India Hood Decode: ইউনুস নাকি অন্য কেউ? বাংলাদেশে এই ভয়ঙ্কর তান্ডবের আসল মাস্টারমাইন্ড কে?

Bangladesh Massacre
Bangladesh Massacre

ওসমান হাদি – যার মৃত্যুতে সারা দেশ জুড়ে শুরু হল তাণ্ডব। জ্বলতে শুরু করল গোটা বাংলাদেশ (Bangladesh Massacre)। জ্বলল সংবাদপত্রের অফিস, লুট হল একের পর এক জিনিস। তাণ্ডব চালানো হল একের পর এক বাসভবনে। পিটিয়ে, জ্বালিয়ে খুন করে দেওয়া হল এক হিন্দু যুবককে।

তবে এখানেই শেষ নয়, হামলা চলল ভারতেও! সাথে শুরু হল ভারত বিদ্বেষী উস্কানি! কখনও বলছে কেড়ে নেওয়া হবে ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে, তো আবার কখনও বলছে তৈরি হবে গ্রেটার বাংলাদেশ!

কিন্তু, ঠিক ভোটের আগেই হঠাৎ করে ফের কেন আগুন জ্বলল বাংলাদেশে? হঠাৎ কেনই বা এত ভারত বিদ্বেষী হয়ে উঠল বাংলাদেশ? সত্যিই কি কোনও গণঅভ্যুত্থান নাকি এর পিছনে রয়েছে বড় কোনও ষড়যন্ত্র? এই অরাজকতার পিছনে কে আসল মাস্টারমাইন্ড, ইউনুস নাকি অন্য কেউ?

আজ India Hood ডিকোডে আমরা তুলে ধরবো সেই সমস্ত তথ্য!

ইউনুস আসার পরেই শুরু ভারত বিরোধিতা!

সালটা ২০২৪। সারা বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয় গণ অভ্যুত্থান। আর তারপরেই পতন হয় হাসিনা সরকারের। দেশ শাসনের জন্য গঠিত হয় অন্তবর্তী সরকারের। সেই সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা পদে বসেন মহম্মদ ইউনুস। আর এর পর থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশে একের পর এক ভারতবিরোধী কার্যকলাপ। সেই নিয়ে আমাদের ইতিমধ্যেই একটি বিস্তারিত ভিডিও রয়েছে। আপনি আই বাটনে ক্লিক করে দেখতে পারেন।

সমস্যার শুরু!

কিন্তু ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করেই সারা বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয় বিশাল আকারের ভারত বিরোধিতা। কিন্তু এর শুরুটা হয়েছিল চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে। যখন পাকিস্তান থেকে তুরস্ক প্রত্যেকের হাতে আর্ট অফ ট্রায়াম্ফ তুলে দেন মহম্মদ ইউনুস। যে বইয়ের প্রচ্ছদে দেখানো হয়েছে একটি বৃহৎ বাংলাদেশের ম্যাপ। যেখানে ভারতের উত্তর পূর্বের একাধিক অঞ্চলকে বাংলাদেশের ম্যাপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে অসম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরাও অন্তর্ভুক্ত। তবে এটা কিন্তু কোনও ভুল নয়, ইচ্ছাকৃত ঘটনা।

ওসমান হাদির ওপর হামলা!

আর এরপর থেকেই বাংলাদেশীদের মনে ঢুকে যায় গ্রেটার বাংলাদেশের স্বপ্ন। আর বাড়তে শুরু করে ভারত বিদ্বেষী মনোভাব। গ্রেটার বাংলাদেশ তৈরি যে তাদের পরিকল্পনার অংশ সেটা ফের প্রমাণিত হয়ে যায় ১২ই ডিসেম্বর। কারণ সেইদিন ওই একই গ্রেটার বাংলাদেশের ম্যাপ শেয়ার করেন দেশের অন্যতম যুব ছাত্র নেতা ওসমান হাদি।

কিন্তু, হঠাৎ করেই ওই দিনই জুম্মার নামাজের পর ঢাকার বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকা দিয়ে আসার সময় দুজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যাক্তি হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। দুষ্কৃতিদের গুলিতে হাদির মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায়। অন্যদিকে নিখোঁজ হয়ে যায় দুষ্কৃতিরা।

আর এরপরেই বাংলাদেশ অভিযোগ করে যে বা যারা এই  কাজ করেছে তারা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। আর বাংলাদেশ থেকে ভারত সরকারকে, হাদির হত্যাকারীদের ফিরিয়ে দিতে বলা হয়। যদিও ওই দেশেরই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, আমাদের কাছে এরম কোনও প্রমাণ নেই যে সেই দুই হত্যাকারী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। পরবর্তীতে সেই দুই আততায়ীর নাম প্রকাশ্যে আসে। একজন প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এবং তার সহযোগী মোটরবাইক চালক আলমগীর। তবে ভারত এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে। ভারতের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা কখনোই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

শুরু হয় ভারত বিরোধিতা!

