ধর্মীয় অবমাননা নাকি শত্রুতা! কেন দীপু দাসকে বলি হতে হল? মুখ খুলল বাংলাদেশ পুলিশ

Dipu Chandra Das

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসের (Dipu Chandra Das) সঙ্গে সেদিন ঠিক কী হয়েছিল, যার জন্য ময়মনসিংহে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে দেহে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হল? সম্প্রতি এই ঘটনার তদন্তে নেমে বিস্ফোরক রিপোর্ট সামনে এসেছে, আর ইতিমধ্যেই ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দীপু দাস কি আসলেই ধর্মীয় অবমাননা করেছিল বা ধর্ম সম্পর্কে কিছু কটুক্তি করেছিল? নাকি অন্য কোনও দ্বন্দ্ব থেকে তাঁর এহেন পরিণতি?

আসল ঘটনা কী?

প্রসঙ্গত, ওপার বাংলার ময়মনসিংহের ভালুকায় পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় পোশাক কারখানায় কাজ করা শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে। জানা গিয়েছে, চাকরি ছাড়তে বাধ্য করার পর বিক্ষুব্ধ জনতার হাতেই ওই কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ তাঁকে তুলে দেন। কিন্তু পরে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে তাঁকে পিটিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ময়মনসিংহের সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্যই জানানো হয়েছে। এমনকি একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ভিডিও দেখে ১০ জনের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর।

হ্যাঁ, শনিবার রাতে বিবৃতি দিয়ে এ কথাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ইতিমধ্যেই ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব এবং ৩ জনকে পুলিশ। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার দফতর তাদের নামও প্রকাশ করেছে। ধৃতেরা হলেন মহম্মদ লিমন সরকার, নিজুম উদ্দীন, মহম্মদ মানিক মিয়া, মহম্মদ তারেক হোসেন, এরশাদ আলি, আলমগির হোসেন এবং মহম্মদ মিরাজ হোসেন। আজ তাদের ভালুকা থানায় পাঠানো হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

দীপু চন্দ্র দাসের তাহলে অপরাধ কী?

যুগান্তরের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি এক কর্মকর্তা বলেছেন, নিহত ব্যক্তি ফেসবুকে কিছু লিখেছেন এরকম কোনও তথ্য মেলেনি। উনি বাটন মোবাইল ব্যবহার করতেন। স্থানীয় লোকজন বা শ্রমিকদের সঙ্গেও সেরকম কোনও কথা বলেনি। দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাকের কারখানায় কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার রাতে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে গেলে তাঁকে নিরাপত্তার স্বার্থেই বাইরে বের করে দেওয়া হয়। আর মুহূর্তের মধ্যেই উন্মত্ত জনতা তাঁকে ঘিরে ফেলে এবং বেধড়ক মারধর করা হয়। তাতেই ওঁর মৃত্যু হয়। তারপর ওঁর দেহ গাছে বেঁধে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেই ভিডিও দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল হয়ে পড়ে। তারপর যুবকের দেহের অবশিষ্টাংশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: মরুভূমি হতে পারে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা! ধ্বংস হবে আরাবল্লী পর্বত? বড় রায় সুপ্রিম কোর্টের

এদিকে এ বিষয়ে র‍্যাব ময়মনসিংহের অধিনায়ক নয়মুল হাসান বলেছেন, ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে। কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ তাঁকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে উন্মত্ত জনতার কাছে তুলে দেয়। পুলিশের কাছে কেন হস্তান্তর করেনি সে বিষয়ে এখনও কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কারখানা দুই কর্মীকে আমরা গ্রেফতার করেছি। ধর্ম অবমাননার বিষয়ে কোনওরকম তথ্য পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি কারও সঙ্গে আগে শত্রুতা ছিল কিনা সে বিষয়ে আমার তদন্ত করে দেখব। কিন্তু ঘটনার সূত্রপাত কার সঙ্গে হয়েছে সেই সংক্রান্ত তথ্য এখনও পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। তবে আমরা জানতে পেরেছি, কাজ করার সময় কারখানার ভিতরে তাঁর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। আসল কারণ আমরা উদঘাটনের চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, র‍্যাব হেফাজতে থাকা কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ আলমগীর হোসেন বলেছেন, কোম্পানির বাইরে কোনও এক চায়ের দোকানে দীপু চন্দ্র দাস হজরত মুহাম্মদকে নিয়ে কটুক্তি করেছিলেন। এমন খবরে কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সূত্রে শ্রমিকরা দাবি তোলে, কারখানা থেকে তাঁকে যে করে হোক বরখাস্ত করতে হবে। উত্তেজনার বশেই কারখানার সামনে প্রচুর লোকজন জড়ো হয় এবং ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে তাঁর উপর চড়াও হয় আমজনতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আমরা তাঁকে উত্তপ্ত জনতার হাতে তুলে দিই। তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও কারখানার ভিতরে আর বাইরের পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।

Leave a Comment