প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত ৬ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বিধায়ক হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir)। আর তার জন্য উপচে পড়ল দানপাত্র। মোট ১১টি ট্রাঙ্ক ও বস্তায় জড়ো করা হয়েছে দানের টাকা। শুধু ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে ২ কোটি ১০ লক্ষের বেশি টাকা, দাবি হুমায়ুন কবীরের। টাকার পরিমাণ এতটাই বেশি যে টানা তিন দিন ধরে হুমায়ুনের দানবাক্সে পড়া টাকা মেশিনে গোনা চলছে। নজরে আসছে অ্যাকাউন্টে প্রচুর বিদেশি মুদ্রা ঢুকেছে। আর এই আবহে তাই বিভিন্ন দেশ থেকে তাঁর মসজিদ ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে বিদেশি মুদ্রা ঢুকতে থাকায় হুমায়ুনকে তলব করল স্টেট ব্যাঙ্ক।
অনুদানে বিদেশি মুদ্রা নিয়ে বিতর্ক!
১২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে যে অংশে হুমায়ুন কবীরের প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদ তৈরি করা হবে তার জন্য রাখা দানবাক্সে পাহাড় সমান টাকার স্তুপের মধ্যে অসংখ্য বিদেশি মুদ্রা জমা পড়েছে। সেখানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়েল, মালয়েশিয়ার টাকা, বাংলাদেশের টাকা। বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা জমা পড়েছে দান বাক্সে। তাই সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ঢুকতে শুরু করায় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মঙ্গলবার বিতর্কিত বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে তলব করল স্টেট ব্যাঙ্ক। এদিন হুমায়ুন কবীর জানান, ‘‘কাতার, সৌদি আরব, বাংলাদেশে থেকেও মসজিদ নির্মাণে প্রচুর বিদেশি অর্থ আসছে, যা স্টেট ব্যাঙ্কের অনুমোদিত আইন ও লিমিট অতিক্রম করে গিয়েছে। তার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে প্রয়োজনীয় চিঠি পাঠানো হচ্ছে।’’
মসজিদের অনুদান নিয়ে রাজনৈতিক তরজা
মুর্শিদাবাদের বাবরি মসজিদের নির্মাণের জন্য শুরু থেকেই রাজনৈতিক চর্চা চরমে পৌঁছে গিয়েছিল। শেষে দল থেকে হুমায়ুন কবীরকে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। আর এবার হুমায়ুনের তহবিলে বিদেশি অর্থ আসা নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে জোর তরজা শুরু হয়েছে। সুকান্ত মজুমদার ও শমীক ভট্টাচার্য এই বিদেশি অর্থ আসা নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধেছেন। দুজনেই তদন্ত চেয়েছেন। এদিকে পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কটাক্ষ,”বিদেশি অর্থ আসা নিয়ে যদি কোনও নির্দিষ্ট অনিয়মের তথ্য ও প্রমাণ সুকান্ত-শমীকদের হাতে থাকে, তবে তারা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিগুলিকে জমা দিন। এজেন্সি তদন্ত করে দেখবে।”
আরও পড়ুন: জানুয়ারিতে শুরু গঙ্গাসাগর মেলা! নিরাপত্তা নিয়ে নবান্নে উচ্চপর্যায়ে বৈঠক ডাকলেন মমতা
প্রসঙ্গত, বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন, তার আগে মুর্শিদাবাদের বাবরি মসজিদের নির্মাণকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে তা যে বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে তা বলা বাহুল্য। যদিও সাসপেন্ডেড তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবীর আগেই জানিয়েছিলেন যে আগেই জানিয়েছেন, ২২ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের টেক্সটাইল মোড়ে তাঁর নতুন দল আত্মপ্রকাশ করবে। এবং সেই দল নিয়েই ২৬-এর বিধানসভা ভোটে দারুন বাজিমাত করবে। তৃণমূল বা বিজেপি কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। তাঁর স্পষ্ট কথা, ১৩৫টি আসনে লড়বে তাঁর দল, যার মধ্যে থাকবে ৯০টি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্র।