শিয়ালদা-হাওড়া লাইনে ৫০০ টাকা দিয়ে আবেদন করে স্টেশনে করুন ব্যবসা, উদ্যোগ পূর্ব রেলের

One Station One Product

সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ আপনিও কি রেলস্টেশনে দোকান খুলতে ইচ্ছুক? তাহলে আপনার জন্য এক দুর্দান্ত অফার এনেছে পূর্ব রেল। এবার মাত্র আপনি ৫০০ টাকা দিয়ে আবেদন করে বাংলার যে কোনও স্টেশনে দোকান খুলতে সক্ষম হবেন। হ্যাঁ একদম ঠিক শুনেছেন। স্থানীয় কারিগর এবং উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য, পূর্ব রেল হাওড়া এবং শিয়ালদহ বিভাগের প্রধান স্টেশনগুলিতে ‘ওয়ান স্টেশন ওয়ান প্রোডাক্ট (One Station One Product) স্টল চালু করেছে। এই স্টলগুলি কারিগরদের তাদের হস্তনির্মিত পণ্যগুলি সরাসরি গ্রাহকদের কাছে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করার সুযোগ দেয়। যাইহোক এখন হাওড়া ডিভিশনের ১০৫টি স্টেশনে ১১৩টি স্টলের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করল রেল।

মাত্র ৫০০ টাকার আবেদন করে স্টেশনে খুলুন দোকান

জানা গিয়েছে, দেশজ পণ্য নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, সমাজের প্রান্তিক অথবা দুর্বল শ্রেণির মানুষেরা এই স্টলের জন্য আবেদন করতে পারেন। হাওড়া, শিয়ালদহ, মালদা, আসানসোল, আদিসপ্তগ্রাম, অম্বিকা কালনা, আরামবাগ, আজিমগঞ্জ জংশন, দত্তপুকুর, পিয়ালী, লালগোলা, ভগবানগোলা, মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর, বনগাঁ, দমদম ক্যান্টনমেন্ট সহ বিভিন্ন স্টেশনে ওএসওপি স্টল স্থাপন করা হয়েছে। এই বিষয়ে রেলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘ওয়ান স্টেশন ওয়ান প্রোডাক্ট স্টলের মাধ্যমে, পূর্ব রেলওয়ে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ এবং ‘লোকাল টু গ্লোবাল’-এর প্রচার করছে, যা স্থানীয় শিল্পকে বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করছে।”

আরও পড়ুনঃ নতুন বছরে ২২০ কিমি গতিতে ছুটবে ট্রেন, তৈরি হচ্ছে ভারতের প্রথম হাইস্পিড রেল ট্র্যাক

রেল কর্মকর্তাদের মতে, এই উদ্যোগটি পশ্চিমবঙ্গের কারিগরদের জন্য খুবই উপকারী, যাদের বিপণনের সুযোগ সীমিত ছিল। এখন, তারা সহজেই দেশব্যাপী তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারে, যার ফলে তাদের জীবিকা উন্নত হয়। এক স্টেশন এক পণ্য স্টলগুলির ক্ষেত্রে লিজের সময়কাল থাকে ১৫ দিন থেকে ৯০ দিন।

কোন কোন স্টেশনে এক স্টেশন এক পণ্য-এর স্টল খোলা যাবে?

