সহেলি মিত্র, কলকাতা: আপনিও কি মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা কিংবা আগামী দিনে সেখানে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছেন? তাহলে আজকের এই খবরটি রইল শুধুমাত্র আপনার জন্য। মুর্শিদাবাদের রাস্তায় এবার গোটা প্লাস্টিকে (Murshidabad Plastic Road) ঢেকে যেতে চলেছে। শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদেই নয়, বাংলার কয়েক হাজার কিলোমিটার রাস্তা প্লাস্টিকের ঢেকে যেতে চলেছে বলে খবর। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই দিনের আলোর মতো সত্যি। আরো বিশদে জানতে চোখ রাখুন আজকের এই আর্টিকেলটির ওপর।
প্লাস্টিকে মুড়তে চলেছে বাংলার রাস্তা
আসলে চলতি বছর পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের অধীনে, পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন (P&RD) বিভাগ পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে ১,৭৫৯.৬১৯ কিলোমিটার বিটুমিনাস রাস্তা নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা সবচেয়ে বেশি রাস্তা তৈরি করবে, যেখানে ২০৪.৫৬ কিলোমিটার রাস্তা প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে তৈরি করা হবে। এরপর রয়েছে নদীয়া, ১৭২.৪৬ কিলোমিটার রাস্তা, এবং উত্তর দিনাজপুর, ১৬৭.৪৯ কিলোমিটার রাস্তা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এরপর অন্যান্য রয়েছে জেলা যেখানে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি প্লাস্টিক-বর্জ্য রাস্তা তৈরি করা হবে। তার মধ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদ (১৫৮.৩৪ কিমি), দার্জিলিং (১১৯.৯৩ কিমি), জলপাইগুড়ি (১১৬.৫৯ কিমি) এবং পূর্ব বর্ধমান (১১০.৪৮ কিমি)।
বিশেষ করে এখন নজরে রয়েছে মুর্শিদাবাদের কান্দি শহর। এখানে প্লাস্টিকের রাস্তা তৈরী করার বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে প্রশাসন। মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে প্রথম কান্দি শহরে কান্দি পৌরসভার উদ্যোগে প্রায় দু’কিলোমিটার জুড়ে প্লাস্টিক রাস্তা তৈরি করা হল। কর্মকর্তাদের মতে, অন্যান্য রাস্তার থেকে এই রাস্তা টিকবে ৮ থেকে ১০ বছর। পিচের রাস্তা টেকসই করে ৪ থেকে ৫ বছর। কিন্তু এই রাস্তা আরও বেশি টেকসই করবে।
কীভাবে তৈরী হবে এই বিশেষ রাস্তা?
এখন আপনার মনেও নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে যে এরকম রাস্তা কীভাবে তৈরী হবে? সূত্রের খবর, পাকা রাস্তার উপরের স্তরে পিচের সঙ্গে নীল প্লাস্টিক টুকরো মিশিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। এরকম রাস্তা প্রথমবারের মতো পাবে মুর্শিদাবাদ বলে খবর। জানলে অবাক হবেন, প্রায় দু’লক্ষ প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার, ১৬ হাজার প্লাস্টিক বোতল ও ৩৫০ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করেই নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। যা পিচের থেকেও বেশি মজবুত। বিটুমিনের সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই সড়ক। এছাড়াও প্লাস্টিক রং ব্যবহার করা হয়েছে রাস্তায়।
আরও পড়ুনঃ ৩০ বছরে শীতলতম বড়দিনের সাক্ষী কলকাতা, দক্ষিণবঙ্গে আরও জাঁকিয়ে শীত, কতটা নামবে পারদ?
এই বিশেষ উদ্যোগ প্রসঙ্গে কান্দি পৌরসভার চেয়ারম্যান জয়দেব ঘটক জানিয়েছেন, “কান্দি বিধায়ক অপূর্ব সরকার তার নিজস্ব উদ্যোগে এই রাস্তা তৈরির চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ মেনে সমস্ত কান্দি পৌরসভাতে শুরু হয়েছে কঠিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। তারই একটা অংশ হয়ে উঠেছে বর্জ্য প্লাস্টিক ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণ। বর্জ্য প্লাস্টিক ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণ করলে তা অনেক টেকসই হচ্ছে। পিচের প্রধান শত্রু জল। জল পেলে পিচের রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তাতে প্লাস্টিক মেশানো থাকলে তা নষ্ট হয় না।”
আরও পড়ুনঃ ৩১ ডিসেম্বর বন্ধ হবে রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প, মহিলাদের ১০,০০০ টাকা পাওয়ার শেষ সুযোগ
তিনি আরও বলেন, ‘এই প্লাস্টিকের ব্যবহার করেই রাস্তা আরও মজবুত হচ্ছে। দ্রুত রাস্তা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে এই রাস্তা জল জমলেও হবে না ক্ষতি। টিকবে দীর্ঘদিন রাস্তা। আবার পরিবেশের ক্ষতিকারক প্লাস্টিক ব্যবহার করার ফলে তা পরিবেশের ক্ষতিসাধন করতে পারছে না। পিচের সঙ্গে ১০ শতাংশ হারে বর্জ্য প্লাস্টিকের টুকরো ব্যবহার করে রাস্তা গড়া হচ্ছে।’
২৬-এর ভোটের আগে বড় পরিকল্পনা রাজ্যের
কলকাতা পুরসভার আওতাধীন কলকাতা ছাড়া সমস্ত জেলায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে রাস্তা তৈরি করা হবে।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১১ ডিসেম্বর নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর থেকে পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ের সূচনা করেছিলেন। এই পর্যায়ে, রাজ্য জুড়ে গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে ২০,০৩০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পের ফলে ৩৫,০০০ গ্রাম এবং ১২৮টি নগর স্থানীয় সংস্থার বাসিন্দারা উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মোট প্রকল্প ব্যয় ৮,৪৮৭.৮৩ কোটি টাকা, যা রাজ্য সরকার বহন করবে।