কারখানা বা গাড়ির ধোঁয়া নয়, কলকাতার বায়ুদূষণের পেছনে সবথেকে বড় কারণ এটি

kolkata pollution

সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ যত সময় এগোচ্ছে ততই কলকাতা দূষণের নিরিখে দিল্লিকে টেক্কা দিচ্ছে। এদিকে শীত আসতে না আসতেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে এবং আগামী দিনে আরও খারাপ হবে বলে সমীক্ষায় উঠে এল। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। সম্প্রতি কলকাতা এবং হাওড়ায় এত বায়ুদূষণের (Kolkata Pollution) মাত্রা কেন বেড়েছে সেই নিয়ে সমীক্ষা করেছিল ‘দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট’ (TERI)। আর এই টেরি’র সমীক্ষায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। গাড়ির ধোঁয়া নয়, এই দূষণের পেছনে এমন এক জিনিসের নাম উঠে এসেছে যেটি সম্পর্কে শুনলে আপনিও আঁতকে উঠবেন। চলুন আরও বিশদে জেনে নেবেন ঝটপট।

কলকাতা, হাওড়ার দূষণ নিয়ে চাঞ্চল্যকর সমীক্ষা

কালীপুজোর পর থেকে বাংলার বিশেষ করে কলকাতা এবং হাওড়ার পরিবেশ দূষিয়ে গিয়েছে। তবে এর পেছনে কিন্তু গাড়ির ধোঁয়া নয়, এর পেছনে মূল কারণ হল, বাতাস বা যানবাহনের চলাচলে যে ধুলো বাতাসে মিশে যায়— তা কলকাতার বাতাসে দূষণের সবচেয়ে বড় উৎস। হ্যাঁ একদম ঠিক শুনেছেন। ‘দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট’-র তরফে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের (ডব্লিউবিপিসিবি) জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই সমীক্ষাটি করা হয়েছে কলকাতা ও হাওড়া অঞ্চলে।

এক রিপোর্ট অনুযায়ী, পিএম১০ কণার প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং পিএম২.৫ কণার প্রায় ১৬ শতাংশ এই রাস্তার ধুলো থেকেই আসে। তুলনায়, যানবাহনের অবদান পিএ১০-এর ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২ শতাংশ এবং পিএম২.৫-এর ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। শিল্পাঞ্চলের অবদানও তুলনামূলক কম পিএম১০-এ ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ এবং পিএম২.৫-এ প্রায় ১৭ শতাংশ। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, শীতকালে বাতাসের চলাচল কমে যাওয়ায় দূষিত কণাগুলি মাটির কাছাকাছি থেকে যায়। ফলে শীতের মাসে কলকাতার বায়ুর মান ‘খারাপ’ থেকে ‘অত্যধিক খারাপ’ পর্যায়ে নেমে আসে। আবাসিক এলাকার বর্জ্য পোড়ানো ও বায়োমাস ব্যবহারও শীতকালে দূষণ বাড়ায়। এছাড়া আরও অন্যান্য কারণ তো রয়েইছেই।

সমাধান কোথায়?

১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে AQI ‘খারাপ’, ২০১ থেকে ৩০০ ‘খুব খারাপ’ এবং ৩০০ এর উপরে ‘গুরুতর’ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। কালীপুজোর সময়ে শহরের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বায়ু মানের সূচক ১৮৬ পিএম ২.৫-এ পৌঁছে যায়। এদিকে রাতের দিকে হাওড়ার বেলুড়ে এটি ৩৬৪-তে পৌঁছে যায়। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। সমীক্ষা অনুযায়ী, কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত এলাকাগুলিতেই দূষণের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় টেরি বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন শুধু যানবাহন বা শিল্প নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং শহরের রাস্তাঘাটের উন্নয়নই একমাত্র পথ। রাস্তার ফাটল-গর্ত মেরামত, পুরনো রাস্তা পাকা করা, ধুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত জল ছেটানো ও আধুনিক পরিকাঠামো তৈরির দিকেই জোর দিতে হবে প্রশাসনকে, নইলে পরিস্থিতি আগামী দিনে আরও খারাপ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Comment