বইপোকা থেকে রক্তপিপাসু মাওবাদী! কে এই হিডমা? জানুন

Madvi Hidma Killed

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: অন্ধ্রপ্রদেশের ঘন অরণ্যের ভেতরে গতকাল রাতের অন্ধকারেই হঠাৎ করে শুরু হয় গোলাগুলি। আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মাওবাদী ও ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি বিনিময়ে খতম হয় মাথাব্যথার আসল নাম মাদ্ভী হিডমা (Madvi Hidma Killed)। এক সময়ের বইপোকা পরে দেশের সবথেকে ভয়ংকর মাওবাদীর মুখ! কীভাবে শুরু হল মাদ্ভী হিডমার এই যাত্রা?

বিরাট সাফল্য নিরাপত্তা রক্ষা বাহিনীর

অন্ধ্রপ্রদেশের আল্লুরি সীথারামারাজু জেলার গভীর জঙ্গলে গতকাল রাতে সংঘর্ষেই খতম হয়েছে মাওবাদীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিডমা। এমনকি তার সঙ্গীসহ অন্তত ছয়জন মাওবাদীর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় সেখানে। এখনও পর্যন্ত তল্লাশি চলছে। বলাবাহুল্য, দেশের অ্যান্টি মাওবাদী অপারেশনগুলির মধ্যে এটিকেই সবথেকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে নিরাপত্তা বাহিনী থেকে শুরু করে কেন্দ্র সরকার। কারণ, বহু ভয়াবহ হামলার ছক কষেছিল ওই কুখ্যাত মাওবাদী।

কে ছিল মাদ্ভী হিডমা?

একাধিক রিপোর্ট খতিয়ে জানা গেলে, ১৯৮১ সালে সুকমার পভর্তিতে তার জন্ম হয়। আদিবাসী পরিবারেই তার বেড়ে ওঠা। দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। ছোটবেলায় গ্রামের কাছে মাওবাদীরা পুকুর খনন করেছিল। সেই ঘটনাই শিশু হিডমার মনে এক বিদ্রোহের বীজ বুনে দেয়। এমনটাই দাবি করেন অনেকে। পরে দলে যোগ দেওয়ার পর দ্রুতই নজরে আসেন। এমনকি মাওবাদী রমেশ পুড়িয়ামি ওরফে বড়ান্না যিনি পরে আত্মসমর্পণ করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন, হিডমা ছিল অত্যন্ত উদ্যমী আর শিখতে আগ্রহী। নিজেই বলেছিল দলে যোগ দিতে চাই।

সবথেকে বড় ব্যাপার, যারা তাকে কাছ থেকে চেনেন, তারা জানেন যে, হিডমা শুধুমাত্র অস্ত্রধারী নন, বরং তিনি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনও করতেন। হ্যাঁ, ভোর চারটেয় ঘুম থেকে উঠতেন। এমনকি প্রতিদিন নিয়মিত খবরের কাগজ পড়তেন। দিনের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতেন। আর দীর্ঘ সময় ব্যায়াম করতেন। পাশাপাশি বনাঞ্চলের কৌশল শেখাতেন। এদিকে নিজের দলের সদস্যদের তিনি ক্লান্তিহীন ট্রেনিং দিতেন।

উল্লেখ্য, সুন্দরি নামের এক প্রাক্তন মহিলা মাওবাদী, যিনি বর্তমানে জেলা রিজার্ভ গার্ডের সদস্য, তিনি বলেছেন, শারীরিক ফিটনেসে তার মতো কঠোর মাওবাদীদের মধ্যে কেউ ছিল না। সবথেকে বড় ব্যাপার, হিডমা ছিল অত্যন্ত বইপোকা। অস্ত্রের প্রতি আসক্তের থেকেও তার শেখার প্রতি ইচ্ছা বেশি ছিল। তবে তিনি ডায়াবেটিসে ভুগতেন। গরুর মাংস, মুরগি আর চা, এটাই ছিল তার পছন্দের খাবার। রুটি ছাড়া কিছুই খেতেন না।

৭৬ জনকে হত্যা থেকে থেকে ঝিরম ঘাঁটির গণহত্যা, সবকিছুর কারিগর হিডমা

বলাবাহুল্য, হিডমার স্ক্রাইক ব্যাটালিয়ানকে মাওবাদীদের সবথেকে প্রাণঘাতী ইউনিটি বলা হয়। কারণ, তার ছকেই ২০১০ সালে দান্তেওয়াড়া হামলায় ৭৬ জন জওয়ান নিহত হয়েছিল। পাশাপাশি ২০১৩ সালে ঝিরম ঘাঁটি কংগ্রেস নেতা হত্যাকাণ্ডে ২৭ জন নিহত হয়, আর ২০২১ সালে সুকমা-বিজাপুর মুভমেন্ট অ্যাটাকে ২২ জন নিরাপত্তা রক্ষীর মৃত্যু হয়। বলার বিষয়, তার মাথার দাম ছিল ৫০ লক্ষ টাকা।

আরও পড়ুনঃ বকেয়া পেনশন দেওয়া শুরু করল সরকার, কপাল খুলল অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের

এদিকে শুক্রবার ভোরবেলা মারেদুমিল্লি জঙ্গলে আগে থেকেই আঁচ পেয়ে নিরাপত্তা রক্ষা বাহিনীরা ঘিরে ফেলে। এরপর গুলি বিনিময় চলতে থাকে তাদের মধ্যে। তবে হিডমার সাথে থাকা আরও পাঁচ মাওবাদীও এতে খতম হয়। পাশাপাশি হিডমার স্ত্রীও প্রাণ হারিয়েছেন। এ বিষয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ হরিশ কুমার গুপ্ত বলেছেন, এটি মাওবাদী দমন লড়াইয়ের সবথেকে বড় মাইলস্টোন ছিল। সবথেকে শক্তিশালী সামরিক ইউনিটের মাথাটাই এবার কেটে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ওদের মনোবল তলানিতে ঠেকবে।

Leave a Comment