বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: কথায় আছে, অবসর জীবনে ভরসা হয় লাঠি। তবে প্রচলিত প্রবাদে না থাকলেও অবসরকালে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে ভরসার হাত হয়ে ওঠে টাকা। যা থাকলে যে কোনও পরিস্থিতিতে হেসে খেলে কাটিয়ে দিতে পারবেন একজন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা। তবে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা অবসরকালীন জীবনে আর্থিক সংকটে ভোগেন। আসলে, চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেলে বেতন যেমন বন্ধ হয়ে যায় তেমনই অপরদিকে বাড়ে সাংসারিক ব্যয়। তাই অবসরকালে সবদিক থেকে একপ্রকার হিমশিম খেয়ে যান পূর্ণবয়স্ক বা 60 ঊর্ধরা। মূলত তাঁদের জন্যই প্রতিমাসে অর্থ রোজগারের (Monthly Income From House) বড় সুযোগ রেখেছে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক। এক কথায়, নিজস্ব বাড়ি থাকলেই সেটাকে আয়ের উৎস বানিয়ে ফেলতে পারবেন 60 ঊর্ধ যে কেউ। কীভাবে?
নিজের বাড়িকেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন অর্থ রোজগারের হাতিয়ার
দেশের প্রবীণ নাগরিকদের অবসরকালীন অর্থ কষ্টের কথা মাথায় রেখে দেশের একাধিক সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক বিপরীত বন্ধকি বা রিভার্স মর্টগেজ নামক একটি প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের আওতায়, একজন 60 ঊর্ধ্ব ব্যক্তি নিজের বাড়ির বাজার মূল্যের উপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা রোজগার করতে পারেন। এই বিশেষ প্রকল্পের অধীনে ব্যাঙ্ক আপনার বাড়ির বাজার মূল্য যাচাই করে প্রতিমাসে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দেবে। শুধু তাই নয়, বাড়ির মালিকের উত্তরাধিকারী চাইলে পরবর্তীতে ওই বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার অধিকার পাবেন।
কোন কোন ব্যাঙ্কে এই বিশেষ প্রকল্প রয়েছে?
জানিয়ে রাখি, রিভার্স মর্টগেজ প্রকল্পটি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ও HDFC এর মতো সরকারি এবং বেসরকারি উভয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় একজন ব্যক্তি চাইলে নিজের বাড়ি বন্ধক রেখে প্রতিমাসে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, এই প্রকল্পের আওতায় ব্যাঙ্ক আপনার সাথে 20 বছরের জন্য একটি চুক্তি করবে। আর সেই চুক্তির আওতায় নির্দিষ্ট বাড়িটির 40 শতাংশ মালিকানা পাবে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাঙ্কটি।
অবশ্যই পড়ুন: আনোয়ার আলি মামলায় নতুন মোড়, হঠাৎ এ কী পদক্ষেপ নিল ফেডারেশন?
মাসিক পেনশনের পাশাপাশি বাড়ি বিক্রিও করতে পারবেন
সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ব্যাঙ্কেই রিভার্স মর্টগেজ প্রকল্পের একটি বিশেষ সুবিধা হল, একজন ব্যক্তি চাইলে নিজের বাড়ি বন্ধক দেওয়ার পাশাপাশি প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত পেনশনের সাথে সাথে আমৃত্যু ওই বাড়িতে থাকতে পারবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, 60 বছরের ঊর্ধ্বে বয়স এমন একজন ব্যক্তি তাঁর বাড়ি বন্ধক দেওয়ার পাশাপাশি নিজের স্ত্রীকে নিয়ে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই বাড়িতেই থাকতে পারবেন। ভারতীয় নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাঁদের বাড়ি থেকে সরাতে পারবে না।
সবচেয়ে বড় কথা, কোনও ক্রমে বাড়ির মালিক সহ তাঁর স্ত্রীয়ের মৃত্যু হলে পরবর্তীতে ওই বাড়ি উত্তরাধিকার সূত্রের যিনি পাচ্ছেন তিনি চাইলে ব্যাঙ্কের সমস্ত ঋণের অর্থ মিটিয়ে দিয়ে বাড়িটি বিক্রি করে দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাঁধা দিতে পারবে না ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাড়ি বিক্রি করতে না চাইলেও ব্যাঙ্কের অর্থ পরিশোধ করে যোগ্য উত্তরাধিকারী ওই বাড়িতে থাকতেও পারবেন।
অবশ্যই পড়ুন: কালিম্পংকে টেক্কা দক্ষিণবঙ্গর, ৮ জেলায় শৈতপ্রবাহের পূর্বাভাস, আজকের আবহাওয়া
কারা আবেদন করতে পারবেন?
রিভার্স মর্টগেজ প্রকল্পে আবেদন করতে হলে একজন আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই 60 বা তার বেশি হতে হবে। একই সাথে নির্দিষ্ট প্রবীণ নাগরিকের যদি ছেলে মেয়ে কেউ না থাকে সেক্ষেত্রে তিনি তাঁর স্ত্রীয়ের সাথেও যৌথভাবে রিভার্স মর্টগেজ প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বয়সের সীমা ন্যূনতম 58 বছর হতেই হবে। যদিও প্রত্যেক ব্যাঙ্কের নিয়ম কিছুটা আলাদা। হ্যাঁ বলে রাখি, বাড়ি দেখিয়ে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ 2 কোটি টাকা ঋণ বাবদ পেতে পারেন। ভারতীয় আইনে এর বেশি অর্থ ঋণ দিতে পারবে না কোনও ব্যাঙ্ক। বলে রাখি, ঋণ দেওয়ার আগে বাড়ির অবস্থান সহ বাড়িটির মান ও অন্যান্য বিষয়গুলি যাচাই করে তবেই ঋণ মঞ্জুর করবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।