। তাঁদের দাবি ছিল, এই দুর্নীতি ঢাকতেই নাকি ওলি সরকার দেশে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান করার সিদ্ধান্ত নেয়। যেহেতু নেপালের তরুণদের মুল উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতি বিরোধী, সেহেতু সুশীলা কারকিকে তাঁদের আগামী পধান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ বিচারপতি থাকাকালীন দুর্নীতি বিরোধী একেরপর এক কর্মকাণ্ডের জন্য সুশীলা কারকি নেপালে হামেশাই শিরোনামে থাকতেই।

বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন সুশীলা কারকি

তিনিই দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে চলেছেন, এই খবর প্রকাশ হওয়ার পর সুশীলা কারকি CNN News 18-কে দেওয়া একটা সাক্ষাৎকারে ভারত ও বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিচারণা করেন। বলে দিই, BHU থেকে ১৯৭৫ সালে সুশীলা কারকি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। তিনি জানান, ‘ভারতর নেতারা আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছেন। আমার ভারতীয় বন্ধুরা আমাকে বোনের মতো দেখেন। BHU এর শিক্ষকদের কথা আমার এখনও মনে আছে। ভারত সর্বদাই নেপালের ভালো চেয়েছে।’

নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বললেন সুশীলা কারকি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সুশীলা কারকি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ‘আমার সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর।’ সুশীলা কারকি এও জানান যে, ‘স্বল্প সময়ের জন্য আমাকে নেপালের অন্তর্বর্তী সরকার চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে জেনজি। আমি দেশের স্বার্থেই কাজ করব।’

উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার নেপালের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য একটি ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি নেপালের তরুণ প্রজন্ম অংশ নেন। আর সেখানেই ভোটাভুটিতে সুশীলা কারকিকে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়।

কে এই সুশীলা কারকি?

জানিয়ে দিই, ৭ জুন ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করা সুশীলা কারকি নেপালের প্রথম মহিলা বিচারপতি। ২০১৬ সালে নেপালের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারীর আমলে দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন সুশীলা কারকি। আর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশে চলা  দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুশীলা কারকির একের পর এক কঠোর মনোভাব তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে। উল্লেখ্য, সুশীলা কারকির নির্দেশেই নেপালের এক মন্ত্রীকে দুর্নীতি মামলায় জেলও খাটানো হয়।

সুশীলা কারকি ১৯৭৯ সালে বিটানগরে আইনি জীবনে প্রবেশ করেন একজন আইনজীবী হয়ে। এরপর ১৯৮৫ সালে মহেন্দ্র মাল্টিপল ক্যাম্পাসে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছে। ২০০৭ সালে তিনি বরিষ্ঠ আইনজীবী রূপে আত্মপ্রকাশ করেন। ২২ জানুয়ারি ২০০৯ সালে তিনি নেপালের সুপ্রিম কোর্টে অ্যাড-হক বিচারপতি এবং ২০১০ সালের ১৮ নভেম্বর তিনি সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন। এরপর ১৩ এপ্রিল ২০১৬ থেকে ১০ জুলাই ২০১৬ পর্যন্ত তিনি সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত বিচাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালে ৭ জুন পর্যন্ত সুশীলা কারকি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর এবার তিনি নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে চলেছেন।

Leave a Comment