India Hood Decode: যে কারণে তালিবানদের সাথে হাত মেলালো ভারত

India Friended With Taliban
India Friended With Taliban

পাকিস্তান বলছে, “আফগানিস্থানের মাধ্যমে প্রক্সি যুদ্ধ করছে ভারত (India)।” সত্যিই কি তাই?

কখনও ভেবে দেখেছেন, যে তালিবানদের এখনও পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি ভারত সরকার, হঠাৎ তাদের সাথেই কেন হাত মেলালো ভারত? তবে কি এবার তালিবানদের সাহায্যেই দখল করা হবে POK?

যে তালিবান নেতার আমলে করা হয়েছিল ভারতের বিমান হাইজ্যাক, আজ সেই নেতাকেই কেন জামাই আদর করছে মোদী সরকার? তবে কি এর পিছনে রয়েছে ভারতের কোনও বড় চাল?

হঠাৎ করে কেন এমন সুর বদল করল ভারত? আদেও কি ঠিক সিদ্ধান্ত নাকি ভুল? আজ India Hood ডিকোডে আমরা তুলে ধরবো এমন কিছু তথ্য যা ফাঁস করবে এই বন্ধুত্বের আসল রহস্য।

আপনাদের শুরুতেই আফগানিস্থান সম্পর্কে জানিয়ে দিই

সংক্ষেপে

শুরু থেকেই ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়ার মতো সুপারপাওয়ার দেশগুলি আফগানিস্তানকে কবজা করার চেষ্টা করে এসেছে। কিন্তু, কেউই সেই উদ্দেশ্যে সফল হয়নি। কেউ কেউ বেশ কিছুদিনের জন্য আফগানিস্থানকে দফল করলেও বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। এই ভূমিতে এখনও পর্যন্ত যারা এসেছে, তারা হয় ভয় পালিয়েছে নয়তো কবরে মিশে গিয়েছে, তাই এই দেশকে বলা হয় গ্রেভইয়ার্ড অফ এম্পায়ার! আফগানিস্থানের ইতিহাস খুবই রক্তাক্ত এবং বিস্তৃত, সেই নিয়ে আপনাদের আগ্রহ থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন, আমরা সেই নিয়ে একটি ভিডিও অবশ্যই করবো।

এখন শুধু এটুকু জেনে রাখুন, বেশিরভাগ সময় একাধিকবার আফগানিস্থানে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হলেও, ১৯৯৬ সালে মুল্লাহ উমরের নেতৃত্বে দেশে প্রথমবারের জন্য তালিবান সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু, ২০০১ সালের পর আমেরিকার নেতৃত্বে তালিবানদের হটিয়ে আফগানিস্থানে ফের গণতন্ত্র ফেরে, আর প্রতিষ্ঠা হয় Islamic Republic Of Afghanistan। কিন্তু, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে গণতন্ত্র ফেলে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে তালিবানরা। আর দেশের নাম হয় Islamic Emirates of Afghanistan। দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হন হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। এই সরকার মেয়েদের শিক্ষা, মানবাধিকার এবং সঙ্খ্যালঘুদের ন্যায্য অধিকার দেয় না। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই ভারত, আফগানিস্থানে নিজেদের দুতাবাসও বন্ধ করে দেয়। এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের ভাষণে তালিবানদের ঘোর বিরোধিতা করেন।

https://x.com/Lazycontroll_/status/1977082490235109887

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও তালিবানদের বিরোধিতা করে, তাদের সাথে ISI যোগের কথা বলেন। জানলে অবাক হবেন, এর আগে উত্তরপ্রদেশের সম্ভলের সাংসদ ডা শফিকুর রহমান বারক তালিবানদের সমর্থন করায় যোগী তার বিরোধিতা করে এবং FIR-ও করে। এখন এই সরকারই আফগানিস্থানের বিদেশমন্ত্রীকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে উত্তর প্রদেশের “দার উলুম দেওবন্দ” মাদ্রাসায় নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, ঠিক কী কারণে?

