সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: হম্বিতম্বিই হল সাড়! সবাই যা ভেবেছিল তার ধারে কাছেও গেল না। কারণ, বিহারের ভোটের (Bihar Election 2025) ফলাফল অন্য কথা বলছে। প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখন নীতিশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২০০-র বেশি আসন টপকেছে। আর তেজস্বী যাদবের মহাগটবন্ধন ৩০-র গণ্ডি পার করেছে। তবে এই যে কদিন আগে তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়ে গেছিল! সেসব কোথায় গেল? কী কারণে ঘরের ছেলে আবারও রাজ্যের রাজত্বে বসার পথে? তুলে ধরা হল এমনই কিছু কারণ।
তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা
আসলে ভোটের আগেই তরুণ নেতা তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছিল মহাজোট। তবে নীতিশ কুমারের মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর লড়াই করার জায়গাটা যে এতও সহজ না, তা আগেই মনে রাখার দরকার ছিল। কারণ, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বিহারের রাজত্ব করে আসছেন এই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। এমনকি তার পাশাপাশি লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বীকে বিহারের আসনে বসালে জঙ্গলরাজের আতঙ্ক আবার ফিরবে কিনা তা ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছিল না আমজনতা।
জঙ্গলরাজের আতঙ্ক
নীতিশ কুমারের আগে ১৫ বছর ধরে লালুপ্রসাদের শাসনকাল নিয়ে বিহারবাসী এতটাই তিক্ত হয়ে উঠেছিল যে বিরোধীরা তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধেই কাজ করল। কারণ, বিহারে ২০ বছর ধরে শাসন করছেন নীতিশ কুমার। আর সেই হিসেবে প্রতিষ্ঠান বিরোধি কাজ করার কথা নীতিশের বিপক্ষেই। এদিকে তেজস্বী যাদব যখন কোনও জনসভায় যান, তখন তিনি গোটা ৫০ গাড়ির কনভয়ে নিয়ে যান। আর সেই কনভয়েতে শুধুমাত্র গুন্ডারাও থাকে। তেজস্বী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছে এই আশায় যাদব সম্প্রদায়ের যুবকরা রীতিমতো দাদাগিরিও শুরু করেছে। এমনকি অস্ত্র নিয়েও ঘোরাঘুরি করছে। আর সে কারণেই সাহস নিতে চাইয়নি বিহারের জনগণ।
মুসলিম নির্ভরতা
বিহারের ১৪% যাদব, ১৯ শতাংশ মুসলিম আর ৯ শতাংশ নিষাদ। আর এই সহজ সমীকরণই বিহারে মহাজোট বণ্টনের ছক কষেছিল। তবে তা সম্পূর্ণ কাল হল। কারণ, বিহারের একটা বড় অংশই সরল জাতপাতের সমীকরণ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আর যুব সমাজ থেকে শুরু করে মহিলাদের নিয়েই নতুন সমীকরণ তৈরি করে ফেলেছে, যা ভাঙার কোনও উপায় খুঁজে পায়নি মহাজোট।
ভুল প্রচার
বিহারের ভোটের আগে কংগ্রেসের প্রচার অভিযান ছিল সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, তারা মূল ইস্যু হিসেবে তুলে এনেছিল ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা এসআইআরকে, যা কোনওভাবেই বিহারের সমস্যা নয়। এছাড়া এসআইআর শেষ হওয়ার বছর পর অবৈধ ভোটারদের নাম বাদ যাওয়ার কারণে সেই ইস্যু আর সামনে আনতেই পারেনি মহাজোট। আর শেষ বেলায় এসে তেজস্বী যে সমস্ত পরিবারকে চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন, তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি আমজনতার। সে কারণেই তারা সাহস নেয়নি।
আরও পড়ুনঃ দিল্লি ব্লাস্টে বড়সড় মোড়! মুর্শিদাবাদের পর এবার কোচবিহারে NIA-র হানা
উপমুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা
বলাবাহুল্য, তেজস্বীর পাশাপাশি মুকেশ সাহানিকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীও ঘোষণা করেছিল মহাজোট। তাও ধোপে টেকেনি। এমনই মাল্লা-নিষাদ ভোটে ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি মুকেশ সাহানি, তার উপর দুই মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষোভ কাজ করেছে। কারণ, ১৯ শতাংশ মুসলিম ভোট অথচ মহাজোট কেন মুসলিম কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদবর্তী ঘোষণা করেনি, এই নিয়েই তোপ দেগেছে সংখ্যালঘু মুসলিমরা। আর সে কারণেই ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল মহাজোট বন্ধন।