প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ২০২২ সালের ২৩ জুলাই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। প্রথমে ইডি-র হাতে এরপর পরে সিবিআই-এর হাতেও গ্রেফতার হন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ বন্ধু অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও। তবে পরে তাঁর জামিন হয়ে যায়। এদিকে বারংবার পার্থের জামিন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ তিন বছর পর অবশেষে গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার নিজের নাকতলার বাড়িতে ফিরেছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর সে বাড়ি ফিরতেই ঘটে গেল ধুন্ধুমার কাণ্ড। প্রকাশ্যে এল একটি চিঠি , যা নিয়ে রাজনৈতিক অন্দরে তৈরি হল এক চাপা উত্তেজনা।
মমতাকে চিঠি পাঠালেন পার্থ
সূত্রের খবর, জেলবন্দি থাকাকালীন পার্থ চট্টোপাধ্যায় একটি চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আর সেই সংশ্লিষ্ট চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন যে, ‘সংবাদমাধ্যমে জেনেছি শাসকদল আমাকে সাসপেন্ড করেছে। কিন্তু দলীয় সংবিধানের কোন ধারা মেনে আমায় সাসপেন্ড করা হল?’ ইতিমধ্যেই সেই চিঠি পৌঁছে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে। এমনকি ওই চিঠির প্রতিলিপিও পাঠানো হয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর কাছেও। তবে ওই চিঠিতে শুধু মমতাকে নয়, অভিষেককে নিয়েও কথা বলেছিলেন পার্থ। তিনি অভিষেককে ‘নব্য সেনাপতি’ বলে সম্বোধন করেছেন। তাঁর আক্ষেপ, একই রকম অভিযোগে অভিযুক্ত দলীয় নেতাদের পাশে দল বহু বার দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তার বেলা কেন অন্যথা হল। জেল থেকে বাড়ি ফিরতেই একে একে নানা তথ্য প্রকাশ্যে এল।
জেল থেকে বাড়ি ফিরতেই প্রকাশ্যে এল চিঠি
শাসকদলের সুপ্রিমোকে চিঠি লেখার প্রসঙ্গ তুলে পার্থের অনুগামীদের একাংশের দাবি, জেলবন্দি অবস্থাতেই ওই চিঠিটি লেখেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। নাকতলার বাড়ি ফিরে সেই চিঠি স্রেফ তৃণমূলনেত্রীর দফতরের ঠিকানায় পাঠিয়েছেন। তবে ঘনিষ্ঠদের অন্য অংশের দাবি, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই ওই চিঠি লিখেছিলেন পার্থ। জামিনে বাড়ি ফেরার পর সেই খবরই প্রকাশ্যে এসেছে। বস্তুত, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি-র হাতে যখন গ্রেফতার হন পার্থ তখন তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতে চান কি না জিজ্ঞাসা করা হয়। সেই সময় পার্থ সোজা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়েছিলেন। তবে ফোনে পাননি তাঁকে। যদিও এই নিয়ে বিরোধিতা করেছিলেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “তল্লাশি হলে প্রথমেই ফোন নিয়ে নেয়। তাহলে ফোন করবেন কীভাবে?”
আরও পড়ুন: রেজিস্ট্রেশন এগোচ্ছে না! রাস্তাঘাটে বেড়েই চলেছে টোটোর দৌরাত্ম্য
উল্লেখ্য প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, “সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত অনুসারে দলের সমস্ত পদ থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরানো হল।” আর তখনই মন্ত্রিত্ব চলে যায় পার্থর। এমনকি গ্রেফতারের ৬ দিনের মাথায় মন্ত্রিসভা থেকেও সরানো হয় তাঁকে। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে তবে কি নির্বাচনের আগে ফের পার্থকে দলে নেওয়া হবে? তবে সবটাই নির্ভর করছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠির উত্তরে।