বর্তমানে রাশিয়া বাদ দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য কোনও দেশই তালিবানদের স্বীকৃতি দেয়নি। তবে, চিন ও মধ্য এশিয়ার একাধিক দেশের মতো ভারত আফগানিস্থানের সাথে টেকনিক্যাল মিশন শুরু করেছে। যখন কোনও দেশের, অন্য দেশে কোনও দুতাবাস বা উচ্চ কোনও সংস্থা না থাকে, তখন বিভিন্ন স্বার্থে টেকনিক্যাল মিশন করা হয়।

কিন্তু, এত বিরোধিতা, স্বীকৃতি না দেওয়া সত্ত্বেও ২০২৫ সালের ৯ থেকে ১৬ই অক্টোবর পর্যন্ত, ৮ দিনের ভারত সফরে আসেন আফগানিস্তানের বর্তমান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। আর এর পিছনেই রয়েছে বেশ কিছু কারণ।

এবার জেনে নেবো মুত্তাকির ভারত সফরের কিছু বিশেষ দিক –

এই সফরে এসে আফগানিস্থানের বিদেশমন্ত্রী মুত্তাকি বেশ কিছু ঘোষণা করেন। তিনি জানান, দিল্লির সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করা হবে। আফগানিস্থানের জমি ভারত বিরোধী কাজে ব্যবহার হবে না। পাশাপাশি তিনি ভারতের বিনিয়োগকারীদের আফগানিস্থানে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ অর্থাৎ রেয়ার আর্থ মাইনিং করার আমন্ত্রণও জানান। তিনি ভারতের সাথে যৌথ বিবৃতিতে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর আফগানিস্থানে পুনরায় নিজেদের দূতাবাস খোলার কথা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, হেলথ কেয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অধীনে নতুন একটি হাসপাতাল, ২০টি নতুন অ্যাম্বুলেন্স, আর ৫টি ম্যাটারনিটি ক্লিনিক খোলার কথা জানান। এছাড়াও, পাকিস্তান থেকে বের করে দেওয়া যে সমস্ত শরণার্থীরা আফগানিস্থানে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের জন্য বাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতি দেয়।

কিন্তু, ভারতে এসে এত ভালো কিছু ঘোষণার পরেও, কিছু ঘটনার কারণে এই সফর নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক।

যার মধ্যে অন্যতম হল মহিলা সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা

ভারত সফরে এসে, ১০ই অক্টোবর দিল্লির আফগান দূতাবাসে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন মুত্তাকি, যেখানে শুধুমাত্র আমন্ত্রণ জানানো হয় পুরুষ সাংবাদিকদের। এর মাঝে একজন মহিলা সাংবাদিক ঢুকে পড়লেও, তাঁকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর সেই নিয়ে সারা ভারতে শুরু হয় বিতর্ক। বিরোধী দলের পাশাপাশি বিরোধিতা শুরু করে এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিয়ান উইম্যান প্রেস কোর (IWPS)। তারা এই ঘটনাকে ‘লিঙ্গবৈষম্য’ বলে উল্লেখ করেন এবং এই বিষয় নিয়ে আফগানিস্তানের দূতাবাসের সঙ্গে বিদেশ মন্ত্রককে কথা বলার আর্জিও জানান। সমালোচনা করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের।

এরপর ১২ই অক্টোবর, আরও একটি সাংবাদিক বৈঠক করা হয়। সেখানে সমস্ত মহিলা সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ করা হয়, এবং তাদের সামনের সারিতে বসার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে মুত্তাকি প্রথম বৈঠকে মহিলা সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জানান, ‘‘ওই সাংবাদিক বৈঠকটি সংক্ষিপ্ত নোটিসে আয়োজন করা হয়েছিল। সেই কারণে আমন্ত্রিতদের তালিকাও সংক্ষিপ্ত রাখা হয়েছিল। এটি প্রযুক্তিগত একটি সমস্যা। এর নেপথ্যে অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।’’ তাঁর এই সাফাইয়ের পরেও প্রশ্ন থেকেই যায়, সংক্ষিপ্ত সাংবাদিকদের তালিকাতেও কেন একজন মহিলাকে রাখা হল না?

এরপরেই শুরু বামিয়ান বুদ্ধের ছবি বিতর্ক

আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশে পাহাড় খোদাই করে তৈরি করা ৫৫ মিটার এবং ৩৮ মিটার উচ্চতার দুটি বিশাল বুদ্ধমূর্তি ছিল। কিন্তু, আফগানিস্থানে প্রথম তালিবান শাসনকালে, এগুলোকে “অমুসলিম প্রতীক” বলে ঘোষণা করে, গোলা-বারুদ, ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করা হয়। এই ঘটনাটিকে আধুনিক ইতিহাসে “সংস্কৃতির হত্যা” বলে অভিহিত করা হয়। আর এবার মুত্তাকির ভারত সফরের সময়ে সেই বামিয়ান বুদ্ধের ছবি দেখা যায় মুত্তাকির পিছনে। যা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

যদিও এই সমস্ত বিষয় নিয়ে সমালোচনা শুরু হতেই, ১১ই সেপ্টেম্বর ভারতের বিদেশমন্ত্রক নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানায়, “দিল্লিতে আফগান বিদেশমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রকের কোনও হাত নেই।”

