ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: চলতি বছর লোকসভা নির্বাচনের ময়দানে একের পর এক বিরোধী দলগুলির দাপট দেখেছিল রাজ্যবাসী। দফায় দফায় বিভিন্ন জায়গায় প্রচার, জনসভা এবং প্রতিশ্রুতিতে যেন গমগমে পরিবেশ ছিল রাজ্য জুড়ে। প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সকলেই এসেছিলেন রাজ্যে।
কিন্তু বঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে ভোটের ফলাফল মিলল উল্টো। শত চেষ্টা করেও বঙ্গে গেরুয়া শিবির তেমন কোনও আসনই আয়ত্ত করতে পারল না। উল্টে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছেন ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে তোলা ED-র চাঞ্চল্যকর দাবিতে আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়লেন অভিষেক।
ED আগেই একটি বিবৃতিতে জানিয়েছিল, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার CEO। ED এ-ও জানিয়েছিল, সংস্থার ডিরেক্টর পদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অভিষেকের বাবা-মাও। অভিষেক নিজেও এই সংস্থাকে ‘আমার সংস্থা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন গত বছর। এবার সেই লিপস অ্যান্ড বাইন্ডস মামলায় সম্পত্তি অ্যাটাচমেন্ট নিয়ে হাইকোর্টে উঠল এক বড় প্রশ্ন। মূলত, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির পরিমাণ জানতে চেয়েছিল আদালত। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এই মামলায় অভিষেক-সহ সকল ডিরেক্টরের সম্পত্তির পরিমাণ জানতে চায় কোর্ট।
শিরোনামে ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থা!
গতকাল অর্থাৎ বুধবার প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি ছিল। সেই শুনানিতে ED আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়ে জানায়, এখনও পর্যন্ত ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ থেকে ১৪৮ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। মঙ্গলবারই ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার সাড়ে ১৩ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে যার বাজারমূল্য অন্তত ২৫০ কোটি টাকা। কিন্তু সেই সম্পত্তির পরিমাণ নিয়ে এবার ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। তিনি জানান, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থা ও তার ডিরেক্টরদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তির পরিমাণ এত কম কেন? এমনকি এই টাকার উৎস নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তদন্তের গাফিলতিতে নারাজ বিচারপতি
কিন্তু তদন্তে ED এবং CBI এর ভূমিকা নিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘আপনারা যে রিপোর্ট দিচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে, এই সংস্থার নিজস্ব কোনও আয়ের উৎসই নেই। যা টাকা আসছে তা অন্য অন্য কোথা থেকে আনা হচ্ছে। কোথা থেকে ওই টাকা এসেছে, সেই বিষয়ে আপনারা খোঁজ নিয়েছেন?‘ এরপরই ইডির তদন্তকারী অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন বিচারপতি। তিনি বলেন, আপনারা যদি তদন্তের অগ্রগতি না দেখাতে পারেন তাহলে অভিযুক্তরা তো জামিন পেয়ে যাবে। কিছুতেই মামলার কোনও সুরাহা হবে না।
আরও পড়ুনঃ ফের ধামাকা! ১৪ নয়, ১৮% হারে DA পাবেন রাজ্যের কর্মীরা, সুখবর শোনাল পশ্চিমবঙ্গ সরকার
অন্যদিকে ED -র আইনজীবী আদালতে জানান, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সম্প্রতি জামিন পাওয়া মানিক ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের রক্ষাকবচ। তার জন্যই মানিককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে বিচারপতি সিংহ জানান, সুপ্রিম কোর্ট রক্ষাকবচ দিলেও মানিককে জিজ্ঞাসাবাদে তো বাধা নেই। কিন্তু পাল্টা জবাবে ED-র আইনজীবী জানান, মানিককে যে ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন, তা করা যাচ্ছে না রক্ষাকবচের জন্যই। তবে তদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। সেই কারণে হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ আরও বাড়তি সময় দিয়েছেন। জানা গিয়েছে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৩০ জুলাই।