“আমি ধৈর্য রাখতে পারছি না..” হুমায়ূন ক্ষতিপূরণ দিতেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন কালীগঞ্জের সন্তানহারা মা

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: কালীগঞ্জে তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকেই ঘটে গেল ভয়ংকর ঘটনা (Nadia Minor Death)! ভোট পরবর্তী হিংসায় বোমার আঘাতে প্রাণ গিয়েছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আয়েশার (নাম পরিবর্তিত)। উত্তপ্ত পরিস্থিতি এলাকা জুড়ে। আর এই আবহে শোকার্তর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। সেখানে পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে গেলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় যে টাকা নেওয়ার মতো কেউ তাঁর বাড়িতে নেই।

মৃতের বাড়ি যান হুমায়ুন কবীর

জানা গিয়েছে, গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুরে কালীগঞ্জে আয়েশার (নাম পরিবর্তিত) বাড়িতে গিয়েছিলেন ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। সেখানে মৃতার মায়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন তিনি। সদ্য সন্তানহারা মা, তৃণমূল নেতার সামনে নানা অভিযোগের কথা কাঁদতে কাঁদতে জানাচ্ছিলেন।

মৃতের মাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এটা তো কোনও দুর্ঘটনা নয়। দুর্ঘটনা হলে তো হাতে বা পায়ে বা অন্য কোথাও লাগত। আমার মেয়ের বুকে বোমা লেগেছে, আমি নিজের চোখে সেটা দেখেছি। আমি জানতে চাই, ওই বোমা কেন উদ্ধার করা হল না?’’

ক্ষতিপূরণ নিতে অস্বীকার পরিবারের!

এরপরই বিধায়ক হুমায়ূন কবীর একটি খয়েরি খাম দিতে চান আয়েশার (নাম পরিবর্তিত) মাকে। এবং বলেন,”এখানে আমার ফোন নম্বর আছে। কোনও অসুবিধা হলে যোগাযোগ করবেন। আর সামান্য কিছু টাকা আছে…।” সঙ্গে-সঙ্গে কেঁদে ফেলেন আয়েশার মা। রীতিমত রেগে গিয়ে বলেন বলেন, “কীসের জন্যে?…কীসের জন্যে? এমন শোক আমায় দেখাবেন না। আমি ধৈর্য্য রাখতে পারব না। আমার জমি আছে। বাড়ি আছে। আমার দরকার নেই।” তখনই পাশের আরও এক মহিলা বলেন, “ওঁর আর কে আছে টাকা নেবে?”

ক্ষোভ প্রকাশ পরিবারের

যদিও হুমায়ুন কবীর ধীর স্থির কন্ঠে জানান, তিনি রাজনৈতিক নেতা হিসাবে কোনও দলের পক্ষ থেকে এই অর্থসাহায্য করতে আসেননি। তাঁর আলাদা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে। সেখান থেকে এই টাকা দিতে চান। কিন্তু তা-ও অর্থ প্রত্যাখান করে মৃতের পরিবার।

এদিকে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী একবারও বাড়িতে আসেননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মৃতের মা। বলেন, ‘‘তিনি কিন্তু এক বারও এলেন না। কেন এলেন না? আসার দরকার নেই!’’ উল্লেখ্য, প্রাক্তন বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা আলিফাকে কালীগঞ্জের বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল।

আরও পড়ুন: হাইকোর্টের নির্দেশে খুলে গেল চাকরিহারার কপাল

প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুন ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ পর্ব মেটার পর গত সোমবার ফলপ্রকাশে জানা যায় তৃণমূল প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হতে চলেছেন। কিন্তু তার আগেই বিজয়মিছিল বার করেন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, একটি বিজয় মিছিল থেকে বোমা ছোড়া হয় সিপিএম কর্মীদের বাড়ি লক্ষ্য করে।

তখনই সকেট বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় বছর দশেকের এক ছোট্ট প্রাণের। এই ঘটনায় সোমবার বিকেলেই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে এই ঘটনায় উদ্বেগপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শোকপ্রকাশ মমতার!

এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন যে, যত দ্রুত সম্ভব দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেন জয়ী তৃণমূল প্রার্থী আলিফাও। তিনিও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তোলেন। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অন্যদিকে ক্ষুব্ধ বিধায়ক বলেন, “প্রতিটা মানুষের এই অপরাধের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা উচিত। যার কাছে বোমা থাকবে তিনি কোন ধর্মের, কোন রাজনৈতিক দলের দেখার দরকার নেই। আমি তো জানি কারা এমন বোমা মারে…তাদের সকলের বিরুদ্ধে প্রতিটি মানুষের মুখ খোলা উচিত।”

রাজ্য রাজনীতি, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা সংক্রান্ত নানা ধরনের খবরের লেটেস্ট আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন আমাদের India Hood Bangla কে।

Leave a Comment