India Hood Decode: নেহেরুর এই ৯টি ভুলের কারণে আজও পঙ্গু ভারত!

Jawaharlal Nehru
Jawaharlal Nehru

স্বাধীনতার পর জওহরলাল নেহেরু (Jawaharlal Nehru) নিয়েছিলেন এমন কিছু ভুল সিদ্ধান্ত, যেগুলো না নিলে আজ ভারতের মানচিত্র হতে পারতো আরও অনেক বড়। ভারত হতে পারতো এক অন্যতম সুপারপাওয়ার কান্ট্রি। তার কারণেই আজও “পঙ্গু” ভারত। তার দূরদর্শিতার অভাবেই আজও মাথা ঠোকেন ভারতের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রী।

কখনও তিনি প্রত্যখ্যান করেছেন জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য পদ, আবার কখনও তিনি অস্বীকার করেছেন নেপাল, বালুচিস্তানকে ভারতের সাথে যুক্ত করা নিয়ে। POK হোক বা ওমানের গদার পোর্ট – যা আজ ভারতের হতে পারতো, তা আজ সবই পাকিস্তানের হাতে। ৩৭০ ধারা হোক বা ইন্দাস চুক্তি – একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েই গেছেন তিনি।

একটি বা দুটি নয়, পর পর নয়টি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নেহেরু, যার মাশুল আজও গুনতে হচ্ছে প্রতিটি ভারতবাসীকে। আজ India Hood ডিকোডে আমরা তুলে ধরবো সেই সমস্ত অজানা সত্য, যা বরাবরই লুকিয়ে রাখা হয়েছে আপনাদের থেকে, যা জানে না অধিকাংশ ভারতীয়ই।

প্রথম সিদ্ধান্ত,

আমরা সকলেই জাতীয় গান গাই, কিন্তু পুরোটা নয়। বন্দে মাতরম আজ যতটুকু গাওয়া হয়, তা সম্পূর্ণ গানের ছোট্ট একটি অংশ মাত্র। সালটা ১৮৮২। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ উপন্যাসে প্রথমবারের জন্য প্রকাশিত হয় বন্দে মাতরম কবিতাটি। এরপর সালটা ১৯০৫। তখন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন চলছিল। সেই সময় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম “বন্দে মাতরম”-কে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব দেন, এবং কংগ্রেস অধিবেশনে গানটি গেয়ে শোনান। এরপর সালটা ১৯৩৭। কংগ্রেস Working Committee ‘বন্দে মাতরম’-কে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়।

কিন্তু, নেওয়া হয় এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত। সেখানে ঠিক করা হয়, ভারতের জাতীয় গান হিসেবে বন্দে মাতরম গ্রহণ করা হবে, তবে শুধু প্রথম স্তবক অর্থাৎ “বন্দে মাতরম, সুজলাম সুফলাম মালয়জশীতলাম”। আর বাকি অংশ—যেখানে দেবী-রূপ, শক্তি, দুর্গা ইত্যাদির উপমা রয়েছে—সেগুলো বাদ দেওয়া হয়।

কিন্তু কেন? কারণ, বাদ দেওয়া অংশে মাতৃভূমিকে হিন্দু দেবী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাসের সাথে যায় না। আর এই সিদ্ধান্তে সায় দেন জওহওরলাল নেহেরু, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, রাজেন্দ্র প্রসাদ, সর্দার বল্লবভাই প্যাটেলের মতো ব্যাক্তিরা। এই সিদ্ধান্তে সকলে সায় দিলেও, এই সিদ্ধান্তের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জওহরলাল নেহেরু। তাই আজও বন্দে মাতরমকে আমরা পুরোটা নয়, অর্ধেকটাই গাই।

শুধু তাই নয়, নেহেরু, মুসলিম লীগের সভাপতি মহম্মদ আলী জিন্নাহকে ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি জানান – “এই গানে আমরা ভারতকে একটি দেবী, মা রূপে পূজা করছি, আর এটা মুসলিমরা স্বীকার করবে না। তাই এটি জাতীয় গান হওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়।“ অর্থাৎ এখান থেকেই বোঝা যায় বন্দে মাতরম নিয়ে নেহেরুর মনোভাব কি ছিল।

দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত,

সালটা ১৯৪৭। একদিকে পাকিস্তানকে আলাদা রাষ্ট্র হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়। আর অন্যদিকে, ভারত আলাদা রাষ্ট্র হিসাবে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু সেই সময়ে কাশ্মীর ছিল স্বাধীন একটি রাজ্য। যার রাজা হরি সিং, কাশ্মীরকে ভারত বা পাকিস্তান কারোর সাথে যুক্ত করতে চাননি। কিন্তু, স্বাধীনতার পরেই সমস্ত দাবি মেনে নেওয়া হলেও, পাকিস্তান শুরু করে বিশ্বাসঘাতকতা। ২২শে অক্টোবর, হঠাৎ করেই আক্রমণ করে কাশ্মীরে। দ্রুত অনুপ্রবেশ, লুটপাট, আর হিংসা ছড়িয়ে পড়ে সারা কাশ্মীর জুড়ে।

