প্রীতি পোদ্দার, বর্ধমান: দুর্গাপুরের পর এবার বর্ধমান (Bardhaman) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল! ওয়ার্ডের ভিতরে এবার রোগীর মেয়ের শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল এক ওয়ার্ডবয়ের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার করল বর্ধমান মহিলা থানার পুলিশ। সোমবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। বিচারক ধৃতকে দু’দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই ঘটনায় আরেকবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে প্রশাসনের নিরাপত্তাব্যবস্থা ৷
ঘটনাটি কী?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার থেকে এক আদিবাসী মহিলা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালের নতুন বিল্ডিংয়ের নীচের একটা ওয়ার্ডে তাঁর চিকিৎসা চলছে। সেই কারণে ওই মহিলার বিবাহিত মেয়ে তাঁর মায়ের কাছেই রয়েছেন। আর সেখানেই ঘটে বিপত্তি। অভিযোগ, গত রবিবার বিকেল নাগাদ ওই মহিলা যখন তার মায়ের সঙ্গে মহিলা ওয়ার্ডে ছিলেন সেই সময় আচমকা ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকে পড়ে ওয়ার্ডবয় বিশ্বজিৎ দে ওরফে বাপ্পা। ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে বিশ্বজিৎ নির্যাতিতাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শ্লীলতাহানি করেন। এরপর কোনওক্রমে ওই ওয়ার্ডবয়ের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে চিৎকার করেন নির্যাতিতা। তখনই দৌড়ে পালান বিশ্বজিৎ।
অভিযোগ অস্বীকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের
ঘটনায় বর্ধমান মেডিক্যাল হাসপাতাল চত্বরে হুলুস্থুল কাণ্ড শুরু হয়। এরপর ওই নির্যাতিতা পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করে পুলিশ গ্রেপ্তার করে অভিযুক্ত ওয়ার্ডবয় বিশ্বজিৎকে। হাসপাতালের বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে ওয়ার্ডবয়কে। তাদের অভিযোগ, ওই তরুণী নাকি চিকিৎসা সংক্রান্ত অনৈতিক সুবিধা নিতে বার বার বিরক্ত করছিলেন বিশ্বজিৎকে। কিন্তু সেসব অনৈতিক সুবিধা তিনি দিতে চায়নি। সেই কারণেই মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।
দু’দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর আদালতের
জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই ওয়ার্ডবয়ের বাড়ি বর্ধমান শহরের বাবুরবাগ কালীতলা এলাকায়। টানা ২১ বছর ধরে সে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওয়ার্ড বয়ের কাজ করছে। এর আগে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ রয়েছে কিনা সেটা নিয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই গতকাল অর্থাৎ সোমবার অভিযুক্ত ওয়ার্ডবয়কে পুলিশ গ্রেফতার করে বর্ধমান আদালতে তোলে। এবং তাকে তদন্তের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত দু’দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করে। জোর কদমে চলছে তদন্তের প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন: টার্গেট দুই রাঘবোয়াল ব্যবসায়ী ভাই! সাতসকালে কলকাতায় ফের ইডির হানা
ইদানিং রাজ্যের একাধিক সরকারি হাসপাতালে শ্লীলতাহানির ঘটনার অভিযোগ সামনে উঠে আসছে। কিছুদিন আগে দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়ার ‘ধর্ষণ’-এর ঘটনার অভিযোগ ওঠে। যাকে নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে এক বড় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে বারংবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে সরকার। এদিকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে এমন শ্লীলতাহানির ঘটনায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন সাধারণেরা ৷