আগে ইউনিয়ন রুমে, তারপর রক্ষীর ঘরে! কসবা কলেজের নারকীয় ঘটনার বিবরণ দিলেন নির্যাতিতা

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: রাজধানীর এক নামিদামি আইনি কলেজে ধর্ষিতা এক ছাত্রী! হ্যাঁ, তিলোত্তমা কান্ডের পর এবার ধর্ষণের মর্মান্তিক অভিযোগ উঠল কলকাতার কসবা এলাকায় (Kasba Rape Case)। গত 25 মে ঘটনাটি ঘটলেও ভয় এবং হুমকির কারণে প্রায় মাস খানেক পর 26 জুন পুলিশের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছে ওই ধর্ষিতা ছাত্রী। 

এমনকি তার বয়ান এবং অভিযোগে উঠে এসেছে হাড় হিম করা তথ্য। কলেজের এক প্রাক্তন ছাত্র নেতা এবং তার দুই সহযোগী মিলেই এই নারকীয় কান্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, ভিডিও রেকর্ডিং-এর হুমকি, মানসিক অত্যাচারের অভিযোগও উঠছে। আর ইতিমধ্যে পুলিশ ওই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে এবং তদন্ত চলছে।

কীভাবে ঘটল ঘটনা?

সূত্রের খবর, গত মাসের 25 তারিখ দুপুর 12:00 টার সময় কলেজে পরীক্ষার ফর্ম জমা দিতে আসে ওই ছাত্রী। কাজ শেষে ইউনিয়ন রুমে ঢুকতে সেখানে উপস্থিত হয় অভিযুক্ত জে, যাকে ওই নির্যাতিতা সম্বোধন করেছেন। তারপর বিকেল 4:00 টের সময় ইউনিয়ন রুমে অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা থাকলেও ধীরে ধীরে সবাই চলে যায়। আর ছাত্রীটি বেরোতে গেলে জে তাকে আটকে দেয় এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কথা বলে ইউনিয়ন রুমে ডেকে নিয়ে যায়।

এরপর সন্ধ্যা 6:10 মিনিট নাগাদ ইউনিয়ন রুমে ওই ছেলেটি ছাত্রীটিকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। ছাত্রীটি তার বয়ফ্রেন্ডের কথা উল্লেখ করে প্রস্তাব নাকোজ করে দেয়। আর সে মুহূর্তে জে খুব রেগে যায়। এরপর সে হুমকি দেয় যে, তোমার বয়ফ্রেন্ডকে খুন করে দেব, পরিবারকে পুলিশেও ধরিয়ে দেবো। হ্যাঁ, এমনই হুমকির কথা মেয়েটির অভিযোগে উঠে আসে।

এরপর সন্ধ্যা 7:30 মিনিট নাগাদ ইউনিয়ন রুম থেকে বেরোতে চাইলে জে’র দুই সহযোগী এম এবং পি, যাদেরকে আধ্যক্ষরে করে প্রকাশ করেছে ওই ধর্ষিতা, তারা দরজা বন্ধ করে দেন। আর ছাত্রীটি চিৎকার করে উঠলে তাকে জোর করে কলেজের রক্ষিদেরর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রক্ষিকে বাইরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর অভিযোগ ওঠে, সেখানে জে ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করেন এবং এম ও পি বাইরে পাহারা দেয় ও সব দেখে।

সবথেকে বড় ব্যাপার, মেয়েটি প্রতিরোধ করার জন্য মাথায় জোরে আঘাত করা হয় এবং হকির স্টিক দিয়ে মারধরেরও চেষ্টা করা হয়। এরপর একসময় অর্ধমৃত অবস্থায় মেয়েটি পড়ে থাকে আর জে তাকে ধর্ষণ করে উঠে যায়। তারপর রাত 10:50 মিনিট নাগাদ ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রীটি কোনরকমে বেরিয়ে আসে। 

তবে জে তাকে বিবস্ত্র অবস্থার দু’দুটি ভিডিও দেখিয়ে চাপ দেওয়ারও চেষ্টা করে, যাতে মেয়েটি মুখ না খোলে। তারপর জে তাঁর বাবাকে এসে নিয়ে যেতে বলে এবং সব ঘটনা খুলে বলে। তবে বলে রাখি, ছেলেটি ধর্ষিতাকে এও বলে যে, তার গার্লফ্রেন্ডের পর যদি কাউকে সবথেকে বেশি ভালোবাসে, তাহলে সেটা নাকি ওই মেয়েটি।

অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কী পরিচয় পাওয়া গেল?

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, জে বলে যাকে মেয়েটি সম্বোধন করেছে, সে কলেজের প্রাক্তনী এবং স্থানীয় এক ছাত্র সংগঠনের নেতা। এমনকি তার প্রচন্ড প্রভাবও রয়েছে বলে অভিযোগ। আর এম এবং পি বলে যাদেরকে সম্বোধন করেছে, তারা কলেজের বর্তমান ছাত্র এবং জে’র খুব ঘনিষ্ঠ। ইউনিয়ন রুমে সবসময়ই তাদেরকে দেখা যায়। সূত্রের খবর, পুলিশ তালবাগান ও পার্ক সার্কাস এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। আর 1 জুলাই পর্যন্ত তাদেরকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশও দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

আরও পড়ুনঃ গ্রাহকদের বিরাট ঝটকা! বেসরকারিকরণের দিকে এগোচ্ছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক

তবে এই অভিযোগের পর ছাত্রীটিকে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে মেডিকেল পরীক্ষাও করা হয়। আর সিসিটিভি ফুটেজ তল্লাশি করে দেখছে পুলিশ। এমনকি ইউনিয়ন রুম এবং রক্ষির ঘরের কাছে কোনও ক্যামেরা থাকলে, সেই ভিডিও ডিলিট করা হয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছে, ঘটনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সত্য প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাশাপাশি কলেজের মহিলা চেয়ারপার্সন লিনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, খুব দ্রুত তদন্ত করে বিচার করতে হবে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। ছাত্র সংগঠনগুলি কলেজের গেটে বর্তমানে বিক্ষোভ করছে। তাদের দাবি, যেকোনো মূল্যে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।

Leave a Comment