তখন রাজা হরি সিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে চিঠি লেখেন। অনুরোধ করেন, কাশ্মীরকে ভারতের সাথে যুক্ত করার, এবং অত্যচার থামাতে সেনা পাঠানোর। ১৯৪৭ সালের ২৬শে অক্টোবর, জম্মুর অমর প্রাসাদে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চুক্তিও স্বাক্ষর করেন রাজা হরি সিং। এরপর ভারতীয় সেনারা বীরবিক্রমে পাকিস্তান সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। পিছু হটতে শুরু করে পাক সেনা। কিন্তু হঠাৎ করেই ভারতীয় সেনা যখন জিততে যাবে, পুনর্দখল করবে সম্পূর্ণ কাশ্মীরকে। ঠিক তখনই যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেন জওহরলাল নেহেরু। তিনি বলেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান এবার UN অর্থাৎ জাতিসংঘে করা হবে। জাতিসংঘ সিজফায়ারের নির্দেশ দেয়। তবে দুই দেশই কিন্তু জম্মু কাশ্মীরের মাটি থেকে নিজেদের সেনা সরায়নি। ১৯৪৯ সালের ১লা জানুয়ারি নির্ধারিত হয় একটি সিজফায়ার লাইন। আর সেই সময় জম্মু ও কাশ্মীরের যে এলাকায় পাকিস্তান সেনা অধিগ্রহণ করেছিল সেটাই আজ পাক অধিগৃহীত কাশ্মীর। তাঁর কারণেই আজও POK পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত।

তাই ইতিহাস আজও প্রশ্ন করে, ভারত যখন যুদ্ধ জেতার মুখে, তখন কেন যুদ্ধ থামিয়ে দিলেন নেহেরু?

তৃতীয় সিদ্ধান্ত,

১৯৪৭ সালেই, বালুচিস্তানের একটি অংশ খান অফ কালাত ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরু, বালুচিস্তানের ওই অংশ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। পরে পাকিস্তান ওই জায়গা আক্রমণ করে দখল করে নেয়।

হয়তো অনেকেই এর গুরুত্ব তখন বুঝতে পারেননি। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, ওই জায়গা ভারতের কাছে থাকলে, ওই জায়গা হতো গালফ দেশগুলির সাথে ভারতের যাতায়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গেটওয়ে। পাওয়া যেত ওমান-ইরান সমুদ্রপথের নিয়ন্ত্রণ। বাড়ত পশ্চিম উপকূলে ভারতের “স্ট্র্যাটেজিক অবস্থান।“ আর আজকের দিনেও আমরা জানি বালুচিস্তান ভারতের প্রতি কতটা সদয়, এবং ভারতকে কতটা সমর্থন করে।

নেহেরু এই প্রস্তাব তখন ফিরিয়ে দিয়েছিল কারণ, এই জায়গা ছিল পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তে। ফলত, বালুচিস্তানের এই অংশের সাথে ভারতের কোনো বর্ডার ছিল না। তাই প্রশাসন, সামরিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ—সবই অসম্ভব হতো। ভারত তখন সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবেও দুর্বল ছিল। আর নেহেরু ভেবেছিলেন, এই সিদ্ধান্ত নিলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ফের যুদ্ধ হতে পারে। তাই নেহেরুর সিদ্ধান্ত সেই সময়ের জন্য যুক্তিযুক্ত হলেও, দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর বলে প্রমাণ হয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।

চতুর্থ সিদ্ধান্ত,

এরপর সালটা ১৯৪৯। ১৭ই অক্টোবর কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা লাগু করা হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল জম্মু কাশ্মীরকে একটি বিশেষ রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া। যেখানে লাগু হবে না কেন্দ্র সরকারের কোনও নির্দেশ, আইন প্রয়োগ করতে লাগবে আলাদা অনুমতি। আর এই সম্পূর্ণ সিদ্ধান্তটি ছিল ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর মস্তিস্কপ্রসূত। এই আইনের ফলে জম্মু কাশ্মীরে বাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব। চলে প্রতিবেশি শত্রুদের উস্কানি। বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রেও হতে হয় একাধিক বাধার সম্মুখীন।

