২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে শুরু করেন সাইকেলের ব্যবসা, আজ ভারতের টেলিকম জায়েন্ট!

Sunil Bharti Mittal

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: সাফল্য কখন কীভাবে ধরা দেয় কেই বা বলতে পারে! কখনও সামান্য টাকা জোগাড় করেই হয়ে ওঠা যায় কোটিপতি। হ্যাঁ, সুনীল ভারতী মিত্তলের (Sunil Bharti Mittal) জীবনও ঠিক সেরকমই। বর্তমানে ভারতী এয়ারটেল যা বিশ্বের চতুর্থ সর্বাধিক মূল্যবান কোম্পানি, ২০২৫ সালে এসে তার বাজার মূল্য ছাড়িয়েছে ৯.২৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। তবে সেই সাম্রাজ্য শুরু হয়েছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা ধার নিয়েই। জানতে আগ্রহী হলে প্রতিবেদনটি পড়ুন।

২০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু ব্যবসা

অতীত ঘেঁটে জানা গেল, ২৩ অক্টোবর, ১৯৫৭ সালে লুধিয়ানায় জন্মগ্রহণ করেন সুনীল ভারতী মিত্তল। তাঁর বাবা সতপাল মিত্তল ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ। কিন্তু সুনীল ছোটবেলা থেকেই রাজনৈতিক জীবনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেননি। ব্যবসাকে নিজের ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখেছিলেন। সেই মতো মাত্র ১৮ বছর বয়সে বাবার থেকে ২০,০০০ টাকা ধার নিয়েই শুরু করেছিলেন সাইকেলের যন্ত্রাংশ তৈরি এবং বিক্রির ব্যবসা। এরপর তিন বছরের মধ্যেই তিনটি ইউনিট পর্যন্ত দোকান বাড়িয়েছিলেন তিনি। তবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এখানে উন্নতির কোনও সুযোগ নেই। তাই বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করেন।

এরপর ১৯৮০ এর দশকে তাইওয়ান সফরে গিয়ে মিত্তল প্রথম পুশ-বাটন ফোন দেখেন। তখনও ভারতে রোটারি ফোন প্রচলিত। সেই সুযোগেই তিনি বাজিমাত করলেন। ফিরে এসে বিটেল ব্র্যান্ড নামের পুশ-বাটন ফোন আমদানি করতে শুরু করেন। আর তা রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সরকারি দফতর থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবাই সেই ফোন ব্যবহার করতে শুরু করে। আর এটাই ছিল ভারতের টেলিকম বাজারে তাঁর প্রথম বড় পদক্ষেপ।

এরপর এয়ারটেলের জন্ম

এদিকে ১৯৯২ সালে ভারত সরকার বেসরকারি কোম্পানিগুলিকে টেলিকম লাইসেন্স দিতে শুরু করে। আর সেখানেই সুযোগ দেখলেন মিত্তল। প্রতিযোগিতা তীব্র হলেও তিনি দিল্লি সরকারের লাইসেন্স আর ১৯৯৫ সালে এয়ারটেল ব্র্যান্ডে পরিষেবা শুরু করে ভারতী সেলুলার। ভারতের মানুষ তখন মোবাইল সংযোগের জন্য মোটামুটি প্রস্তুতি ছিল। আর মিত্তল তাঁদের হাতেই সহজ, আধুনিক পরিষেবা তুলে দিলেন। এরপর ২০০৮ সালের মধ্যেই এয়ারটেল বিশ্বের অন্যতম বড় টেলিকম কোম্পানি হয়ে ওঠে, যার ১৮টি দেশে পরিষেবা ছড়িয়ে যায়।

তবে ২০১৬ সালে রিলায়েন্স জিও বিনামূল্যে ভয়েস কল এবং সস্তায় ডেটা নিয়ে বাজারে প্রবেশ করতে টেলিকম খাতে একেবারে তোলপাড় লেগে যায়। পরপর কোম্পানিগুলি বন্ধ হতে শুরু করে। ভোডাফোন আইডিয়া কার্যত হারিয়ে যায়। এমনকি এয়ারটেলও মুখ থুবড়ে পড়ে। তাদের রাজস্ব অনেকটাই কমে যায় এবং গ্রাহক সংখ্যা হ্রাস পায়। তবুও মিত্তল হাল ছাড়েননি। বরং নতুন 4G কাঠামো, ট্যারিফ কাঠামো এবং লং টার্ম লং-টার্ম স্ট্র্যাটেজির জেরে আবারও এয়ারটেল ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। সেই মতো ২০২৪ সালে এসে এয়ারটেল দেশের সবথেকে বড় মার্কেট ক্যাপ বাড়ানো কোম্পানি হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে।

মিত্তলের বিলাসবহুল ঠিকানা

জানিয়ে রাখি, অত্যন্ত সাদামাটা এবং নডাউন-টু-আর্থ ব্যক্তিত্বের জন্য পরিচিত মিত্তল। কিন্তু তিনি দেশের সবথেকে মূল্যবান এলাকায় বসবাস করেন। জানা গিয়েছে, ২০০২ সালে তিনি আমৃতা শেরগিল মার্গে প্রায় ২ একর জমিসহ একটি ব্রিটিশ-স্টাইল বাংলো কেনেন, যার বাজার মূল্য ৩৮ কোটি টাকা। আর আজ সেই বাংলোর মূল্য হয়তো কয়েকশো কোটি টাকায় দাঁড়াবে। এদিকে লুটিয়েন্স জোনে এমন ব্যক্তিগত বাংলো মাত্র ৬৫টি রয়েছে। আর এ কারণেই এই এলাকা পৃথিবীর সবথেকে দামি আবাসিক অঞ্চলের তালিকায় উঠেছে।

আরও পড়ুনঃ বিয়ের মাসে ফের বাড়ল সোনা, রুপোর দাম! আজকের রেট

বলাবাহুল্য, ব্যবসার পাশাপাশি সমাজসেবাতেও শীর্ষস্থান দখল করেছেন সুনীল মিত্তল। ভারতী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে হাজার হাজার গ্রামীণ স্কুল গড়ে তুলেছিলেন তিনি, যেখানে বিনামূল্যে আধুনিক শিক্ষাদান করা হয় ছাত্র-ছাত্রীদের। এছাড়া তিনি নিজের সম্পদের ১০ শতাংশ ভারতী ইউনিভার্সিটি তৈরিতে দান করেছেন। আর তাঁর উদ্দেশ্য হল দরিদ্র, মেধাবী শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা দেওয়া। এই কারণে ২০০৭ সালে তাকে পদ্মভূষণ পুরস্কার দেওয়া হয়। বর্তমানে এয়ারটেল একাই প্রতি অর্থবর্ষে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। তাই মাত্র ২০ হাজার টাকাতেই যে সাম্রাজ্য গড়ে তলা যায়, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ সুনীল মিত্তল।

Leave a Comment