প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সামনেই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন, আর সেই নির্বাচনকে সামনে রেখেই বছর শেষে বঙ্গের রাজনৈতিক আঙিনায় একের পর এক চমক উঠে আসছে। কিছুদিন আগেই বাবরি মসজিদ নির্মাণের ভীত স্থাপনের মধ্য দিয়ে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া হুমায়ুন কবীরের নাম। আর সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নতুন দল গঠন করলেন হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir)। আজ ধারাবাহিকতাতেই আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করলেন তাঁর নতুন রাজনৈতিক দল জনতা উন্নয়ন পার্টি। দলের পতাকায় তুলে ধরলেন হলুদ, সবুজ এবং সাদা এই তিনটি রং।
নতুন দলের নাম প্রকাশ্যে আনলেন হুমায়ুন
তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার ঠিক ১৮ দিনের মাথায় নিজের দেওয়া কথা রাখলেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। রিপোর্ট মোতাবেক আজ অর্থাৎ সোমবার দুপুর ১টায় মুর্শিদাবাদের মির্জাপুর মোড়ের জনসভায় হাজার হাজার সমর্থকের উপস্থিতিতে তিনি জনতা উন্নয়ন পার্টির নাম ঘোষণা করলেন। শুধু তাই নয় ভরা মঞ্চে দলের পতাকা ও প্রাথমিক কর্মসূচিও প্রকাশ করলেন। হুমায়ুন কবীর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দল তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী যে কোনও শক্তির জন্য উন্মুক্ত। এবং তাঁর নির্মিত এই দলের মূল লক্ষ্য হবে প্রান্তিক মানুষের উন্নয়ন এবং বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটানো।
৯০টি আসনে জেতার টার্গেট হুমায়ুনের
তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার পরেই হুমায়ুন কবীর আগেই জানিয়েছিলেন যে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত ৯০টি আসনে জয়ী হওয়াই তাঁর লক্ষ্য। কারণ, তৃণমূল বা বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে, তারা কেউই হুমায়ুনকে বাবরি মসজিদ গড়তে দেবে না। তাই সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে অন্তত ৯০টি আসনে জেতাতে হবে তাঁর নতুন দলকে। আর সেই কথা মাথায় রেখে এবার প্রতি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেন হুমায়ুন। জানা গিয়েছে, ভরতপুর এবং রেজিনগর থেকে লড়বেন হুমায়ুন কবীর, খড়্গপুর গ্রামীণ থেকে লড়বেন ইব্রা হাজি, মালদহের বৈষ্ণবনগর থেকে মুস্তারা বিবি, মুর্শিদাবাদ থেকে লড়বেন মনীষা পাণ্ডে, ভগবানগোলা থেকে লড়বেন ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর।
কোন প্রার্থী কোন কেন্দ্রে দাঁড়াচ্ছে?
এছাড়াও জনতা উন্নয়ন পার্টির তরফে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রানিনগর থেকে করতে চলেছেন পেশায় ডাক্তার আরেক হুমায়ুন কবীর। ২০১৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই চিকিৎসককে তৃণমূলের প্রার্থী করেছিলেন। যদিও তিনি হেরে যান। এরপর দক্ষিণ দিনাজপুরের ধনিরাম থেকে লড়বেন ডঃ ওয়েদুল রহমান, বালিগঞ্জ থেকে লড়বেন নিশা চট্টোপাধ্যায়। যেখানে উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। পাশাপাশি ইছাপুর থেকে জনতা উন্নয়ন পার্টির হয়ে করতে চলেছেন আরও এক সদস্য সিরাজুল মন্ডল। এবার দেখার পালা ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের মুখে হুমায়ুনের এই নবগঠিত দল কতটা প্রভাব ফেলে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে।
আরও পড়ুন: বাংলায় থাকতে চাইলে বিহার থেকে নাম কাটুন! বার্তা মমতার
প্রসঙ্গত, হুমায়ুন কবীরের এই নতুন দলকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছে না তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, বঙ্গে নতুন দল গঠন এই প্রথম নয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষ শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। তাই শাসকদলের একাংশের দাবি, হুমায়ুন কবীর রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা ভোটের বাক্সে বড় কোনও প্রভাব ফেলবে না। তবে হুমায়ুনের এই নয়া দল গঠন নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি বিজেপি।