‘ছাত্রীদের ঘুষি মারছে রাজারহাট থানার আইসি!’ ভিডিও পোস্ট করে বিস্ফোরক শুভেন্দু অধিকারী

Rajarhat

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ক্রমেই খারাপ পরিণতি হচ্ছে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার। কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উঠছে মিড ডে মিল চুরির অভিযোগ তো কোথাও আবার প্রশ্ন উঠছে পড়ুয়াদের পঠন ব্যবস্থা নিয়ে। সম্প্রতি এমনই অভিযোগ উঠল রাজারহাট (Rajarhat) বিদ্যালয়ে। নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না, শেষ হচ্ছে না সিলেবাস, পর্যাপ্ত পানীয় জল নেই দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা পোহাতে থাকায় প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু তার ফলস্বরূপ ভয়ংকর পরিণতি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ গায়ে হাত তোলে ছাত্রীদের।

ঘটনাটি কী?

জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ উঠে আসছে যে, রাজারহাট আন্নাকালী গার্লস হাই স্কুলে সঠিকভাবে এবং নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। যার ফলে শেষ হচ্ছে না সিলেবাস শুধু তাই নয়, স্কুলে ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা নেই পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা খুবই শোচনীয়। এমতাবস্থায় গত মঙ্গলবার ছাত্রীরা এই সব বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষিকার কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে শুরু হয় ভয়ানক গোলমাল। ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ায় অভিভাবকেরাও। যার ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। এদিকে গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশ গেলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় না। উল্টে, পুলিশ প্রধান শিক্ষিকাকে উদ্ধার করতে গেলে তাঁকে ধরে টানা হেঁচড়া চলতে থাকে। পরে যদিও স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে বিজেপির তরফে উঠে আসে ভয়ংকর অভিযোগ।

ভিডিও পোস্ট শুভেন্দু অধিকারীর

রাজারহাট আন্নাকালী গার্লস হাই স্কুলে ছাত্রী প্রতিবাদে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিজেপির অভিযোগ, মমতা সরকারের পুলিশ নাকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলেছে। এমনকি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও সমাজমাধ্যমে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, “রাজারহাট থানার আইসি জোনাকি বাগচি শিক্ষাঙ্গনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলছেন, ওই আধিকারিক রীতিমত ঘুষি মারছেন যা ভিডিওতে স্পষ্ট।” এছাড়াও তিনি আরও লেখেন যে, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই চোদ্দ বছরে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থাকে লাটে তুলে দিয়েছেন। রাজ্যে প্রায় সাড়ে আট হাজারের উপর সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে, যে কয়টি চালু আছে তার অবস্থা এত খারাপ যে রাজ্যের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের ও বাধ্য হয়েই প্রাইভেট স্কুলে পড়তে হচ্ছে।”

অভিযোগ অস্বীকার পুলিশের

এদিকে শুভেন্দু অধিকারীর এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে রাজারহাট থানার পুলিশ। সেখানকার এক পুলিশকর্তা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে পাল্টা প্রশ্ন উঠছে যে, একটি বালিকা বিদ্যালয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কেন পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা পুলিশ ছিল না? যদিও মঙ্গলবার রাতে যে গোলমাল হয়েছে এবং ছাত্রীদের গায়ে পুলিশ হাত দিয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে,তা নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খুলতে চাননি। প্রধান শিক্ষিকা যেমন থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি, তেমনই ছাত্রীরাও তাদের হেনস্থা করার কথা লিখিত ভাবে জানাননি। এমনকি নিউ টাউনের ডিসি মানব শ্রিংলাও জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে ঘটনাস্থলে মহিলা পুলিশ-সহ পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ হাজির হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে বলেই দাবি তাঁর।

আরও পড়ুন: ‘তৃণমূল কর্মীকে করা হয়েছে BLO!’ প্রমাণ দেখিয়ে বোমা ফাটালেন শুভেন্দু

এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীর ওপর পুলিশের এই ভূমিকা নিয়ে রাজারহাটের বিডিও গোলাম গৌসল আজম জানান, ছাত্রীরা তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছে। সেগুলি শিক্ষা দফতরে পাঠানো হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়। উল্টে ছাত্রীরা পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। অন্যদিকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে রাজারহাটের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় জানান, রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে সকলকে নিয়ে সমস্যার সমাধান হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়। বরং পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হত।

Leave a Comment