বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: 1947 সালের 26 অক্টোবর, দিনটা মনে আছে প্রায় সকলেরই। এই শুভদিনেই ভারতের সাথে যুক্ত হয় কাশ্মীর। আনুষ্ঠানিকভাবে পাক সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়ে কাশ্মীরকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন রাজা হরি সিং। পরবর্তীতে ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল তাতে অনুমোদন দেন। সেই দিনটা ছিল আজ অর্থাৎ 27 অক্টোবর। আর এইদিন থেকেই একেবারে পাকাপাকিভাবে ভারতের অংশ হয়ে যায় কাশ্মীর। এবার তা নিয়েই নতুন নাটক শুরু করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে, ভারতের এই গর্বের দিনটি কাশ্মীরের ইতিহাসের সবচেয়ে কালো দিন বলে চিহ্নিত করেছেন তিনি (Pak PM On Kashmir)।
পাক প্রধানের নতুন নাটক
1947 সালে ভারত ভাগের সময় জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তবে পরবর্তীতে পাক সেনাবাহিনীর সাথে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায় কাশ্মীর। যার মধ্যে একটি অংশ এই মুহূর্তে ভারতের দখলে এবং অন্যটি পাক অধিকৃত কাশ্মীর বা POK হিসেবে পরিচিত। না বললেই নয়, গত কয়েক বছর ধরে ভারতের সাথে জুড়তে চেয়ে বারবার পথে নেমেছেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দারা। মূলত পাকিস্তান সরকারের নানান প্ররোচনা এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন POK এর মানুষজন। কয়েক সপ্তাহ আগেও পাকিস্তান সরকারের নানান কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল POK। যার কারণে ইসলামাবাদ, করাচি সহ পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একাধিক এলাকায় জারি করা হয়েছিল বাড়তি সতর্কতা। এবার সেই দেশের প্রধানই 27 অক্টোবর নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বড় মন্তব্য করেছেন।
সোমবার নিজের X হ্যান্ডেলে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। সেখানেই 27 অক্টোবর নিয়ে প্রলাপ বকেছেন তিনি। পোস্টটির শুরুতেই আজকের দিনটিকে কাশ্মীরের ইতিহাসের সবচেয়ে কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন পশ্চিমের দেশের প্রধানমন্ত্রী। শরীফ লিখেছেন, ‘প্রতিবছর 27 অক্টোবর কাশ্মীরের ইতিহাসের সবচেয়ে কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। 78 বছর আগে এই দিনেই ভারতীয় দখলদার বাহিনী শ্রীনগরে অবতরণ করে এবং সেটিকে নিজেদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। যা মানবিকতার ইতিহাসে মর্মান্তিক অধ্যায় হিসেবে আজও জ্বলজ্বল করছে। সেই দুর্ভাগ্যজনক দিন থেকে ভারত কাশ্মীরের জনগণকে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অসংখ্য প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরও লেখেন, ‘কমপক্ষে 8 দশক ধরে ভারতের দ্বারা অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ প্রচন্ড কষ্ট এবং নিপীড়ন সহ্য করছেন। ভারতের অত্যাচার এবং নিপীড়নের মুখে আমরা তাদের অদম্য মনবল, সাহস এবং স্থিতিস্থাপকতাকে সালাম জানাই। স্বাধীনতার ন্যায্য ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার অর্জনের জন্য তারা অটল সংকল্পে অক্ষুণ্ন রয়েছে।’ এদিন নিজের পোস্টে নানাভাবে ভারতের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি এও লেখেন, ‘পাকিস্তান ধারাবাহিকভাবে ভারতের বেআইনি পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। যে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এবং জাতিসংঘের অসংখ্য প্রাসঙ্গিক প্রস্তাব লঙ্ঘন করে। আমরা জম্মু ও কাশ্মীর বিরোধের উপর আমাদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে বজায় রেখেছি। এ থেকে স্পষ্ট যে আমরা ধারাবাহিক এবং নীতিগত পথে চলি।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া পোস্টটির একেবারে শেষের দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমি কাশ্মীরি জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, তারা তাদের এই সংগ্রামে একা নন, পাকিস্তানের 24 কোটি মানুষ তাদের কাশ্মীরি ভাই বোনের পাশে আছে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাশ্মীরের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার থেকে পিছু হটব না। ইনশাআল্লাহ, সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়!’
Every year the 27th of October marks the darkest day in the history of Kashmir. It was on this day, seventy-eight years ago, that the Indian Occupation Forces landed in Srinagar and annexed it – a tragic chapter in human history that continues to this day. Ever since that fateful…
— Shehbaz Sharif (@CMShehbaz) October 27, 2025
অবশ্যই পড়ুন: শুরু হচ্ছে ১০০ দিনের কাজ, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বড় জয় রাজ্য সরকারের
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে নেতা কর্মীদের প্রতিটি যুক্তি যে তথ্যপ্রমাণহীন এবং অসত্য একবার নয়, বহুবার তার প্রমাণ পেয়েছে গোটা বিশ্ব। বহু আন্তর্জাতিক মিডিয়া যেখানে দেখায়, আদতে পাকিস্তানের অধীনে থেকে প্রতিদিন ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যেতে হচ্ছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দাদের। পাক সরকারের একাধিক অমানবিক সিদ্ধান্তের জেরে POK বাসিন্দাদের দুর্বিষহ অবস্থান নিয়ে যে তারা বারবার পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, ভারতের সাথে জুড়তে চেয়েছেন, সেই পর্বে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নাকি বলছেন, ভারত অধিকৃত কাশ্মীর নাকি ভাল নেই! বিশ্লেষক মহলের দাবি, আসলে পাকিস্তান নিজেদের ব্যর্থতাকে বারবার ভারতের উপর চাপিয়ে এসেছে। এবারেও সেই নিয়মের অন্যথা করলেন না শেহবাজ।