জানলে অবাক হবেন, এই আইন প্রণয়নের সময়ে নেহেরুকে বারবার বাঁধা দিয়েছিলেন সর্দার বল্লভভাই থেকে শুরু করে বি আর আম্বেদকর, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি সহ আরও অনেকে।

যদিও ২০১৯ সালের ৫ই আগস্ট, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কাশ্মীরের এই বিশেষ মর্যাদা সরানো হয়। একটি রিপোর্ট জানলেই, আপনি বুঝতে পারবেন কী পার্থক্য ছিল ৩৭০ ধারা আগের ও পরের কাশ্মীরে। রিপোর্ট বলছে, ২০১৮ সালের আগে জম্মু কাশ্মীরে সশস্ত্র আক্রমণের সংখ্যা ছিল ৫৯৭, সেখানে ২০২৫ সালে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ১৪৫-এ। অর্থাৎ তথ্য আপনার সামনে, তাই বিচারের সিদ্ধান্তও আপনার।

পঞ্চম সিদ্ধান্ত,

এরপর সালটা ১৯৫০। ওমানের তৎকালীন সুলতান ছিলেন সাইদ বিন তৈমুর। তিনি সেই সময়ে ভারতকে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন ওমানের গদার পোর্ট। কিন্তু, নেহেরু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে, পাকিস্তান প্রায় ৩ মিলিয়ন পাউণ্ড দিয়ে ওই জায়গা কিনে নেয় ওমানের থেকে। পরে চিনের সহায়তায় এই পোর্টকে আরও উন্নত করে তোলে পাকিস্তান।

আজ এই পোর্ট সারা বিশ্বের জিওপলিটিক্সে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে এই পোর্ট একাধিক দেশের মধ্যে তেল আমদানি-রপ্তানির অন্যতম রাস্তা। আর আজ ওই পোর্ট ব্যবহার করেই ভারতের ওপর নজর রাখে চিন।

যদি ভারত সেই সময় গদার পোর্ট নিত, তাহলে আজ ভারত জিওপলিটিক্সে কৌশলগতভাবে অনেকটা এগিয়ে থাকতে পারতো। বিশ্লেষকরা মনে করেন, কাশ্মীর বা অন্যান্য রাজনৈতিক সমস্যার ক্ষেত্রে এই পোর্ট ভারতের জন্য একটি “বর্গেনিং চিপ” হতে পারত।

আবার অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, তখন গদার পোর্টের সাথে ভারতীয় ভূখণ্ড স্থলপথে সংযুক্ত ছিল না। ফলত এটি বিচ্ছিন্ন একটি জায়গা হতো, এবং আক্রমণ হলে রক্ষা করা কঠিন হত, আর তখন ভারতের সেনা সংখ্যাও ছিল কম। তাই নেহেরু এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

ষষ্ঠ সিদ্ধান্ত,

সালটা ১৯৫০। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান, ভারতকে জাতি সংঘের স্থায়ী পদ দেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখান। তবে, মার্কিনদের লক্ষ্য ছিল – ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশকে স্থায়ী সদস্য করে সোভিয়েতদের বিরোধিতা করা।

আবার অন্যদিকে, ১৯৫৫ সালে, সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিকিতা খ্রুশ্চেভ ভারতকে এই পদ দেওয়ার জন্য সমর্থন করেন। অর্থাৎ দু’দিক থেকেই ভারতের কাছে সমর্থন ছিল জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য হওয়ার। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় হল – নেহেরু দু’বারই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

কারণ হিসাবে তিনি বলেছিলেন,

১। চীনকে বাদ দিয়ে ভারত সদস্য হলে “এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব অসম হবে। কারণ চীন বিশ্বশান্তির জন্য অপরিহার্য। তাকে বাদ দিয়ে ভারত সদস্য হলে তা নৈতিকভাবে ভুল।

২। ভারত নতুন স্বাধীন দেশ, আমাদের লক্ষ্য উন্নয়নের প্রতি হওয়া উচিত, বৈশ্বিক ক্ষমতার প্রতি নয়।

৩। নেহেরু মনে করেছিলেন, যদি মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে UN-এর সদস্য হতে হয় তাহলে ভারতকে আমেরিকা-ঘেঁষা হতে হবে। আর সোভিয়েত প্রস্তাব নিলে, সোভিয়েত-ঘেঁষা হতে হবে। তাই নেহেরু Non-Aligned Movement-এর ভিত্তি রক্ষা করতে চেয়েছিলেন।

ওই সময়ে একাধিক কারণ দেখিয়ে তিনি এই পদ না নিলেও, প্রতিবেশী চিনকে ওই পদ দেওয়ার ওকালতি করেন। আর ভারতের জায়গায় চিন হয়ে যায় UN-এর স্থায়ী সদস্য।