আর এটা ঠিক যে অন্য দেশে অবস্থিত দূতাবাস সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকে সংশ্লিষ্ট দেশের। কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভিয়েনা কনভেনশনের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, দূতাবাসের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। যার ফলে বিভিন্ন দেশের যতটা জায়গা নিয়ে অন্য দেশের দূতাবাস থাকে, সেটুকু জায়গা সেই দেশের সম্পদ বা সম্পত্তি বা এলাকা হিসাবে ধরা হয়। আর সেখানের নিয়ম দূতাবাসই লাগু বা ঠিক করে। এমনকি দেশের রাষ্ট্রপতি হোক বা প্রধানমন্ত্রী, দূতাবাসে প্রবেশ বা প্রস্থানের ক্ষেত্রে আগে থেকে সবাইকে নিতে হয় অনুমতি। এই জন্যই কোনও দেশে আক্রমণ হলে দেখা যায়, অবস্থিত দূতাবাসের দেশের লোক হামলা থেকে বাঁচতে, দূতাবাসে গিয়ে আশ্রয় নেয়। কারণ, কোনও দেশের দূতাবাসে হামলা মানে ধরে নেওয়া হয় সেটা সেই দেশের ওপরে হামলা।

এবার আমরা আপনাদের জানাবো আফগানিস্থানের সাথে হাত মিলিয়ে আদৌ কি ভারতের লাভ, না ক্ষতি?

প্রথমত, তালিবান সরকার চলে যাওয়ার পর ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সারা আফগানিস্থানে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ভারত। তৈরি করেছে বাঁধ, হাসপাতাল, রাস্তা, স্কুল, এমনকি পার্লামেন্ট বিল্ডিংও। এমনকি ভারত থেকে আফগান অফিসারদের ট্রেন করা হয়েছে, স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। কোভিডের সময় ভ্যাক্সিন, থেকে শুরু করে ভুমিকম্পে ত্রাণ সহায়তা – সমস্ত সাহায্য ভারত করেছে। এমনকি সাহায্য করেছে ক্রিকেটেও। – এখন যদি ভারত হঠাৎ করেই সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে দেয় তবে বিনিয়োগ করা ওই ৩ বিলিয়ন ডলারের কোনও সুবিধাই ওঠাতে পারবে না ভারত।

দ্বিতীয়ত, মুত্তাকি ভারত সফরে এসে জানিয়েছে, আল কায়েদা কিংবা অন্য কোনও ধরনের আতঙ্কবাদী সংগঠন এখন আর আফগানিস্থানের মাটিতে নেই। ফলে আফগানিস্থানের জমিকে ভারত বিরোধী কাজে ব্যবহার করা হবে না। আর আফগানিস্থানে সম্পূর্ণ রূপে দূতাবাস খুলে এই বিষয়টি নিজে থেকেই নিশ্চিত করতে পারবে ভারত। এই বন্ধুত্বের ফলে ভারতের শত্রু তালিকা থেকে যেমন একটা শত্রু কমবে, তেমনই সুরক্ষিত থাকবে ভারতের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত।

তৃতীয়ত, আফগানিস্থানের ভূমিতেই রয়েছে সবথেকে বেশি পরিমাণে রেয়ার আর্থ অর্থাৎ লিথিয়াম। ইলেকট্রিক ভেহিকেল হোক বা ব্যাটারি – সব ক্ষেত্রেই লিথিয়ামের দরকার সবথেকে বেশি। মনে করা হয়, আজ থেকে ২০ বছর পর লিথিয়ামের দরকার ৪০ গুণ বাড়তে পারে। আর সারা আফগানিস্থানে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের লিথিয়াম থাকতে পারে বলে ধারণা অনেকের। তাই রেয়ার আর্থের ভাণ্ডার যদি ভারতের হাতে আসে, তাহলে একদিকে সারা বিশ্বের ইলেকট্রিক ভেহিকেলের বাজার যেমন দখল করবে ভারত, তেমনই অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সাথে বাড়বে ভারতের অর্থনীতি।

চতুর্থত, পুরো এশিয়ার সাথে ভারতের কানেক্টিভিটি হয়ে উঠবে আরও সহজ। সেন্ট্রাল এশিয়ায় যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের একটি মূল বেস হতে পারে আফগানিস্থান। কারণ আফগানিস্থানের সাথে পাকিস্তান, ইরান, তুর্কেমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, এবং চিন বর্ডার শেয়ার করে। ফলে দক্ষিণ এশিয়া, সেন্ট্রাল এশিয়া, পশ্চিম এশিয়ার অ্যাক্সেস পাওয়া যাবে। আর সমগ্র এশিয়ার বাজার খুলে যাবে ভারতের জন্য।

