সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ সাধারণ রেল যাত্রীদের জন্য রইল দারুণ সুখবর। বিশেষ করে টাটানগর এবং হাওড়ার মধ্যে ট্রেনে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রী উল্লেখযোগ্য স্বস্তি পেতে চলেছেন শীঘ্রই। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে এই ব্যস্ততম রুটের সবচেয়ে পুরনো এবং গুরুত্বপূর্ণ ‘বাধা’ অপসারণের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। নিশ্চয়ই ভাবছেন ঠিক কী পদক্ষেপ নিয়েছে রেল? তাহলে জানিয়ে রাখি, রূপনারায়ণ নদীর উপর নির্মিত ১২৫ বছরের পুরনো কোলাঘাট রেল সেতুটি (Kolaghat Rail Bridge) সংস্কার করে একটি নতুন, অত্যাধুনিক সেতু স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পে প্রায় ৪৮১ কোটি টাকা ব্যয় হবে, যার ফলে টাটানগর-হাওড়া রেল রুটে ভ্রমণ আগের চেয়ে সহজ এবং দ্রুততর হবে।
১৯০০ সালে চালু হয় ব্রিজটি
হাওড়া-খড়গপুর সেকশনের দেউলটি এবং কোলাঘাট স্টেশনের মধ্যে অবস্থিত ৫৭ নম্বর কোলাঘাট সেতুটি ১৯০০ সালে চালু হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই সেতুটি রেলওয়ের লাইফলাইন হিসেবে কাজ করে আসছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এর কাঠামোর অবনতি ঘটে। এই পুরনো স্টিল গার্ডার সেতুর জরাজীর্ণ অবস্থা রেলওয়েকে বেশ কয়েকটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। যাত্রীদের প্রতিদিন অসুবিধা হতে হচ্ছিল। তবে আর নয়, এবার রেলের সিদ্ধান্তে সকলের কষ্ট লাঘব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বন্ধ ট্রেন চলাচল
সূত্রের খবর, নিরাপত্তার কারণে, রেলওয়ে ডাউন মেইন লাইনে মালবাহী ট্রেন এবং বেশিরভাগ মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে, প্রায় সমস্ত যানবাহন মিডল লাইন দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা এই অংশে একটি উল্লেখযোগ্য বাধা তৈরি করছে। পুরাতন সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারী কয়েকটি যাত্রীবাহী ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছে এবং যাত্রীরা ঘন ঘন দেরি কিংবা ট্রেন বাতিলের মতো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
৪৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আধুনিক সেতু নির্মিত হবে
এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য, দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে ৪৮১.১১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এই নতুন সেতুটি আধুনিক প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি হবে এবং পরবর্তী ১০০ বছরের চাহিদা মেটাতে এটি ডিজাইন করা হয়েছে। সেতু নির্মাণে কম্পোজিট স্ট্রাকচার এবং ওপেন ওয়েব গার্ডারের মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যা এর শক্তি এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
আরও পড়ুনঃ আজ থেকে ভাড়া বাড়ল ট্রেনের, পুরনো টিকিটেও দিতে হবে বেশি টাকা? জানুন
এই মেগা প্রকল্পটি কেবল সেতুই নয়, কোলাঘাট স্টেশনের ব্যাপক উন্নয়নকেও অন্তর্ভুক্ত করবে। উন্নত যাত্রী সুবিধা প্রদানের জন্য একটি ডাইভার্টেড অ্যালাইনমেন্টের উপর উঁচু এবং আধুনিক প্ল্যাটফর্মগুলি তৈরি করা হবে। স্টেশনটির পুনর্নির্মাণ কেবল যাত্রীদের সুবিধা বৃদ্ধি করবে না বরং এলাকায় রেল কার্যক্রমকে সুগম করবে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমানে তিনটি লাইনের যানবাহন দুটি লাইনে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে এই অংশের ধারণক্ষমতা প্রভাবিত হচ্ছে। নতুন সেতুটি সম্পন্ন হলে, তিনটি লাইনেই যানবাহন চলাচল সুষ্ঠুভাবে চলতে সক্ষম হবে। এর ফলে হাওড়া-খড়গপুর অংশের ধারণক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং ট্রেনের বিলম্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
আরও পড়ুনঃ পরশুরাম, পরিণীতার টক্করে জমল TRP-র খেলা, সেরা কে? দেখুন টিআরপি তালিকা
কবে শেষ হবে কাজ?
এখন প্রশ্ন উঠছে, কবে শেষ হবে ব্রিজ তৈরির কাজ? রেলওয়ে এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পটি ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে, টাটানগর এবং হাওড়ার মধ্যে ট্রেনের গড় গতি বৃদ্ধি পাবে, ভ্রমণের সময় কমবে এবং যাত্রীদের নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য যাত্রা প্রদান করবে। এই প্রকল্পটি কেবল যাত্রীদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে না বরং পূর্ব ভারতে রেল নেটওয়ার্ককে নতুন করে উৎসাহিত করবে।