সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: প্রথম স্ত্রীর আপত্তি থাকলে আর কোনও মুসলিম পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না। হ্যাঁ, বড়সড় রায়ের পথে হাঁটল কেরালা হাইকোর্ট (Kerala High Court)। সম্প্রতি আদালতের তরফ থেকে এক মামলার শুনানিতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দ্বিতীয় বিবাহ কেরালা বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮ এর আওতায় আসতে পারে না। বিচারপতি পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, মুসলিম ব্যক্তিগত আইন একজন পুরুষকে একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দিলেও অধিকার সমতা বা ন্যায্য শুনানি সাংবিধানিক নীতিগুলিকে অগ্রাহ্য করে। সেজন্যই এই নতুন আইন।
কী বলা হল আদালতের তরফ থেকে?
২০০৮ এর নিয়ম অনুযায়ী, একজন পুরুষকে বিবাহ নিবন্ধন করতে হলে অবশ্যই সাংবিধানিক আদেশের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী একজন মুসলিম পুরুষ তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহিত সম্পর্ক থাকাকালীন তাকে নোটিশ না দিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করার জন্য তার প্রথম স্ত্রীকে ছাড়তে পারবে না। এমনটাই বলা হল আদালতের তরফ থেকে। আর যদি প্রথম স্ত্রী দ্বিতীয় বিবাহের নিবন্ধন অবৈধ বলে অভিযোগ করে আপত্তি জনায়, তাহলে রেজিস্ট্রারকে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
হ্যাঁ, স্পষ্ট বলা হয়েছে, যদি স্বামী প্রথম স্ত্রীকে অবহেলা করে বা প্রথম স্ত্রীর ভরণপোষণ না করে অথবা প্রথম স্ত্রীর উপর নিষ্ঠুর আচরণ করে এবং তার ব্যক্তিগত আইন ব্যবহার করে দ্বিতীয় বিবাহ করে, তাহলে প্রথম স্ত্রীকে শুনানির সুযোগ দিতে হবে। কারণ, ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে সাংবিধানিক অধিকারকে কোনওভাবেই উপেক্ষা করা যাবে না। লিঙ্গগত সমতা প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। পুরুষরা নারীর থেকে কোনওভাবেই শ্রেয় হতে পারবে না।
উল্লেখ্য, ত্রিক্কারিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বিবাহ নিবন্ধন করতে গিয়ে অস্বীকৃতিকে চ্যালেঞ্জ করেই এক মুসলিম পুরুষ এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রীর দায়ের করা একটি আবেদনের শুনানি চলছিল আদালতে। সেই ব্যক্তি স্বীকার করেছিল যে, সে আগে বিবাহিত ছিল এবং সেই সম্পর্কে তাদের দুটি সন্তানও রয়েছে। তবে তিনি পরে দাবি করেন যে, তার প্রথম স্ত্রীর সম্মতি নেওয়ার পরেই ২০১৭ সালে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন তিনি। আর দ্বিতীয় বিয়েতেও দুটি সন্তান ছিল। এমনকি তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ এর জন্য সম্পত্তিতে স্ত্রী এবং সন্তানদের দাবি নিশ্চিত করতে স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে দ্বিতীয় বিবাহের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলেন।
আরও পড়ুনঃ চোখ ধাঁধানো ফিচার্স! Tata ও মারুতি সুজুকিকে জোর টেক্কা দিয়ে লঞ্চ হল Hyundai Venue
তবে সেখানে রেজিস্ট্রার বিবাহ নিবন্ধন করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। ওই ব্যক্তি দাবি করেন যে, মুসলিম ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী একজন মুসলিম পুরুষ একসঙ্গে চারটি স্ত্রী রাখতে পারে। অতএব রেজিস্ট্রার বিবাহ নিবন্ধন করতে বাধ্য। কিন্তু আদালত বলেছে, যদিও কুরআন স্পষ্টভাবে দ্বিতীয় বিবাহের জন্য প্রথম স্ত্রীর সম্মতির প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেনি, কিন্তু বিবাহ নিবন্ধনের আগে অবশ্যই তার সম্মতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালের নিয়মের ১১ নম্বর উদ্ধৃতি দিয়েই আদালত বলেছে, রেজিস্ট্রার বিবাহের বৈধতা নির্ধারণ করতে পারবে না। কিন্তু ২০০৮ সালের নিয়ম অনুযায়ী বিবাহ নিবন্ধনের আগে প্রথম স্ত্রীর সম্মতিপত্র দেখাতে হবে।