লেকটাউনে মেসি মূর্তি নিয়ে বিতর্ক! “কার জমিতে মূর্তি?” প্রশ্ন তুলল হাইকোর্ট

Calcutta High Court

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে লিওনেল মেসির ইভেন্টে ভাঙচুর কাণ্ডের ১ সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। বিভীষিকার মত কেটেছিল গোটা দিন। ভাঙা হয় চেয়ার, সেই চেয়ার, জলের বোতল মাঠে ছোড়াও হয়। যুবভারতী কাণ্ডে অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই নিয়ে হাইকোর্টে (Calcutta High Court) মামলাও চলছে। এবার এই মামলায় মেসি মূর্তি নিয়ে উঠে এল এক গুরুতর অভিযোগ।

মেসির মূর্তির জমি নিয়ে তরজা

শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের সামনে মেসির ৭০ ফুটের মূর্তি উন্মোচন নিয়ে খবরের শিরোনামে একাধিক তথ্য উঠে এসেছিল। তর্ক বিতর্ক কম হয়নি এই নিয়ে। আসলে, আন্তর্জাতিক ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির এই সফরকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই মূর্তিটি তৈরি করানো হয়েছিল। যদিও মূর্তি উন্মোচনের পর আর্জেন্টিনীয় ফুটবলতারকার ওই মূর্তির মুখের গড়ন ঘিরে নেটমাধ্যমে সমালোচনা হয় বিস্তর। এবার এই তর্ক বিতর্কের মাঝেই জমি নিয়ে উঠল তরজা। লেকটাউনে মেসির মূর্তির জমি নিয়েও প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট।

কী বলছেন সুজিত বসু?

মেসি মূর্তি নিয়ে যখন বিতর্ক বড় আকার নিয়েছে, সেই আবহে গত রবিবার দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু এই নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘স্ট্যাচুটা মেসির ভাল লেগেছে, পছন্দ হয়েছে। প্রশ্ন কেউ করেনি। দু’-একজন নিন্দুক সবসময়ই এসব করে। মেসি নিজে প্রশংসা করে মূর্তির ছবি এক-দু’নম্বরে রেখেছেন।’ এবার এই মূর্তির জায়গা নিয়ে হাইকোর্টে উঠল প্রশ্ন। রিপোর্ট মোতাবেক, যুবভারতী স্টেডিয়াম ভাঙচুর কাণ্ড নিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে ইতিমধ্যে। আর সেই নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও চলছে। আর সেই মামলায় উঠে এল মেসির মূর্তি প্রসঙ্গ।

৬৫ কোটি টাকা খরচ মূর্তি নির্মাণে!

জানা গিয়েছে, গতকাল অর্থাৎ সোমবার, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পার্থ সারথী সেন প্রশ্ন করেছিলেন যে, “সুজিত বসু যে মূর্তি তৈরি করেছেন, সেটা কি সরকারি জমিতে? না ব্যক্তিগত জমিতে বসানো হয়েছে? সরকারি জমিতে এভাবে ব্যক্তিগতভাবে কিছু বসানো যায়?” প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেছিলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে মেসির মূর্তি সুজিত বসু বসিয়েছেন। স্বাধীন কমিশন গঠিত হয়েছে।” কিন্তু জমি প্রসঙ্গে কোনও সদুত্তর সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। এরপরই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য আদালতে জানান, “৬৫ কোটি টাকা আগেই দেওয়া হয়েছিল। এত টাকা কীভাবে দেওয়া হয়? কারা আগের ডিরেক্টর ছিলেন? টেন্ডার কি দেওয়া হয়েছিল?” তখনই উঠে আসে মানি ট্রেলের প্রসঙ্গ। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর কমিটি গঠন নিয়েও ওঠে প্রশ্ন।

উঠল টিকিট বিক্রির প্রসঙ্গ

শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য আদালতে মেসি কাণ্ডে নাম না করে ডায়মন্ড হারবার এবং সেই ক্লাবের কর্তাদের মাঠে উপস্থিতি এবং তাঁদের সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের প্রত্যক্ষ যোগ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এদিকে মেসি-কাণ্ডে তিনটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর মধ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি দুই আইনজীবীও মামলা করেন। তাঁরাও এই মামলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মামলাকারীর আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেটিভ অফিস দিয়ে গোটা ঘটনার তদন্ত করানোর। এদিকে এই মামলায় টিকিট বিক্রির প্রসঙ্গ উঠতেই শতদ্রু দত্তের আইনজীবী ইন্দ্রনীল রায় বলেন, “যদি ৪০০ জনের বেশি কেউ মাঠে আসে তাহলে সেটা উদ্যোক্তাদের দোষ হতে পারে না। এটা একমাত্র পুলিশের দোষ।”

আরও পড়ুন: জানুয়ারির প্রথমেই মহার্ঘ ভাতার রায়? ‘মমতার না হলেও এদের জেল হবে!’ বিস্ফোরক কর্মীদের নেতা

রাজ্যের তরফে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা আমরা জানি না। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ক্ষমা চেয়েছেন। রাজ্য আর কি করতে পারে? মেসির সঙ্গে ছবি তুলতে ১০ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে। রাজ্যের উচিৎ এই সব মামলাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।” এছাড়াও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “২১ কোটি টাকা পাঁচটি অ্যাকাউন্টে রয়েছে। সব বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।” সব মিলিয়ে গোটা ঘটনায় একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসায় বেশ গরমিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

Leave a Comment