প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে বেশ সরগরম রাজ্য রাজনীতি। তার উপর চলছে SIR প্রক্রিয়া বা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন কর্মসূচি, যাকে নিয়ে নানা ঘটনা ঘটছে রাজ্যে। কোথাও দেখা গিয়েছে ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় সুইসাইড করেছে তো কেউ আবার SIR এর কাজের চাপে আত্মহত্যাাও করেছে। এবার ঘটল আরেক ঘটনা। পশ্চিম বাংলার আসিবাসীরা এবার এনুমারেশন ফর্ম পূরণ (SIR Process) করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। আর তাতেই মাথায় হাত পড়ল প্রশাসনের।
SIR-এ অংশ নিতে নারাজ আদিবাসীরা
SIR প্রক্রিয়ায় এনিউমারেশন ফর্ম জমা করার ক্ষেত্রে হাতে বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। কিন্তু এখনও দেখা যাচ্ছে এনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করতে চাইছে না বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার বেশ কিছু আদিবাসী পরিবার। দুই জেলাতেই ওই পরিবারগুলিকে বোঝানোর কাজ শুরু করেছে প্রশাসন, প্রচারে নেমেছে তৃণমূলও। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের মত বদলানো যায়নি। আর তাতেই কালঘাম ছুটছে প্রশাসনের। আদিবাসীদের স্পষ্ট দাবি, তাঁরা এসআইআরে অংশই নেবেন না। যার ফলে বারংবার বাঁকুড়ার রানিবাঁধের একাধিক গ্রামে গিয়ে কার্যত খালি হাতে ফিরতে হয়েছে প্রশাসন এবং বুথ লেভেল অফিসারদের। একই চিত্র দেখা গিয়েছে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানেও।
নাগরিক প্রমাণের দায় নেই আদিবাসীদের!
সম্প্রতি বাঁকুড়ার রানিবাঁধ বিধানসভার ভেদুয়াশোল ও মুচিকাটা গ্রামের ভোটারদের একাংশ এবং পুরুলিয়ার বান্দোয়ান বিধানসভার কুকড়ুডাবর, ধবনী, পুকুরকাটা, জোড়াশাল, বড়কথা, কালুডি, চিরুডি, কায়রা-সহ গ্রামের ভোটারদের বড় অংশ ‘সমাজবাদ অন্তঃরাষ্ট্রীয় মাঝি সরকার’-এর দাবি করে চলেছেন প্রশাসনের কাছে। তাঁদের যুক্তি, ১৯৫১ সালের রাষ্ট্রপুঞ্জের ধারা অনুযায়ী, তাঁরা ভারতের মূলবাসী। তাই তাঁদের আলাদা করে ভোটার বা নাগরিক হিসাবে প্রমাণের কোনও দায় নেই। এবার সেই নিয়ে ঊর্ধ্বতনকে বিএলওরা বিষয়টি জানালে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ আধিকারিকেরা রানিবাঁধ বিধানসভার দুটি গ্রামে গিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন: কতদিন ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? স্পষ্ট জবাব দিলেন জয়শঙ্কর
পশ্চিমী আদিবাসীদের এই নেতিবাচক চিন্তাধারা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি বেশ চিন্তায় পড়েছে। তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার এসটি সেলের সভাপতি গঙ্গারাম মুর্মু জানিয়েছেন, ‘‘পুরুলিয়ার বান্দোয়ানেও প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্তরাষ্ট্রিয় মাঝি সরকার কিসান। এদের মূল কার্যালয় ছত্তীসগঢ়ে। এখানকার দরিদ্র আদিবাসী মানুষদের সেখানে নিয়ে গিয়ে তাঁদের শিক্ষার অভাবকে কাজে লাগিয়ে এমন ভাবে মগজধোলাই করা হয়েছে যে, তাঁরা এখন দেশের সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকেই অস্বীকার করছেন। যে বা যাঁরা সাধারণ মানুষকে এমন ভুল বোঝাচ্ছেন, প্রশাসন তাঁদের চিহ্নিত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’