প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বছর ঘুরলেই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজতে চলেছে। তাই এখন থেকেই ভোট প্রচারের প্রস্তুতি বেশ জব্বরভাবে নেওয়া শুরু করেছে শাসকদল থেকে শুরু করে বিরোধীদলগুলি। আর তার মাঝেই একের পর এক দুর্নীতির খবর উঠে আসছে খবরের শিরোনামে। এমতাবস্থায় এবার নির্বাচনের আগে বড় ধাক্কা খেল তৃণমূল। মুকুল রায়ের (Mukul Roy) বিধায়ক পদ সরাসরি খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট।
বিধায়কের পদ হারালেন মুকুল
রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ করেছে। দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ীই কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়কের পদ হারালেন মুকুল। ২০১৭ সালের নভেম্বরে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল রায়। ২০২০ সালে দলের হয়ে ভাল কাজ করার জন্য বিজেপিতে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। এমনকি একুশের বিধানসভা ভোটে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে বিজেপির হয়ে জেতেন মুকুল রায়। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের পরপরই তিনি নিজের পুরনো দল তৃণমূলে ফিরে যান। ২০২১ সালের ১১ জুন তৃণমূল ভবনে তৃণমূলের উত্তরীয় পরে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছিলেন তিনি। এরপরই বিধায়ক পদ নিয়ে বিজেপি-র অম্বিকা রায় এই নিয়ে মামলা করেন।
বিধানসভার অধ্যক্ষকে চিঠি বিজেপির
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে অম্বিকা রায় মুকুলকে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করায় ঘোর বিরোধিতা করেন। আসলে বিরোধী দলের প্রতিনিধিকেও PAC-র চেয়ারম্যান করা হয়। কিন্তু বিজেপি-র টিকিটে বিধায়ক হয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া মুকুল আর বিজেপির প্রতিনিধি না হওয়ায় তাঁকে ফের কেন PAC-র চেয়ারম্যান করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অম্বিকা। এই প্রসঙ্গে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিরোধীদের তরফে চিঠি দেওয়া হয় কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। অধ্যক্ষ জানান, মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজ বা PAC থেকে তাঁকে সরানোর প্রশ্ন ওঠে না কারণ তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও বিজেপি-তে আছেন।
বিরোধীদের অভিযোগ খারিজ অধ্যক্ষের
মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ নিয়ে দুই বছর আগে ২০২৩ সালে শুভেন্দু অধিকারী ফের একটি মামলা করেন। সেখানে তাঁর বক্তব্য ছিল, দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী মুকুলের বিরুদ্ধে পদত্যাগ করা উচিত। বিজেপি-র টিকিটে জয়ী হয়ে এখন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন মুকুল। তিনি তৃণমূলের হয়েই কাজ করছেন। আর তখনই সেই নিয়ে বিস্তর টানাপোড়েন শুরু হয়। কলকাতা হাইকোর্টও বিধানসভার অধ্যক্ষকে নিজের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে দেখতে বলা হয়। কিন্তু এর পরও সব খতিয়ে দেখে বিমান জানান, মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের প্রশ্ন ওঠে না কারণ তাঁর কাছে যে তথ্যপ্রমাণ জমা পড়েছে, তাতে এর প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন না তিনি। এর পর ফের আদালতের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু, অম্বিকাদের আইনজীবী। অবশেষে আজ সেই মামলা বিচারাধীন হল এবং হয় হল বিরোধীদের।
আরও পড়ুন: IPL 2026 এর আগে গরম খবর! অধিনায়কদের ছেড়ে দিতে পারে এই ৩ দল
আনন্দিত শুভেন্দু অধিকারী
আদালতের রায় নিয়ে বেশ খুশি বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “সংবিধানের জয় হয়েছে। দশম তফসিলের জয় হয়েছে। ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা হাইকোর্ট। লম্বা লড়াই লড়েছি আমরা। ২০২১ সালের পর থেকে বিজেপি নিশানায় ছিল। বিজেপি-র একের পর এক বিধায়ককে নানা ভাবে, প্রলোভন দেখিয়ে, কাউকে অর্থের বিনিময়ে, কাউকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আজ এটা দরকার ছিল যে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, সংবিধান শেষ কথা বলে।” অন্যদিকে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে, তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ” শিশির অধিকারী সাংসদ হওয়ার পর বিজেপি-র মিটিংয়ে যেতে দেখেছিলাম তাঁকে, অমিত শাহের পা ধরে ভোটে অংশ নিতে দেখেছিলাম। সেই সময় শুভেন্দুর সংবিধানের জয় কোথায় ছিল, জানতে ইচ্ছে করে। মুকুলদা গুরুতর অসুস্থ। প্রথমে ওঁর সুস্থতা কামনা করি।”