সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: যেখানে দেশ এখন ডিজিটাল দুনিয়ার পথে এগোচ্ছে, সেখানে রাজস্থানের এক গ্রাম পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হল তীব্র বিতর্ক। হ্যাঁ, রাজ্যের জালোর জেলার গাজিপুর গ্রামের এক সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ২৬ জানুয়ারির পর ওই গ্রাম এবং তৎসংলগ্ন ১৫টি গ্রামের পুত্রবধূ ও যুবতী মহিলারা ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না (Mobile Ban For Woman)। অর্থাৎ, মহিলাদের হাতে থাকবে শুধুমাত্র সাধারণ কিপ্যাড ফোন, তাও ফোন করার জন্য। ক্যামেরা বা ইন্টারনেটের সুবিধা তারা ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু কেন এমন নিয়ম চালু করা হল?
আসলে রবিবার গাজিপুর গ্রামে চৌধুরী সম্প্রদায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে। আর ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ১৪ পট্টির সভাপতি সুজনরাম চৌধুরী। তবে পঞ্চায়েত সদস্য পঞ্চ হিম্মতরাম বৈঠক শেষে মহিলাদের মোবাইল ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছেন বলেই খবর। পঞ্চায়েতের নির্দেশ অনুযায়ী, পুত্রবধূ বা যুবতী মহিলারা বিয়ে বাড়ি বলুন সামাজিক অনুষ্ঠান বা উৎসব, এমনকি প্রতিবেশী বাড়িতে কোনও অবস্থাতে মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে পারবে না।
পড়ুয়া মেয়েদের ক্ষেত্রে রয়েছে ছাড়
এদিকে এই কঠোর সিদ্ধান্তের মধ্যে পড়ুয়া মেয়েদের জন্য রাখা হয়েছে ছাড়। পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পড়াশোনার প্রয়োজনে বাড়ির মধ্যে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু সেই মোবাইল বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। আর এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সওয়াল করে সুজনরাম চৌধুরী যুক্তি দিয়েছেন, অনেক সময় মহিলাদের মোবাইল শিশুরা ব্যবহার করে। এতে শিশুদের চোখের ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকার সময় শিশুদের হাতে মোবাইল তুলে দেওয়াটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনলে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং শিশুদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তিনি দাবি করছেন, সম্প্রদায়ের প্রবীণ এবং পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারত সফর করে দেশেও ফিরেও হল না শান্তি, মেসির পরিবারে বিরাট বিপদ
যদিও এই সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কারণ, বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এটি নারীর স্বাধীনতা আর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা নিয়েও উঠছে নানারকম প্রশ্ন। কারণ, প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা আদৌ পঞ্চায়েতের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কিনা তা নিয়ে ঘনাচ্ছে সংশয়। যদিও এই ঘটনা নতুন কিছু নয়। কারণ, ২০১৯ সালে গুজরাটের এক গ্রামে ঠাকর সম্প্রদায় একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- অন্য সম্প্রদায়ে বিয়ে করলে মেয়ের পরিবারকে ১.৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এমনকি অবিবাহিত ও কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের মোবাইল নম্বরের উপরও সেখানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এখন দেখার, রাজস্থানের এই গ্রামে এই নিয়ম সত্যিই কার্যকর হয় কিনা।