বোলপুর শান্তিনিকেতন, মেমারি ও বর্ধমান স্টেশনে ৩ টি করে এবাং রামপুরহাট ও জৌগ্রাম স্টেশনে ২টি করে এক স্টেশন এক পণ্য-এর স্টল লিজ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও, হাওড়া ডিভিশনের বাকি ১০০টি স্টেশন অর্থাৎ আদিসপ্তগ্রাম, অগ্রদ্বীপ, আহমদপুর, অম্বিকা কালনা, আরামবাগ, আজিমগঞ্জ জংশন, আজিমগঞ্জ সিটি, বাঘনাপাড়া, বাহিরখণ্ড, বৈদ্যবাটি, বৈঁচি, বৈঁচিগ্রাম, বলাগড়, বলরামবাটী, বলগোনা, বালি, ব্যান্ডেল, বাঁশবেড়িয়া, বারুইপাড়া, বাজারসৌ, বেগমপুর, বেহুলা, বেলানগর, বেলেরহাট, বেলমুড়ি, বেলুড়, ভদ্রেশ্বর, ভাণ্ডারটিকুরি, ভেদিয়া, বিষ্ণুপ্রিয়া, চন্দননগর, চন্দনপুর, চুঁচুড়া, দাঁইহাট, ডানকুনি, দেবীপুর, দিয়াড়া, গঙ্গাটিকুরী, গরিফা, গোবরা, গুপ্তিপাড়া, গুড়াপ, গুসকরা, হরিপাল, হাজিগড়, হিন্দমোটর, হুগলী, হুগলী ঘাট, জনাই রোড, জিরাট, কৈকালা, কামারকুণ্ডু, কাটোয়া, খাগড়াঘাট রোড, খামারগাছী, খানা, খন্যান, কোন্নগর, কুস্তিঘাট, লক্ষ্মীপুর, লিলুয়া, লোকনাথ, মধুসূদনপুর, মল্লারপুর, মানকুণ্ডু, মসাগ্রাম, মায়াপুর, মির্জাপুর বাঁকিপুর, মগরা, নবদ্বীপ ধাম, নবগ্রাম, নলহাটি, নালিকুল, নসিবপুর, পাকুড়, পাল্লারোড, পালসিট, পান্ডুয়া, পাটুলি, পোড়াবাজার, প্রান্তিক, পূর্বস্থলী, রাজগ্রাম, রসুলপুর, রিয়ড়া, সাঁইথিয়া, শক্তিগড়, সালার, সমুদ্রগড়, শেওড়াফুলি জংশন, শিবাইচণ্ডী, সিমলাগড়, সিঙ্গুর, সোমড়া বাজার, শ্রীরামপুর, তালাড্ডু, তালিত, তারকেশ্বর, ত্রিবেণী ও উত্তরপাড়া স্টেশনে একটি করে দোকান স্টল খোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ এই ভিসায় অল্প পয়সায় বিদেশ ভ্রমণের পাশাপাশি হবে আয়ও!

রেজিস্ট্রেশন ফি কত?

এবার আসা যাক রেজিস্ট্রেশন ফি সম্পর্কে। জানা গিয়েছে, গুসকরা, আহমেদপুর, ভেদিয়া, খানা, তালিত, প্রান্তিক, পাকুড়, মল্লারপুর, নলহাটি, রাজগ্রাম, সাঁইথিয়া, আজিমগঞ্জ সিটি, আজিমগঞ্জ জংশন, বাজারসৌ, গঙ্গাটিকুরী, খাগড়াঘাট রোড এবং সালার স্টেশনে স্টলের ক্ষেত্রে ১৫ দিনের জন্য লিজ নেওয়া হলে চার্জ দিতে হবে জিএসটি সহ ৫০০ টাকা। এছাড়া বাকি স্টেশনগুলির ক্ষেত্রে ১৫ দিনের জন্য লিজ নেওয়া হলে জিএসটি সহ ১০০০ টাকা দিতে হবে।

কীভাবে আবেদন করবেন?

এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন কীভাবে আবেদন জানাবেন? এই বিষয়ে পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, সংস্থার লেটারহেড-এ অথবা সাদা কাগজে লেখা আবেদন প্রয়োজনীয় নথি মুখবন্ধ খামে ভরে আবেদনকারীকে পূর্ব রেলওয়ে, হাওড়া, নিউ ডিভিসনাল রেলওয়ে ম্যানেজারকে উল্লেখ করে আবেদনপত্র লিখতে হবে। এই মুখবন্ধ খাম স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার-এর অফিসের বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করতে হবে।

কারা কারা আবেদন করতে পারবে?

(১) ডেভেলপমেন্ট কমিশনার হ্যান্ডিক্র্যাফ্টস, ডেভেলপমেন্ট কমিশনার- হ্যান্ডলুম অথবা রাজ্য/কেন্দ্রীয় সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া কারিগর/তাঁতির পরিচয়পত্র।
(২) ট্রাইব্যাল কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ডেভেলপমেন্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (ট্রাইফেড)/ ন্যাশনাল হ্যান্ডলুম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এনএইচডিসি)/ খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশন (কেভিআইসি) ইত্যাদিতে তালিকাভুক্ত/রেজিস্ট্রেশন করা ব্যক্তি কারিগর/তাঁতি/কারুশিল্পী।
(৩) পিএমইজিপি (প্রাইম মিনিস্টার’স এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম)-এ নথিভুক্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীসমূহ।
(৪) সমাজের প্রান্তিক অথবা দুর্বলতর শ্রেণি।
(৫) NGO এবং MSME মন্ত্রকের উদ্যম পোর্টালে রেজিস্টার থাকা অতিক্ষুদ্র সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি কারিগর/তাঁতি/হস্তশিল্পী।
(৬) সমাজসেবামূলক সংস্থা, রাজ্য সরকারের সংস্থা ইত্যাদিতে যুক্ত ব্যক্তি/কারিগরি/ তাঁতি।

Leave a Comment