সহেলি মিত্র, কলকাতা: ইচ্ছা থাকলেই যে উপায় হয় সেই কথাটা প্রমাণ করে দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র উপায়ন দে (Upayan De Jadavpur)। মাত্র ২২ বছর বয়সে সে এমন এক কাজ করেছে যার পরে তাঁর বাবা মায়ের গর্বে বুক তো ফুলে উঠেছেই। সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরও গর্ব বাড়িয়েছে। এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন কী এমন করেছে উপায়ন? তাহলে জানিয়ে রাখি, এত কম বয়সে সে বেঙ্গালুরুর একটি সফটওয়্যার কোম্পানি রুব্রিকে বার্ষিক ১.৫ কোটি টাকার চাকরি পেয়েছে। অর্থাৎ মাসিক মাইনে ১২ লক্ষ টাকা।
১.৫ কোটি টাকার চাকরি পেলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া
সাম্প্রতিক সময়ে এটিই প্রথম, জেইউ-এর একজন ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকের সর্বোচ্চ প্যাকেজ। সল্টলেকের বাসিন্দা উপায়ন ৯ জুন কোম্পানিতে যোগদান করেছেন বলে খবর। সে জানায়, “আমি জানুয়ারি মাসে এই কোম্পানিতে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ করি এবং ২৭ মে তাদের কাছ থেকে চাকরির প্রস্তাব পাই।” তিনি আরও বলেন, “আমি, আমার কিছু বন্ধুদের সঙ্গে আমাদের তৃতীয় বর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে একটি আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা ফাইনালে পৌঁছেছিলাম। এরপর রুব্রিকের নিয়োগকারী দল ইন্টার্নশিপের জন্য কিছু ফাইনালিস্টের সাথে যোগাযোগ করে। আমি যার মধ্যে অন্যতম ছিলাম।”
উপায়ন দে মনে করেন যে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াটাই ছিল সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। “আমি সবসময় কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চেয়েছিলাম, কিন্তু যখন আমার জেইই অ্যাডভান্সডের ফলাফল ঘোষণা করা হয়, তখন আমি দেখতে পাই যে আমি শীর্ষ আইআইটিগুলিতে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাচ্ছি না। তাই, আমি জেইউতে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বেছে নিই। আমি আমার অধ্যাপকদের কাছে ঋণী কারণ তাদের নির্দেশনা আমাকে ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হতে সাহায্য করেছে।”
মায়ের ইচ্ছাপূরণ
তিনি বলছেন, ‘আমার বিদেশে যাওয়ার একেবারেই ইচ্ছে নেই। চাইলে আমিও ওভারসিজ় কোনও কোম্পানিতে চাকরি পেতে পারতাম। কিন্তু দেশ ছেড়ে আমি যেতে চাই না। আমার মা সব সময়ে আমাকে বুঝিয়েছেন, দেশের জন্য কিছু করতে।’
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানের পর এবার গঙ্গা জল চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশকে বড় ঝটকা দিতে চলেছে ভারত
তবে এই প্রথম নয়, অতীতেও অনেক রেকর্ড গড়েছে উপায়ন। যেমন যাদবপুরের কম্পিউটার সায়েন্সের এই ছাত্র ২০১৯ সালে আইসিএসই পরীক্ষায় দেশে তৃতীয় হয়েছিলেন। ডন বসকো পার্ক সার্কাস থেকে পড়াশোনা। বাবা মণীশ দে জিএসআই–এর কেমিস্ট্রি বিভাগের ডিরেক্টর। কর্মসূত্রে তিনি উত্তরপ্রদেশের ফরিদাবাদে থাকেন। মা রূপা দে গৃহবধূ। রূপা বলছেন, ‘আমি ছেলেকে সব সময়ে বলেছি, বড় হয়ে তুমি যা–ই হও তাতেই দেশকে কন্ট্রিবিউট করো। কারণ দেশে থেকে, দেশের মাটিতে পড়াশোনা করে, তারপর দেশকে ভুলে গেলে হবে না। ছেলে যে সেই কথাটা বুঝেছে তাতেই আমি সন্তুষ্ট।’