আর এরপর থেকেই দেখা যায় সারা বাংলাদেশে শুরু হয় একের পর এক ভারত বিরোধী কার্যকলাপ। চলতে থাকে ভারত বিদ্বেষী শ্লোগান, একের পর এক মিছিল। এক প্রকার সারা বাংলাদেশে এমন মনোভাব ছড়ানো শুরু হয় যে – ভারত তাদের শত্রু আর ভারত হিন্দুদের দেশ। তাই বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর বেড়ে যায় অত্যাচার।

দিনটা ১৫ই ডিসেম্বর, বিজয় দিবসের আগের দিন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পোড়ানো হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি। কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল – “ভারত কেন বাংলাদেশের বিজয় দিবসে আনন্দ করবে!” ভাবতে পারছেন যে দেশকে ভারত স্বাধীন করল,আজ তারাই এমন কথা বলছে!

ওই দিনই ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির অর্থাৎ NCP-র মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলে, “যারা আমার দেশের সার্বভৌমত্ব, ভোটাধিকার, মানবাধিকার, এদেশের সন্তানদের বিশ্বাস করে না, তাদের আশ্রয়, ট্রেনিং দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে উস্কে দিচ্ছেন – আমরাও বলে দিচ্ছি আপনাদের থেকে যারা স্বাধীনতা চায় তাদেরও আশ্রয় দিয়ে সেই সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবো।“ অর্থাৎ এক কথায় ভারতের মধ্যে থেকে যারা ভারত ভাঙতে চায়, সেই সকল সংগঠনকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে ভারত ভাগ করা হবে।

এছাড়াও, ওইদিন আরও একটি জঘন্য কাজ করে বাংলাদেশের নৌসেনা। ধাক্কা মারে ভারতীয় মৎস্যজীবিদের একটি ট্রলারে, যার ফলে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। যার মধ্যে নিখোঁজ এখনও ৩ জনের দেহ।

ভারতের ওপর হামলা!

এরপর দিনটা ১৭ই ডিসেম্বর। ভারতের ওপর হামলা করার চেষ্টা করা হয় বাংলাদেশের ইসলামি কট্টরপন্থীদের তরফ থেকে। কী অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন এটা কখন হল? আসলে ওইদিন বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনের সামনে ব্যারিকেড ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে বেশ কিছু কট্টরপন্থীরা। দেয় ভারত ভাগের ডাক, দেয় সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করার ডাক।

আপনাদের জানিয়ে দিই, কোনও দেশে অন্য দেশের হাই কমিশন থাকলে সেটা কিন্তু সেই দেশের জায়গা হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে, বাংলাদেশের যতটা জায়গা জুড়ে ভারতের হাই কমিশন হোক বা দূতাবাস অবস্থিত তা কিন্তু ভারতের জায়গা। আর হাই কমিশনে হামলার চেষ্টা মানে তা কিন্তু ভারতে হামলার চেষ্টা! এটা কিন্তু আমরা বলছি না, বলছে ভিয়েনা কনভেনশনের ১৪ নম্বর ধারা।

ভারতের প্রতিক্রিয়া!

তবে এসব ঘটনা দেখে চুপ নেই ভারতও। উল্টে ভারতের তরফ থেকেও নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। যেমন –

প্রথমত, ভারতের তরফ থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ডাকা হয় একটি ব্যখ্যা চাওয়ার জন্য। ব্যাখ্যা চাওয়া হয় – যে ভারতের সাথে এত শ্ত্রুতা কেন বাংলাদেশের? কেন ভারতের প্রতি এত রাগ বাংলাদেশি জনতার?

দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তাগত কারণ দেখিয়ে ১৭ই ডিসেম্বর দুপুর ২টো থেকে ঢাকার মধ্যে ভারতের জন্য মূল ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর খুলনার আরও ২টি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মৃত্যু হয় ওসমান হাদির!

