কাজ দেওয়ার নামে দাসবৃত্তি, অত্যাচার! সৌদিতে রদ হল কাফালা ব্যবস্থা, উপকৃত হবেন ২৩ লাখ ভারতীয়

Kafala Labour System Scrapped In Saudi Arabia

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: সৌদি আরবে বাতিল হয়ে গেল আধুনিক ক্রীতদাসপ্রথা কাফালা ব্যবস্থা (Kafala Labour System)। এতদিন, এই বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে সৌদি আরবে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের নানান নিয়মকানুনের বেড়াজালে বেঁধে ফেলা হতো। পরবর্তীতে, সেই সব নিয়মকানুন দেখেই বিদেশি শ্রমিকদের উপর চলত নিপীড়ন এবং অত্যাচার। তাছাড়াও রয়েছে স্বাধীনতাহীনতার অভিযোগও। অন্তত 70 বছর ধরে বিদেশি শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ এই ব্যবস্থাকে ঘিরে। তবে এবার তা রদ হয়ে যাওয়ায় উপকৃত হবেন অন্তত 23 লক্ষ ভারতীয়।

কাফালা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানুন

হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, সৌদি আরবে রদ হওয়া কাফালা ব্যবস্থা 1950 এর দশকে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে চালু করা হয়েছিল। বলে রাখি, কাফালা একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ পৃষ্ঠপোষকতা। এই ব্যবস্থার অধীনে মূলত, বিদেশ থেকে আগত শ্রমিকদের বেশকিছু শর্ত এবং নিয়মকানুনের আওতায় কাজ করতে হতো। স্থানীয় পৃষ্ঠপোষক অর্থাৎ কাফিল ঠিক করে দেন, বাইরে থেকে আসা শ্রমিকরা কোথায় থাকবেন, কোথায় কাজ করবেন এমনকি কী খাবেন সেটাও।

একটা সময় পৌঁছে এই কাফালা ব্যবস্থা হয়ে উঠেছিল বিদেশি শ্রমিকদের গলার ফাঁস। এই ব্যবস্থার অধীনে মালিক শ্রেণীর মানুষজন বিদেশ থেকে আসা দরিদ্র শ্রমিকদের উপর নির্মম অত্যাচার, নিপীড়ন এবং শোষণ চালাতে থাকে। শ্রমিকদের পাসপোর্ট আটকে রাখা, শ্রমিকদের খেতে না দেওয়া, নির্দেশ অমান্য করলে বন্ধ ঘরে আটকে রাখা, বেতন না দেওয়ার মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে এই ব্যবস্থাকে ঘিরে। অনেক ক্ষেত্রেই নিয়োগকারী ব্যক্তি পাসপোর্ট আটকে রাখায় শ্রমিকরা দেশে ফিরতে পারতেন না। এভাবে বহু শ্রমিক কেউ আত্মহত্যা কেউ নির্মম অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেছেন।

অবশ্যই পড়ুন: ‘যদি পুরুষ হও আর মায়ের দুধ পান করো…..!’ আসিম মুনিরকে প্রকাশ্যে হুমকি TTP-র

ভারতীয়রা ছাড়াও বহু দেশের শ্রমিক এই ব্যবস্থার শিকার

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে চাকরি দেওয়ার নামে দাসবৃত্তি করানোর যে ব্যবস্থা অর্থাৎ কাফালায় বহু মানুষ নিজের দেশ থেকে কাজ করতে গিয়ে পাচারের শিকার হয়েছেন। সেই তালিকায় নাম রয়েছে ভারতের কর্নাটকের জেসিন্থা মেনডনকার। শোনা যায়, কর্নাটকের ওই শ্রমিকের কাছ থেকে 4.3 লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন তাঁর কাফিল। যদিও শেষ পর্যন্ত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে 46 বছর বয়সী জেসিন্থাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এছাড়াও 2017 সালে সৌদি আরবে গিয়ে একইভাবে যৌন হেনস্থা শিকার হয়েছিলেন গুজরাটের এক মহিলাও।

একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী, দীর্ঘ সময় ধরে শ্রমিকদের উপর নির্মম অত্যাচারের অভিযোগ পেয়ে কাফালা ব্যবস্থা নিয়ে সরব হয়েছিল বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। এরপর থেকে সময় যত গড়িয়েছে ততই জোরালো হয়েছে এই আধুনিক ক্রীতদাস প্রথা রদ করার। শেষ পর্যন্ত সেটা হয়েছে। তবে সৌদি আরবে কাফালা ব্যবস্থা বাতিল হওয়ায় 23 লাখেরও বেশি ভারতীয়দের পাশাপাশি উপকৃত হবেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লাখ লাখ শ্রমিক, যারা সৌদি আরবে নানান কাজের সূত্রে গিয়ে থাকেন।

Leave a Comment