পঞ্চমত, সম্পর্ক ভালো হলে, আফগানিস্থানকে বাণিজ্যের জন্য আর পাকিস্তানের গদার পোর্টের ওপর নির্ভর করতে হবে না। কারণ ইরানে চবাহার পোর্টের কাজ ভারত শেষ করে দিলে আফগানিস্থান ওখান থেকেই নিজেদের কাজ করতে পারবে। অন্যদিকে ভারতও বাড়াতে পারবে নিজেদের বাণিজ্য।

ষষ্ঠত, পাকিস্তানকে চাপে রাখার ক্ষেত্রে আফগানিস্থানের সম্পর্ক ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ বর্তমানে পাকিস্তান আর আফগানিস্থানের অশান্তি সম্পর্কে সবারই জানা। আর, POK ফেরাতে চাইলে আফগানিস্থান একটি ভালো বন্ধু হতে পারে, কারণ POK-এর অধিকাংশ সীমানাই আফগানিস্থান সংলগ্ন।

সপ্তমত, আফগানিস্থানে নারীদের অধিকার এবং সুরক্ষা – সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। কারণ, তালিবান সরকারের আমলে মেয়েদের ক্লাস সিক্সের বেশি পড়া বন্ধ, কাজ করা বন্ধ, বাড়ি থেকে বেরোলে পুরো ঢেকে বেরোনো, আর একা না বেরোনোর নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, ভারতকে আফগানিস্থানের লোকেরা সম্মান করে। আর আফগানিস্থানের সাথে ভারত নিজেদের সম্পর্ক ভালো করে নারীর অধিকার এবং সুরক্ষার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে আফগানিস্থানকে জোর দিতে পারে। যেমনভাবেই প্রথম বৈঠকে মহিলা সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ার পরে, সেটা যে কারণেই হোক তালিবানরা দ্বিতীয় বৈঠকে মহিলা সাংবাদিকদের ডেকেছে। এই পরিবর্তন পরেও হতেই পারে, এই আশা করাটা ভুল না!

এখনও অবধি আমরা বললাম ঠিক কী কী লাভ হবে ভারতের, কিন্তু ভারত ও আফগানিস্থানের ইতিহাস বলছে এক জঘন্য কথা। যা বার বার প্রশ্ন তোলে প্রতিটি ভারতীয়র মনে! ঠিক কী হয়েছিল?

দিনটা ছিল ১৯৯৯ সালের ২৪শে ডিসেম্বর। মাসুদ আজহার সহ দুই জঙ্গি বন্দী ছিল ভারতে। তাদের মুক্তির জন্য নেপালের কাঠমান্ডু থেকে ভারতগামী বিমান IC-814 অপরহরণ করে পাকিস্তানের জঙ্গী সংগঠন Harkat-ul-Mujahideen (HuM), বর্তমানে এটি Jaish-e-Mohammed (JeM)-এর অংশ। অপহরণকারীরা বিমানটিকে প্রথমে লাহোর, তারপর দুবাই হয়ে আফগানিস্তানের কান্দাহারে নিয়ে যায়। তখন আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ছিল তালিবান সরকার, আর তাদের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন আমির খান মুত্তাকি। যিনি তালিবানদের মুখ হয়ে সরাসরি ভারতের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হন। তিনি “মধ্যস্থতা”র নামে অপহরণকারীদের পক্ষ নিয়ে ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বন্দি মুক্তি সম্পন্ন করান। মাসুদ আজহার মুক্তি পেয়েই গঠন করেন Jaish-e-Mohammed (JeM), আর পরবর্তীকালে ভারতীয় সংসদে হামলা থেকে পুলওয়ামা অ্যাটাকের মতো একাধিক ভারত বিরোধী হামলা চালায়।

এরপর ২০০৯ সালে, কাবুলে অবস্থিত ভারতের দূতাবাসে একটি হামলা হয়, যাতে ১৭ জনের বেশি নিহত হন, এবং ৯০ জনের বেশি আহত হন। তখন আফগানিস্থানে তালিবান ক্ষমতায় না থাকলেও সক্রিয় ছিল। এবং আমির খান মুত্তাকি সেই সময়ে তালিবানদের মুখপাত্র ছিলেন। তিনি কখনও হামলার নিন্দা করেননি, বরং উল্টোভাবে ভারতের উপস্থিতিকে “আমেরিকার সহযোগিতা” বলে সমালোচনা করেছিলেন।

