হিন্দু পুরাণ মতে আমরা শুনে এসেছি বাসুকি নামের একজন শক্তিশালী সর্প দেবতার কথা। যাকে ঘিরে রচিত হয়েছে নানা গল্প, কাহিনী এবং মিথ। ভগবান শিবের সঙ্গে বাসুকির নাম জড়িত। কেননা শিবের গলায় থাকেন বাসুকিই। আবার এই বাসুকি নাগই ছোট্ট শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে তাঁর বাবা যখন যমুনা পেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন উথাল-পাথাল বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন ফনা তুলে। এবার সেই হিন্দু শাস্ত্রে কল্পিত বাসুকির খোঁজ দিল বিজ্ঞানীরা। প্রায় ৪ কোটি ৭০ লক্ষ বছরের পুরনো প্রাগৈতিহাসিক বাসুকি সাপের জীবাশ্ম উদ্ধার হল ভারতের মাটি থেকে।
ভারতের দীর্ঘতম সাপ
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি রুরকির নতুন গবেষণা অনুসারে, গুজরাটের কচ্ছ থেকে উদ্ধার হয়েছে এক জীবাশ্ম। যেটা ভালো করে বিচার বিশ্লেষণ এবং পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটিই হচ্ছে এ বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাপের জীবাশ্ম! এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘বাসুকি ইন্ডিকাস’। এটাকে ‘জায়ান্ট স্নেক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। অনুমান করা হয়েছে যে-সর্প প্রজাতিটিকে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছিলেন সেটি প্রায় ৫ কোটি বছরের পুরনো প্রজাতি। এই প্রজাতির সাপটিকে ভারতের প্রাগৈতিহাসিক জীববৈচিত্র্যের অন্যতম বিশেষ নিদর্শন হিসেবে মেনে নিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
খনি থেকে উদ্ধার সাপ!
পানান্ধ্রো লিগনাইট খনি থেকে, গবেষকরা 27টি ভালভাবে সংরক্ষিত হাড় আবিষ্কার করেছেন যা সাপের মেরুদণ্ড গঠন করে, কিছু সংযোগ এখনও অক্ষত রয়েছে। এটি একটি পূর্ণ বয়স্ক সাপের হাড়। যার দৈর্ঘ্য ১১ থেকে ১৫ মিটার। এই নতুন আবিষ্কৃত সাপের প্রজাতির নাম দিয়েছেন ‘ভাসুকি ইন্ডিকাস’। যেটি কিনা এখন বিলুপ্ত ম্যাডসোইডি পরিবারের অংশ, যা আফ্রিকা, ইউরোপ এবং ভারত সহ বিস্তৃত ভৌগোলিক অঞ্চল জুড়ে বসবাস
গবেষকদের মতামত
জানা গিয়েছে বাসুকির যে-কল্পনা ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাসে ছড়িয়ে আছে, তা সম্ভবত কল্পনাপ্রবণ কাহিনী হলেও সত্যি। কেননা, বাসুকি সাপের অনেক বৈশিষ্ট্য একালে উদ্ধার হওয়া সাপের জীবাশ্মর সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে। অধ্যাপক সুনীল বাজপেয়ী ও দেবজিত দত্তের নেতৃত্বে এই সংক্রান্ত নমুনা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, গবেষণা, সমীক্ষা ইত্যাদি হয়েছে। দেবজিত দত্ত বলেন, ‘বাসুকি ছিল খুব ধীর চলনশক্তিসম্পন্ন ভারী শরীরের বিশাল আকারের এক সাপ। ঠান্ডা ভিজে জায়গায় থাকে এরা। অ্যানাকোন্ডা ও পাইথনের কায়দায় শিকার ধরে এরা।