নিতে চেয়েছিল KKR, ছিনিয়ে নেয় CSK! সেই কার্তিক শর্মার জীবন সংগ্রামের কাহিনী কাঁদিয়ে দেবে

Chennai Super Kings player Kartik Sharma Untold Story

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: শূন্য পকেটে আসা ক্রিকেটারকে কোটিপতি বানিয়েছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চ। এই মঞ্চ থেকেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন এমন উদাহরণও অহরহ। সেই IPL ই এবার ভাগ্য বদলে দিল রাজস্থানের হয়ে খেলা এক অনামী ক্রিকেটের। হ্যাঁ, মঙ্গলবার মিনি নিলামের মঞ্চ থেকে মাত্র 30 লাখের বেস প্রাইসে আসা আনক্যাপড প্লেয়ার কার্তিক শর্মাকে 14 কোটি 20 লাখ টাকায় কিনে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস (Kartik Sharma Untold Story)। শোনা যায়, এই কার্তিককেই নজরে রেখেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। তবে নিলাম টেবিলে নিজেদের কোষাগার ভেঙে শর্মাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ধোনির দল।

CSK দলের নতুন যোদ্ধা কার্তিকের অতীত ঘাঁটলে চোখ ভিজবে!

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের নিলাম টেবিল থেকেই যে কোটিপতি হয়ে যাবেন সে কথা কোনও দিনও স্বপ্নেও কল্পনা করেননি, রাজস্থানের হয়ে খেলা কার্তিক শর্মা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ছেলেবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি প্রবল মনোযোগী ছিলেন কার্তিক। পরিবারও ছেলের পছন্দে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কোচেরাও স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলতে উৎসাহ যোগাতেন কার্তিককে। এইতো কিছু মাস আগেই স্থানীয় 50 ওভারের ম্যাচে ত্রিশতরান করে সকলকে অবাক করে দিয়েছিলেন কার্তিক শর্মা। কে জানতো, মঙ্গলবার তাকেই 14 কোটি 20 লাখ দিয়ে দলে টেনে নেবে চেন্নাই!

জানা যায়, প্রথম জীবনে বাবা মনোজ কুমারই ছিলেন কার্তিকের কোচ। তিনিই পরবর্তীতে রাজস্থানের ভরতপুরের একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করেছিলেন কার্তিককে। জানা যায়, ছেলেবেলায় নিজেও একজন বড় মাপের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন কার্তিকের বাবা মনোজ। তবে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে না পারায় ছেলের মধ্যে দিয়েই সুখ খুঁজতে থাকেন তিনি। তাই প্রথম থেকেই ছেলের পিছনে একেবারে আধা জল খেয়ে লেগে পড়েছিলেন মনোজ বাবু। ছেলে কার্তিককে দীপক চাহারের বাবা লোকেন্দ্র সিংহ চাহারের অ্যাকাডেমিতে পাঠালে প্রথম দেখাতেই কার্তিককে পছন্দ হয়ে যায় দীপকের বাবার।

পরবর্তীতে তিনিই কার্তিকের আগামী জীবনের রাস্তাটা সহজ করেছিলেন। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দীপক চাহারের বাবা জানিয়েছেন, “রঞ্জি ট্রফিতে শেষ ম্যাচে শতরান করেছে ও। কার্তিকের ব্যাটে বল লাগলে বোলারদের আর রক্ষে নেই। 50 ওভারের ক্রিকেটে কয়েকদিন আগেই 300 রান করেছে ও। ওর কব্জিতেও প্রচন্ড জোর।” এদিন দীপকের বাবা এও বলেন, “দীপক ওকে অনেক আগেই পরামর্শ দিয়েছিল ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেট কিপিং করার। সেজন্য কিপিং গ্লাভসও উপহার দিয়েছিল। বলেছিল শুধুমাত্র ব্যাটিং করলে এগিয়ে যাওয়াটা কঠিন।”

সংসারে প্রবল অভাব সত্ত্বেও ক্রিকেটে কোনও রকম ফাঁকি দেননি কার্তিক। সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে চেন্নাই দলে সুযোগ পাওয়া শর্মা জানিয়েছেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমার জীবনে এমন বদল ঘটলো! আমার বাবা এতে প্রচন্ড খুশি।” এদিন কার্তিক নিজের অতীত ঘাটতে গিয়ে বলেন, “ছোটবেলায় আমার বাবা আমার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। একটা সময় ছিল, ভরতপুর থেকে জয়পুর খেলতে যাওয়ার জন্য বাসের ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য থাকত না। সেই সময় ভরতপুর জেলা সংস্থা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। রাজস্থান ক্রিকেট সংস্থাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।”

কার্তিক বলেন, “ছোট থেকেই পরিবারের অভাব দেখেছি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে থেকে লড়াই করাটা কতটা কঠিন আমি জানি। সংসার চালাতে সমস্যা হতো ক্রিকেট তো দূর কি বাত.. তাও চেষ্টা করেছি!” একটা সময় যেখানে বাসে প্রতিদিনের ভাড়া দেওয়ার টাকা থাকত না সেখানে আজ 14 কোটি 20 লাখ টাকার মালিক। এটা যেন কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না, কার্তিকের। বললেন, “আমি চেন্নাই দলে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। তবে এভাবে একদিন এই স্বপ্নটা পূরণ হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। আমি মাহি স্যারের বড় ভক্ত। তাঁর মতোই বড় ছক্কা মারার চেষ্টা করি। কিপিং এর ক্ষেত্রেও উনি আমার অনুপ্রেরণা। তাঁর সাথে দেখা করার জন্য মুখিয়ে আছি।”

অবশ্যই পড়ুন: বিশ্বে রয়েছে মাত্র ১২টি! মেসিকে বিশেষ ঘড়ি উপহার আম্বানির, দাম ও বৈশিষ্ট্য চমকে দেবে!

উল্লেখ্য, 13 বছর বয়স থেকেই রাজস্থানের ক্লাব ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন কার্তিক শর্মা। জোরে বোলারদের সামনে ব্যাট উঁচিয়ে রানের বন্যা বইয়ে দিতে সিদ্ধহস্ত তিনি। বয়স 14 হওয়ার পর ক্লাব ক্রিকেটে সিনিয়রদের বিরুদ্ধে একাই 180 রান করেছিলেন এই কার্তিক। সেদিনই রাজস্থানের নির্বাচকরা দেখতে এসেছিলেন তার ম্যাচ। তারপরই রাজস্থান দলে জায়গা হয় এই ভারতীয়র। না বললে নয়, কার্তিক আজ পর্যন্ত তাঁর কেরিয়ারে মোট 12টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। সেই আসরে খেলোয়াড়ের রান 334।

Leave a Comment