২০২১ সালে আফগানিস্থানে ভারতীয় সাংবাদিক দানিশ সিদ্দীকিকে তালিবানরাই হত্যা করেছিল। যিনি সেই সময় আফগানিস্থানের বিভিন্ন বাস্তব বিষয় নিজের ছবির মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছিলেন।

এমনকি তালিবান শাসনাধীন আফগানিস্তানে, পাকিস্তানের ISI এবং জয়েশ-ই-মোহাম্মদ / লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির চলত — মুত্তাকি প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক কভার দিতেন।

এখন এই সরকারের এই মন্ত্রীকে নিয়ে ভারতের হঠাৎ করেই এত প্রেম, ভালোবাসা দেখলে যে কেউ প্রশ্ন তুলতে বাধ্য!

আবার ভারত যেখানে সন্ত্রাস বিরোধী এবং আতঙ্কবাদী কার্যকলাপের বিরোধিতা করে, সেখানে মুত্তাকিকে ডেকে আনা সেই কথার সাথে সহমত প্রকাশ করে না। কারণ, আপনি জানলে অবাক হবেন আমির খান মুত্তাকির বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য জাতিসংঘের তরফ থেকে তাকে আফগানিস্থান থেকে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু, ভারত একবার নয়, বরং দু-দুবার জাতিসংঘের কাছে আবেদন করে মুত্তাকির নিষেধাজ্ঞা তুলিয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার নিয়ে ভারত একাধিকবার বিরোধ করলেও, আফগানিস্থানে শিখ, হিন্দু, হাজারাদের ওপর অত্যাচার হলেও ভারত নীরব থেকেছে।

তবে, এমনটা নয় যে ভারত এখন হঠাৎ করেই আফগানিস্থানের সাথে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে!

কারণ, ২০২১ সালের তালিবানরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারত একাধিকবার ব্যাক চ্যানেলের মাধ্যমে আফগানিস্থানের সাথে কথা-বার্তা বলেছে, এবং বিভিন্ন মানবিক সহায়তাও প্রদান করেছে। আর কারণগুলি তো আপনাদের আগেই জানিয়েছি।

এখন অনেকেই বিরোধিতা করছে। কিন্ত যদি আমরা খারাপ এবং নিরীহ মানুষ হত্যার দায়ে দিয়ে তালিবান অর্থাৎ আফগানদের সাথে বন্ধুত্ব না করি তাহলে কোনও দেশের সাথেই বন্ধুত্ব করা উচিত না। কারণ একদিকে আমেরিকাকে আমরা যারা সভ্য এবং উন্নত দেশ বলে মানি, সেই দেশই বিশ্বের একাধিক দেশের সমস্যার মূল কারণ, এবং তারাই জঙ্গিদের সবথেকে বেশি আর্থিক সাহায্য করে। তাহলে তো আমাদের আমেরিকার সাথে আগে সম্পর্ক কাটা উচিত। এরমভাবে দেখতে গেলে তো সব দেশেরই কোনও না কোনও এমন কাজ আছে যা মানবতার বিরোধী এবং সেই নিয়ে পূর্বে চর্চা হয়েছে। কই তখন তো দেশের সম্পর্ক নিয়ে কোনওরকম সমস্যা তৈরি হয়নি, বা কেউ বারণ করেনি। এমনকি বিখ্যাত গীতিকার এবং চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার, যিনি ভারতকে, আফগানিস্থানের অভ্যর্থনার বিষয়টিকে লজ্জাজনক বলেছেন, তিনি নিজেই একাধিকবার পাকিস্তানে গিয়েছেন। যে পাকিস্তান হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চালায়, বারবার ভারতের ওপর আক্রমণ করে। তাহলে তখন তাঁর সুবুদ্ধির উদয় হয়নি কেন? তখন কেন প্রশ্ন করেননি সাংবাদিকরা?

আর আমরা আগেই বলেছিলাম, জিওপলিটিক্সে স্থায়ী শত্রু এবং স্থায়ী বন্ধু বলে কিছু হয় না! এমনকি কূটনীতির জন্য জনপ্রিয় চাণক্য, বলে গিয়েছেন – প্রতিবেশী দেশ শত্রু হবে এটা নিশ্চিত, কিন্তু, প্রতিবেশির প্রতিবেশি দেশ যে বন্ধু হবে সেটাই কাম্য।

আবার কথায় আছে শত্রুর শত্রু আমার মিত্র। তবে, এক্ষেত্রেও প্রশ্ন থেকেই যায় যে এই হিসাবে যদি শত্রুর শত্রুও আতঙ্কবাদি হয় সেক্ষেত্রে কি বন্ধুত্ব করা শ্রেয়?

Leave a Comment