অন্যদিকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসারত ছিল ওসমান হাদি। কিন্তু, ১৮ই ডিসেম্বর রাতে মৃত্যু হয় তাঁর। ফলে ফের সারা দেশে দেখা যায় বিক্ষোভ। ভারতের হাই কমিশনে হয় হামলা এবং ইটবৃষ্টি। জনতার রাগের কারণ – ভারতেই নাকি যেমন আশ্রয় দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনাকে, তেমনই আশ্রয় দেওয়া হয়েছে ছাত্র নেতা হাদির আততায়ীদের। এরপরেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয় প্রথম আলো থেকে শুরু করে দ্যা ডেইলি স্টারের অফিস। পুড়িয়ে দেওয়া হয় হাসিনার বাসভবন। আগুন দেওয়া হয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটেও। লুটে নেওয়া হয় দামী মনিটর থেকে কম দামী ফুলকপিও। শুধু তাই নয়, এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে, গাছে ঝুলিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ করা হয় সে নাকি নবীর বিরুদ্ধে কথা বলেছে।

অরাজকতার আসল কারণ!

কিন্তু, যতই ভারতের বিরোধিতা করুক বাংলাদেশ। আসল সত্যটা কিন্তু অন্য!

২০২৪ সালে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জাতীয় উপদেষ্টা হয়ে দেশ চালানো শুরু করেন মহম্মদ ইউনুস। যার মেয়াদ শেষ হবে আর আড়াই মাসের মধ্যেই।

কারণ, ২০২৬ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি, সারা দেশ জুড়ে হওয়ার কথা জাতীয় নির্বাচন। আর তার সাথেই হবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নেরও গণভোট। আর সেই ভোটের পরেই হয়তো ইউনুসের হাত থেকে ক্ষমতা চলে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সেটা আমেরিকাও কোনভাবেই চায় না। কারণ, তারাই ইউনুসকে বাংলাদেশের মসনদে বসিয়েছিল নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য।

তাই আমেরিকা ও ইউনুস চাইছে এমন কিছু ঘটনা – যাতে এটা প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশে এখন ভোটের অবস্থা নেই। আর বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব তৈরি করা। যাতে ভোট না করাতে হয়, এবং ইউনুসই ক্ষমতায় থাকতে পারে।

আর সেই জন্যই বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ভারতের বিরোধিতা করছে বাংলাদেশ। কখনও সম্পর্ক বাড়াচ্ছে পাকিস্তানের সাথে, কখনও হুমকি দিচ্ছে ভারতের বিচ্ছন্নতাবাদী গ্রুপেদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার। আবার কখনও শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশের মাটি দেওয়া হচ্ছে আমেরিকানদের, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে মারার জন্য।

মেজর গৌরব আরিয়ার মতে, বাংলাদেশের কিছুই করার সাহস নেই। ভোটের আগে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ভারতের বিরোধিতা করছে। তাই ভোটের আগে আরও এমন কিছু ঘটনা বাংলাদেশে দেখা যাবে। আর নাহলে, কোনও ঘটনা ঘটলে তার দায় চাপিয়ে দেওয়া হবে ভারতের ওপর।

অন্যদিকে আরও একটি তথ্য বলছে, মহম্মদ হাদি এই ভোটে একজন স্বাধীন প্রার্থী হিসাবে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর দিনে দিনে তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যা একটি হুমকি হিসাবে দেখছিলেন ইউনুস! কারণ ইউনুসের সম্পর্ক এনসিপি আর জামাত নেতাদের সাথে!

এক্তু ভেবে দেখলে বুঝতে পারবেন, হাদির মৃত্যুর পিছনে আওয়ামী লীগ বা ভারতের হাত থাকতে পারে না। কারণ একদিকে যে দল দেশের নির্বাচনে লড়বে না, যাদের ইতিমধ্যেই ব্যান করা হয়েছে, তারা কেন হাদিকে মারতে যাবে? অন্যদিকে ভারতও বা কেন একজন উঠতি ছাত্রনেতাকে মারতে যাবে? তাই পরোক্ষভাবে আঙুল যাচ্ছে কিন্তু ইউনুসের দিকেই।

তবে ভবিষ্যতে কী হবে এর উত্তর পেতে গেলে অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য। অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু সময়ের জন্য। এই বিষয় নিয়ে আপনার কী মতামত?

Leave a Comment