সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: একদিকে যখন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ওয়াশিংটন (India US Trade), ঠিক তখনই বিরাট সতর্কবার্তা বেজিং-এর! ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য চুক্তির প্রসঙ্গ সামনে আসতেই রীতিমতো কড়া হুঁশিয়ারি দিল চিন! আমাদের স্বার্থে ধাক্কা লাগলে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না!—এরকমই সাফ বার্তা চিনা বাণিজ্য মন্ত্রকের। আর এর নিশানা যে নয়া দিল্লিকে করা হয়েছে, তা বুঝতে বাকি রাখছে না বিশেষজ্ঞরা।
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে গতি বাড়াচ্ছে ভারত ও আমেরিকা
বলে রাখি, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে ট্রেড এগ্রিমেন্ট নিয়ে আলোচনা চলছে। ওয়াশিংটন চাইছে, গাড়ির যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে কৃষিজ পণ্য, একাধিক ক্ষেত্রে ভারত আমদানি শুল্ক ছাড় দিক। কিন্তু ভারত চাইছে, মেডিকেল সরঞ্জাম, গয়না বা কার্পেটের মতো পণ্যগুলোতে রপ্তানি সুবিধা পাক ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
এদিকে এই আবহে মুখের কুলুপ খুললো চিন! চিনের বাণিজ্যমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, আমরা কোনও দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য সমঝোতার বিরোধিতা করবো না। তবে সেই চুক্তি যদি আমাদের অর্থনৈতিক স্বার্থে ঘা দেয়, তাহলে আমরা ছেড়ে কথা বলব না। একইসঙ্গে তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি মেনে চলার উপরও জোর দিয়েছে। চিন চাইছে, আমেরিকার সঙ্গে যেন অন্য দেশের কোনও চুক্তি WTO-র ন্যায্য বাণিজ্য নীতির সীমার বাইরে না যায়।
আসলে বেশ কিছু বিশ্লেষক মনে করছে, চিন এই মুহূর্তে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার সঙ্গে চলা শুল্ক যুদ্ধে সাময়িকভাবে কিছু মুক্তি পেলেও উপমহাদেশে ভারতের প্রভাব চিনকে দিনের পর দিন অস্বস্তিতে ফেলছে। আর ভারত-আমেরিকার বাণিজ্য স্বাক্ষরিত হলে চিন বিকল্প রাস্তা খোঁজার উপর জোর দেবে।
9 জুলাইয়ের আগেই চুক্তি চায় আমেরিকা
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছিল যে, তাদের নতুন শুল্ক নীতি 90 দিনের জন্য স্থগিত থাকছে। আর এই সময় সীমা আগামী 9 জুলাই শেষ হচ্ছে। তার আগেই একাধিক দেশ মার্কিন বাজারে নিজেদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে চাইছে।
আরও পড়ুনঃ আর সহ্য করবে না ভারত! এবার চিনের টুঁটি চেপে ধরল দিল্লি
বেশ কয়েকটি সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যে একটি ভারতীয় বাণিজ্য প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে যেতে পারে। তবে ভারত সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে যে, তারা আলোচনায় আগ্রহী। তাড়াহুড়ো করে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না। বলে রাখি, ভারতের মোট রপ্তানির প্রায় 18% আমেরিকায় যায়। আর আমদানির ক্ষেত্রেও প্রায় 6.22% মার্কিন পণ্য ভারতে আসে। আর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় 10.73%।
তবে যদি এই চুক্তি স্বাক্ষরিত না হয়, তাহলে সবথেকে ক্ষতির মুখোমুখি হবে সোনার গয়না, চিংড়ি, মেডিকেল যন্ত্র ও কার্পেট রপ্তানিকারকরা। তবে কিছু ছাড়পত্রের বদলে মোটর গাড়ি বা সয়াবিন ও ভুট্টার মতো পণ্য আমদানি সহজ হলে আমেরিকা লাভের গুড় খেতে পারে। এখন দেখার চিন চুপচাপ থাকে কিনা…