এরপর সময় বদলায়, মন বদলায়, দেশের প্রধানমন্ত্রীও বদলায়। অনেকেই চেষ্টা করেন UN-এর স্থায়ী সদস্য হিসাবে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করার। কিন্তু আজও সেই লক্ষ্যে অসফল ভারত। কিন্তু কেন জানেন? কারণ যখনই জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য হওয়ার জন্য ভারতের নাম প্রস্তাব করা হয়, সেই প্রস্তাবে সবার প্রথমে অসম্মতি জানায় সেই প্রতিবেশি দেশ চিন। যার জন্য ওকালতি করেছিল জওহরলাল নেহেরু। যাকে ছাড়া UN-এর সদস্য হবে না বলেছিল ভারত।

এরপর চীন, ভারতের বিরুদ্ধে ভেটো-শক্তি ব্যবহার করে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে রক্ষা করা শুরু করে, জয়েশ/লস্করদের সন্ত্রাসী হিসাবে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করে। ভেটো ক্ষমতা হল – কোনও সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব একতরফা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার।

তাই নেহেরুর এই পদক্ষেপকে – “ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক ভুলগুলির একটি” বলেও আখ্যা দেওয়া হয়।

সপ্তম সিদ্ধান্ত,

এরপর সালটা ১৯৫১। নেপালের রাজা ত্রিভুবন নেপালকে ভারতের সাথে জোড়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু, নেহেরু তা প্রত্যাখ্যান করেন। যার ফলে নেপাল একটি আলাদা দেশ হয়েই থেকে যায়। যদিও এর সত্যতা নিয়ে বহু তর্ক বিতর্ক রয়েছে।

তবে, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি নিজের আত্মজীবনী – The Presidential Years-এ এই কথা লিখেছেন। তবে এর সরকারি কোনও ডকুমেন্টেশন নেই। অনেক ঐতিহাসিক আবার বলেন এটা নিয়ে নাকি শুধু ভাবনা চিন্তা আর আলাপ আলোচনা হয়েছিল।

তবে, যদি আমরা এক মুহূর্তের জন্য এটাকে সত্যি হিসাবে ধরে নিই। তাহলে নেপাল ভারতের সাথে যুক্ত হলে ভারত আরও বড় রাষ্ট্র হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিত হত।

অষ্টম সিদ্ধান্ত,

এরপর আসে ১৯৫৪। উর্বর জমি এবং সমৃদ্ধ সম্পদে ভরপুর একটি জায়গা ছিল কাবা উপত্যকা। ঐতিহাসিকদের দাবি অনুসারে, ওই উপত্যকা ছিল ভারতের রাজ্য মণিপুরের একটি অংশ। কিন্তু, ওই সময়ে নেহেরু কাবা উপত্যকার ওপর ভারতের ঐতিহাসিক দাবি ত্যাগ করেন, এবং এটিকে মায়ানমারের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেন। যে নেহেরু, কাশ্মীর কাদের থাকবে সেই নিয়ে কাশ্মীরের জণগণের মতামত নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, এই ক্ষেত্রে সেই নেহেরুই মনিপুর রাজ্য কিংবা স্থানীয় জনগণ কারোরই কোনও মতামত নেয়নি।

জানা যায়, বর্মা অর্থাৎ মায়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়াই ছিল নেহেরুর মূল উদ্দেশ্য। নেহেরুর প্রচেষ্টা ছিল দ্বিপাক্ষিক নরম সম্পর্ক বজায় রাখা। কিন্তু, ইতিহাস বলছে মণিপুর এই সিদ্ধান্ত আজও মেনে নিতে পারেনি। এই উপত্যকা নাকি সামরিকভাবেও ভারতের জন্য উপকারী হতো।

নবম সিদ্ধান্ত,

সালটা ১৯৬০। পাকিস্তানের আয়ুব খানের সাথে ইন্দাস নদী চুক্তি সই করেন নেহেরু। এই চুক্তির ফলে ইন্দাস নদী ব্যবস্থার মোট জলসম্পদের প্রায় ৮০% (প্রায় ৪ ভাগের ৩ ভাগ) পাকিস্তানের কাছে যায়, এবং বাকি ২০% ভারতের ভাগে আসে। যার ফলে কৌশলগতভাবে ভারত অনেক পিছিয়ে পড়ে। যদিও নেহেরুর এই অসম জলবণ্টন চুক্তি কেন হল? সেই প্রশ্নের উত্তর আজও অধরা।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জওহরলাল নেহেরুর সিদ্ধান্তগুলি কতটা যুক্তিযুক্ত বলে আপনি মনে করেন? জানাতে ভুলবেন না আপনার মতামত।

Leave a Comment