প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। তাই এখন থেকেই সাধারণ জনগণের আগ্রহ বাড়াতে ভোট প্রচারে প্রস্তুতি শুরু করে ফেলেছে শাসক দল থেকে শুরু করে বিরোধীদলের একাংশ। তার উপর এইমুহুর্তে রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা শুরু হয়েছে। বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়েছে বেশ। এমতাবস্থায় নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক ধামাল বাজাল রাজনৈতিক শিবিরে। বিগত সাড়ে ১৪ বছরে রাজ্য সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
উন্নয়নের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এদিন নবান্নে উন্নয়নের ভিত্তিতে রাজ্য সরকারের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, “ক্ষমতায় আসার আগে জনগণকে আমরা কী বলেছিলাম, আর এই সময়ে আমরা কী কী কাজ করেছি, সেটা মানুষকে জানানো আমাদের নিজেদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে মনে করি। তাই এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করা হল।” প্রশাসনিক রিপোর্ট অনুযায়ী এইমুহুর্তে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথীর মতো একাধিক জনপ্রিয় প্রকল্পগুলি। সরকার মনে করছে, এই প্রকল্পগুলি সাধারণ মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।
বিরোধীদের তথ্যভিত্তিক জবাব শাসকদলের
শাসকদলের শীর্ষস্তরের একাংশ মনে করছে, গত কয়েক বছরে সমাজমাধ্যমে ও জাতীয় রাজনৈতিক মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে পরিকল্পিত নেতিবাচক প্রচার চালানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, শিল্পায়ন বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধীরা তোপ দাগছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যভিত্তিক জবাব দিতে এই রিপোর্ট কার্ডই সরকারের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, মুখের কথায় নয়, সরকারি নথিপত্রই বিরোধী অভিযোগের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য উত্তর। ২০১১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, কৃষক বন্ধু, পড়ুয়াদের ক্রেডিট কার্ড-সহ মোট ৯৪টি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে সরকার। এদিনের বৈঠকে সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি।
কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে মুখ খুললেন মমতা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন যে, “গ্রামীণ সড়ক, গ্রামীণ আবাস যোজনা,১০০ দিনের কাজ এই প্রকল্পগুলিতে আমরা পর পর চারবছর এক নম্বরে ছিলাম। এদিকে কেন্দ্রের কাছে বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছে বাংলা। জিএসটি বাবদ কেন্দ্র রাজ্যেরও টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। তারপরও রাজ্যের প্রাপ্য প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজস্ব উদ্যোগে আমরা কর্মশ্রী, বাংলার বাড়ির মতো প্রকল্পগুলি চালু রেখেছি। সেই কারণে আরও বাংলার টাকা বন্ধ করে রেখেছে কেন্দ্র।” এরপরই মোদি সরকারকে বিঁধে মমতা জানান, “আশা করব, আমাদের প্রাপ্য টাকাটা দেবেন। ইলেকশন তো চলে এল। আর কবে টাকা দেবেন? ফেব্রুয়ারিতে দেবেন? যাতে কাজ করতে না পারি। তারপর আবার টাকাটা ফেরৎ নিয়ে নেবেন। চালাকিটা আমরাও বুঝি!”
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে আসছিল ওরা, BSF ধাওয়া দিতেই পগারপার! উদ্ধার বিপুল জাল টাকা
প্রসঙ্গত, নবান্নে উন্নয়নের বৈঠকের অনুষ্ঠান শুরুতে ভিডিওর মাধ্যমে ১৪ বছরে সরকারের ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ তুলে ধরা হয়। আর সেক্ষেত্রে উন্নয়নের পাঁচালীর ওপর সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইমন চক্রবর্তী। যেহেতু বিরোধী দল বিজেপি মমতার নেতৃত্বাধীন সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, প্রশাসনিক অপব্যবহার নিয়ে প্রচার শুরু করেছে। তাই জেলা ও বুথ স্তরের কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে এই রিপোর্ট ব্যবহার করে মানুষকে ২০১১ সালের আগের পরিস্থিতি ও বর্তমান বাংলার তুলনা বোঝাতে হবে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে, নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ ২০২৬-এর ভোটের আগে রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন স্ট্র্যাটেজি বলা যায়।