প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সামনেই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন, কিন্তু এখনও পশ্চিমবঙ্গে SIR বিতর্ক কাটেনি। তৃণমূল সরকারের সঙ্গে ক্রমেই নির্বাচন কমিশনের সংঘাত লেগেই চলেছে। আজও দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) সহ তৃণমূলের বিভিন্ন প্রতিনিধিরা। সেখানে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন অভিষেক। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন ইভিএম নয়, আসল ভোটচুরি হচ্ছে ভোটার তালিকায়।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক অভিষেকের
রিপোর্ট মোতাবেক আজ অর্থাৎ বুধবার তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে ১০ জন সাংসদ, রাজ্য সরকারের সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে বৈঠক হয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই এদিন নির্বাচন কমিশনে গিয়েছেন ডেরেক ও ব্রায়েন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, নাদিমুল হক, প্রদীপ মজুমদার, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মানস ভুঁইয়া, মমতা ঠাকুর, সাকেত গোখেল এবং ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেও ফের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন তিনি।
হিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিষেক
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগের বার ২৮ নভেম্বর, আমাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে একটাও জবাবের উত্তর সঠিকভাবে দেওয়া হয়নি। এবারও আমরা ১০-১১ টা পয়েন্ট নিয়ে এসেছিলাম জানতে। কিন্তু ২টো ৩টে প্রশ্নের উত্তর বাদ দিয়ে কোনও বিষয়েই উত্তরে কোনও স্বচ্ছতা ছিল না। আমি ওদের এসআইআর-এর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি তো, ওরা উত্তর দেয় নাগরিকত্ব নিয়ে।” এদিন শুনানিতে বয়স্ক-বিশেষভাবে সক্ষমদের ডাকা নিয়েও অভিযোগ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, “যাঁরা বয়স্ক, যাঁদের সিঁড়িতে উঠতে অসুবিধা হয়। তাঁরাও আড়াই তিন ঘণ্টা শুনানির জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, যদি বয়স্কদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে কেন হিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা করা যাবে না। ওঁরা আমাদের বলেছেন, তাঁরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।”
কমিশনের অফিস থেকেই হচ্ছে ভোট চুরি
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বৈঠকে ভোটার তালিকার চুরির বিষয় নিয়েও অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, “যদি সত্যিই ১ কোটির বেশি ভোটারের নামে ‘লজিক্যাল ডিসক্রিমেন্সি’ বা বাতিলের তালিকা থাকে, তা হলে সেই তালিকা জনসমক্ষে আনতে হবে কমিশন। একই ভাবে, এই তালিকায় ক’জন রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশি রয়েছে, তারও নথি প্রকাশ করতে হবে।” এরপরই কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা শুরু করে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, “EVM-এ নয়, চুরি হচ্ছে ভোটার তালিকায় এবং তা করা হচ্ছে কমিশনের অফিস থেকেই! মহারাষ্ট্রে, হরিয়ানা, বিহারে, দিল্লিতে ভুলগুলি ধরতে পারেনি কংগ্রেস, আরজেডি, আম আদমি পার্টি। সব জায়গায় বিজেপি ৮৮ শতাংশের স্ট্রাইক রেটে জিতেছে, এটা কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটা হয়েছে কারণ ভোটার তালিকায় চুরি হয়েছে এবং তা করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের দ্বারা।”
আরও পড়ুন: ভারতের সবথেকে স্বচ্ছ শহর ইনদওরে পুরসভার জল খেয়ে অসুস্থ শতাধিক, মৃত্যু ৭ জনের
প্রসঙ্গত আজকের বৈঠকে নাকি তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের প্রতি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের আচরণ খুব খারাপ ছিল, আর সেই নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যমে তিনি স্পষ্ট জানান, “ বাকি কমিশনারদের সঙ্গে কথা বলতেই দেননি জ্ঞানেশ কুমার। শুধু তাই নয়, মেজাজ হারিয়ে তাঁর দিকে আঙুল তুলে কথাও বলেন তিনি! আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, তিনি যদি কোনো ভুল হয় তাহলে কমিশন আড়াই ঘণ্টার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করুক।”