সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: মোবাইল ফোনকে এখন শুধুমাত্র কথা বলার মাধ্যম বলা যায় না, বরং এটি ধীরে ধীরে সাইবার অপরাধীদের বড় অস্ত্রতেও পরিণত হচ্ছে। সম্প্রতি মানুষ এমন ফোন কল পাচ্ছে, যেখানে কল ধরার পর কোনও শব্দ শোনা যায় না। অনেকে হয়তো এটিকে নেটওয়ার্কের সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যাচ্ছে। তবে এই সাইলেন্ট কলই হতে পারে বড়সড় ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ধাপ। এই বিষয়ে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা জারি করেছে ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশন (DoT on Silent Call)। তাদের মতে, এই নতুন সাইলেন্ট কল বর্তমানে সাইবার প্রতারকদের নতুন কৌশল।
কী এই সাইলেন্ট কল?
আসলে সাইলেন্ট কলে হঠাৎ করে ফোন বেজে ওঠে, কিন্তু রিসিভ করার পর অপর প্রান্ত থেকে কোনও রকম আওয়াজ আসে না। ডট বলেছে, এটা কোনও নেটওয়ার্কের সমস্যা নয়, বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ধরনের কল করা হয় একটি নম্বর সক্রিয় আছে কিনা তা যাচাই করতে। আর আপনি যদি এই কলটি ধরেন, তাহলে স্ক্যামারদের তালিকায় আপনার নম্বরটিকে ‘অ্যাক্টিভ ইউজার’ হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়।
তবে জানলে অবাক হবেন, সাইলেন্ট কলের মাধ্যমে স্ক্যামাররা নীরবেই আপনার সব তথ্য সংগ্রহ করে। যেমন আপনি কত দ্রুত কল রিসিভ করলেন, কতক্ষণ পর ফোনটা কেটে দিলেন, আশেপাশে কী ধরনের শব্দ ছিল। সেই সমস্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করেই তারা বোঝার চেষ্টা করে যে আপনি কতটা সতর্ক আর কতটা সহজে বিভ্রান্ত হতে পারবেন। এরপর থেকে কখনও ব্যাঙ্ক অফিসার, কখনও সরকারি কর্মচারী, কখনও কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভের পরিচয় আপনাকে ফোন বা মেসেজ করা হবে। এমনকি আপনার কেওয়াইসি আপডেট হয়নি, সিম বন্ধ হয়ে যাবে, অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যাবে, এই সমস্ত বলা হবে। আর আতঙ্কে বা তাড়াহুড়োর মাধ্যমে আপনি অনেক সময় ওটিপি, পিন বা ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করে ফেলবেন। ফলে চোখের সামনেই আপনার অ্যাকাউন্ট খালি হবে।
আরও পড়ুন: নবান্নের চেষ্টার পরেও আটকে পেনশন! রাজ্য সরকারের পুরনো নিয়মই হল কাল
কীভাবে মুক্তি পাবেন এই সাইলেন্ট কল থেকে?
ডট সম্প্রতি গ্রাহকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা দিয়েছে। প্রথমত, সাইলেন্ট কলে কখনও কল ব্যাক করবেন না। দ্বিতীয়ত, অজানা নম্বর থেকে আসা কল হলে অবশ্যই সতর্ক থাকুন। আর ব্যাঙ্ক বা সরকারি পরিচয় দিলেও ফোনে ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না। সবথেকে বড় ব্যাপার, ওটিপি, পিন বা অ্যাকাউন্ট নম্বর কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। এমনকি সন্দেহজনক কোনও নম্বর পেলে সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চার সাথী অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে গিয়ে রিপোর্ট করুন। কারণ, সামান্য একটু অসতর্ক হলেই নিমেষের মধ্যে ফাঁকা হয়ে যেতে পারে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।